নেপালে গত ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা, জনসচেতনতার উত্থান এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তুন্ডিখেলে আয়োজিত সংবিধান দিবস ও জাতীয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, সংবিধানের অঙ্গীকার অনুযায়ী সুশাসন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষা পূরণ না হওয়া, মানুষের দীর্ঘদিনের অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা যে এইম বিক্ষোভের পেছনে অনেকাংশে দায়ী, তা অস্বীকারের জো নেই। আলোচিত আন্দোলনকে নেপালের গণতান্ত্রিক স্বাস্থ্য মাপার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন উল্লেখ করে কার্কি বলেছেন, গণতন্ত্র মানে হচ্ছে মানুষের কথা শোনা, আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খোঁজা।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর মতে, ফেডারেল প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নাগরিক স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ ও দক্ষ বিচারব্যবস্থা, আইনের শাসন ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতির মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নীতি রক্ষায় আগের সরকারের ব্যর্থতার কারণেই ফুঁসে উঠেছিল তরুণ প্রজন্ম।
তিনি আরও বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক পরিসরে নাগরিকবান্ধব প্রশাসন ও উন্মুক্ত সরকারের ধারণা তরুণ প্রজন্মকে নতুনভাবে সচেতন করেছে। কর্মসংস্থান, জীবনমান, প্রশাসনের স্বচ্ছতা, আইনের সমতা, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, সুশাসন ও উন্নয়ন—এসব শুধু তরুণদের দাবি নয়, বরং সব প্রজন্মের অভিন্ন জাতীয় এজেন্ডা। সরকার এ দাবি গ্রহণ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করবে বলে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
কার্কি জানান, আন্দোলনের সময় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এখন সরকারের সামনে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে এবং পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনও সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি তরুণ প্রজন্ম, রাজনৈতিক দল, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, উন্নয়ন সহযোগী ও সব নাগরিককে পুনর্গঠন ও উন্নয়ন অভিযানে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। জনগণের অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা স্বীকার করে বলেন, একসঙ্গে সব সমাধান সম্ভব নয়, তবে সরকার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাবে।
ক্ষমতার লোভে শপথ গ্রহণ করেননি স্মরণ করিয়ে দিয়ে কার্কি বলেন, দেশের সংকটের সময়ে তরুণদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। তার মূল দায়িত্ব হলো সংবিধান অনুযায়ী আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে নতুন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
নির্বাচন শুধু একটি প্রক্রিয়া নয়, বরং জনগণের আশা ও আস্থার প্রতিফলন উল্লেখ করে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৬ সালের ৫ মার্চ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
বক্তব্যে তিনি সহিংসতায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং ভুক্তভোগী স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে তিনি আন্দোলনে সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক খাতের ‘অকল্পনীয় ও অপূরণীয় ক্ষতি’তে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন।
ওই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল, ভাইস-প্রেসিডেন্ট রামসাহা প্রসাদ যাদব, প্রধান বিচারপতি প্রকাশমান সিং রউত, স্পিকার দেবরাজ ঘিমিরে, জাতীয় পরিষদের সভাপতি নারায়ণ প্রসাদ দাহাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. বাবুরাম ভট্টরাইসহ সাংবিধানিক সংস্থার প্রধান, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতিনিধি ও বিদেশি কূটনীতিকরা।