পাকিস্তানের সঙ্গে ন্যাটোর সমমর্যাদার চুক্তিতে উচ্ছ্বসিত সৌদি সংবাদমাধ্যম

পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে পাকিস্তান ও সৌদি আরব। আর পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের মিডিয়া। মূলত সৌদি-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত নতুন এই প্রতিরক্ষা চুক্তিকে ‘ন্যাটোর মতো প্রতিরোধমূলক ছাতা’ আখ্যা দিয়েছে সৌদি আরবের গণমাধ্যম।

চুক্তি অনুযায়ী, যেকোনো এক দেশের ওপর আগ্রাসন মানেই সেটি উভয় দেশের বিরুদ্ধে হামলা হিসেবে গণ্য হবে। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সৌদি আরবের গণমাধ্যম রিয়াদ ও ইসলামাবাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিকে “প্রতিরোধমূলক ছাতা” হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা উভয় দেশকে সীমাহীন সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দেবে।

গত বুধবার রিয়াদে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই চুক্তির লক্ষ্য হলো “নিরাপত্তা জোরদার করা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা।”

চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “যে কোনো এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন মানে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন।” একজন জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, “এটি বহু বছরের আলোচনার ফসল। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনার প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘদিনের গভীর সহযোগিতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।” তিনি আরও জানান, “এটি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিরক্ষা চুক্তি, যা সব ধরনের সামরিক সক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত থাকছে।”

সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান (ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের ছোট ভাই) এক্স-এ লিখেছেন, “সৌদি আরব ও পাকিস্তান... যেকোনো আগ্রাসীর বিরুদ্ধে এক ফ্রন্ট... সবসময় এবং চিরকাল।”

‘ইসলামি ফ্রন্টের ঐতিহাসিক শক্তিবৃদ্ধি’

সৌদি দৈনিক ওকাজ লিখেছে, “ক্রাউন প্রিন্স ও পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেন”। দেশটির বিভিন্ন শহরের টাওয়ারগুলোতে সৌদি ও পাকিস্তানি পতাকা আলোকিতও করা হয়। ওই পত্রিকায় একটি কলামে লেখক মুতেব আল আউয়াদ চুক্তিটিকে “ইসলামি ফ্রন্টের ঐতিহাসিক দুর্গ” হিসেবে বর্ণনা করেন। তার মতে, “সৌদির আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পাকিস্তানের পারমাণবিক প্রতিরোধশক্তি যুক্ত হয়ে আঞ্চলিক প্রতিরোধকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।”

তিনি লেখেন, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক শক্তি বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার গ্যারান্টি, উন্নত সামরিক সক্ষমতা তাকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর অগ্রভাগে রেখেছে, আর ইসলামের পবিত্রতম স্থানগুলোর অভিভাবকত্ব তাকে দিয়েছে আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব।

আউয়াদ বলেন, ভিশন ২০৩০-এর কারণে সৌদি প্রতিরক্ষা শিল্প ও অস্ত্র উন্নয়নে দ্রুত অগ্রসর হয়েছে এবং এখন উপসাগর ও ইসলামী বিশ্বের সম্মুখ সারির প্রতিরক্ষা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।অন্যদিকে পাকিস্তান হচ্ছে এমন পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যার বিশাল সেনাবাহিনী ও ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের পাশাপাশি আরব সাগরের তীরে শক্ত অবস্থান রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা ও প্রতিরক্ষা শিল্পের অভিজ্ঞতা যৌথ প্রতিরক্ষা কাঠামোকে শক্তিশালী করেছে।

চুক্তিটি কার্যত “দ্বিপক্ষীয় যৌথ নিরাপত্তা ছাতা” তৈরি করেছে, যাতে থাকবে যৌথ অভিযান পরিকল্পনা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, সামরিক মহড়া, নৌ ও বিমান সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের উন্নয়ন।

ন্যাটোর নীতি গ্রহণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুনীফ আম্মাশ আল-হারবি সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে বলেন, চুক্তিটি উভয় দেশকে সীমাহীন সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ দিয়েছে এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পক্ষগুলোকে বার্তা দিয়েছে।

সৌদি আরবের বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফয়সাল আল-হামাদ একই চ্যানেলকে বলেন, “এই চুক্তি ন্যাটোর নীতি অনুসরণ করেছে। আর তা হচ্ছে- এক দেশের ওপর আক্রমণ মানেই সবার ওপর আক্রমণ।” পাকিস্তানের সংবাদপত্রগুলোও প্রতিরক্ষা চুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে। সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, চুক্তির পর ইসলামাবাদের আকাশচুম্বী ভবনগুলো সৌদি ও পাকিস্তানি পতাকায় আলোকিত করা হয়েছিল।

গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চুক্তি
আল-রিয়াদ লিখেছে, “ক্রাউন প্রিন্স পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন”। আল-মাদিনা শিরোনাম দিয়েছে, “সৌদি ও পাকিস্তানের মধ্যে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি।” এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার মাত্র এক সপ্তাহ পর। সে ঘটনায় পাঁচজন হামাস শান্তি-আলোচক ও একজন কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিহত হন। তখন কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির মধ্যস্থতা করছিল।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনের এই ভূখণ্ডটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অন্তত ১১ হাজার মানুষ চাপা পড়ে আছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, গাজার প্রকৃত মৃতের সংখ্যা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হিসাবের চেয়ে বহুগুণ বেশি হতে পারে। আর সেটি হতে পারে প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি।

এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রান্না করে মাসে আয় কোটি টাকা! Nov 07, 2025
img
নির্বাচন বিরোধীরা সন্ত্রাসী হামলা করেছে কিনা খতিয়ে দেওয়া উচিত : আমীর খসরু Nov 07, 2025
img
জাহানারার অভিযোগগুলো বিসিবি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে, আশা মাশরাফির Nov 07, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে প্রকাশ্যে 'শয়তান' আখ্যা ট্রাম্পের Nov 07, 2025
img
বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত অন্তত ৩১ Nov 07, 2025
img
ফেব্রুয়ারির পর নির্বাচন মানুষ মেনে নেবে না : মির্জা ফখরুল Nov 07, 2025
img
গত আট মাসের মধ্যে প্রথমবার অক্টোবর মাসে রপ্তানি কমলো চীনের Nov 07, 2025
img
আর নেই বলিউড অভিনেত্রী জেরিন খান Nov 07, 2025
img
গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে বিভিন্ন চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল Nov 07, 2025
img
জাপানের জনশক্তির ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ বাংলাদেশের Nov 07, 2025
img
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুদকের অভিযান Nov 07, 2025
img
জায়েদ খানের অতিথি ঋতুপর্ণা Nov 07, 2025
img
তৃতীয় বিমানবাহী রণতরী নামালো চীন Nov 07, 2025
img
নয়াপল্টনে চলছে বিএনপির সমাবেশ Nov 07, 2025
img
আফগানিস্তানকে স্তব্ধ করল নেপালের রশিদ খানের হ্যাটট্রিক! Nov 07, 2025
img
সেনাপ্রধানকে নিয়ে অপপ্রচার, দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ Nov 07, 2025
img
নীলফামারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক ইপিজেড শ্রমিকের Nov 07, 2025
img
খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ফয়েজ মাহমুদ গ্রেপ্তার Nov 07, 2025
img
রাজস্থানেই বিয়ে করবেন বিজয়-রাশমিকা Nov 07, 2025
img
বাগেরহাটে বাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 07, 2025