ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন চান দেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ

দেশের ৮৬.৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসেই নির্বাচন হ‌ওয়া উচিত। সেইসঙ্গে ৯৪.৩ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ প্রতি ১০ জনে ৯ জনই জানিয়েছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তারা ভোট দিতে যাবেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারের কাজে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে ৭৮.৭ শতাংশ মানুষ। ৬৯.৯ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে।

যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই বলে জানিয়েছে ৫৬ শতাংশ মানুষ। যাদের ধারণা আছে তাদেরও ২২.২ শতাংশ পিআর পদ্ধতি থাকা উচিত নয় বলে জানিয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ইনোভিশন কনসাল্টিং ‘জনগণের নির্বাচন ভাবনা’ নিয়ে চলতি বছর দ্বিতীয় দফায় জরিপ করেছে। গতকাল রবিবার এ জরিপের প্রথম পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। ওই ফলাফলে জনগণের ভাবনার এ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রথম পর্বে নির্বাচনের সময়, নির্বাচনী পরিবেশ, আইন-শৃঙ্খলা ও অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে জনগণের ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। আগামী বুধবার জরিপের দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল প্রকাশ করা হবে। ইনোভিশন কনসালটিংয়ের এই উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে ভয়েস ফর রিফর্ম ও ব্রেইন (বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালিসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক)।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ইনোভিশন কনসালটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াৎ সারওয়ার। তিনি জানান, চলতি বছর ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর জরিপটি পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেশের ৬৪ জেলায় ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতা অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে খানা বা হাউসহোল্ড উত্তরদাতা ছিলেন ৯ হাজার ৩৯৮ জন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিলেন এক হাজার ১৫ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৫৪.২ শতাংশ, নারী ৪৫.৪ শতাংশ ও তৃতীয় লিঙ্গের ছিলেন ০.৪ শতাংশ।

জরিপে বয়সের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি ৩৭.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ছিলেন জেন-জি প্রজন্মের, যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে। এ ছাড়া ২৯ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে ৩৩.৪ শতাংশ, ৪৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৯.৮ শতাংশ এবং ষাটোর্ধ্ব ছিলেন ৯.৩ শতাংশ।

ইনোভিশন কনসালটিং দাবি করছে, এটি জাতীয় নির্বাচনী প্রবণতা নিয়ে এ পর্যন্ত পরিচালিত সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত ফেস-টু-ফেস হাউসহোল্ড সার্ভে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। জরিপের ফলাফলে অন্তর্বর্তী সরকারের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত ব্যারেজ অফ মিস ইনফরমেশনের (ভুল তথ্যের বন্যা) পরও একটা সরকারের জন্য ১৪তম মাসে এসে এ রকম একটি ফলাফল ব্রিলিয়ান্ট (দুর্দান্ত)। এটি এই সরকারের জন্য একটা বড় সমর্থন।’

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ‘সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের যে সময় দিয়েছে, (জরিপে) সে বিষয়ে একদম সুস্পষ্ট, জোরালোভাবে হ্যাঁ বলেছে সবাই। আমরা যে কথাটা বলছি, ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের নির্বাচন হবে- অন্তর্বর্তী সরকার বারবার বলছে, অধ্যাপক ইউনূস বারবার বলছেন, প্রেস উইংয়ের তরফ থেকেও আমরা বারবার বলছি। (জরিপের ফলাফলে) বোঝা গেল যে মানুষের ট্রাস্ট (বিশ্বাস) আছে। মানুষ ভাবছে ভালো একটা নির্বাচন হবে।’

পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোই সিদ্ধান্ত নেবে এবং এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বক্তব্য বা অবস্থান নেই বলেও জানান প্রেস সচিব। জরিপে দেখা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ভোটারদের ধারণা মূলত ইতিবাচক। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ কেমন চালাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ৩৯.৫০ শতাংশ উত্তরদাতা ‘ভালো’ বলেছেন এবং ৩৯.২ শতাংশ ‘মোটামুটি’ বলেছেন। ১৭.২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, দেশ খারাপ চলছে। তবে জরিপে ড. ইউনূসের সরকার সম্পর্কে উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে ইতিবাচক ধারণার হার তুলনামূলক কিছুটা কম দেখা গেছে।

নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আস্থা রাখছেন ৬৯.৯ শতাংশ উত্তরদাতা। ১৬.৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ১৩.৫ শতাংশ। যদিও জরিপে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতার বিষয়ে তুলনামূলক কম ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেছে। ৭১.২ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বী নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে এ সরকারের ওপর আস্থা রাখলেও হিন্দু, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধদের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ৫৯.৪ শতাংশ, ৫৪.৮ শতাংশ এবং ৬৭.৩ শতাংশ।

নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ৬৮.২ শতাংশ ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। তবে তরুণ প্রজন্ম বা জেন-জির তুলনায় বয়স্করা পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর বেশি আস্থাশীল। সার্বিকভাবে ৭৭.৫ শতাংশ মানুষ নির্ভয়ে ও নিরাপদ ভোটের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

পিআর পদ্ধতি বোঝেন না ৫৬ শতাংশ
আপনি কি মনে করেন বাংলাদেশে সংসদে উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত- এমন প্রশ্নের জবাবে ৫৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, পিআর পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁদের ধারণা নেই। অন্যদিকে এ সম্পর্কে যারা জানেন, তাদের ২২.২ শতাংশ বলেছেন, পিআর পদ্ধতি থাকা উচিত নয়। ২১.৮ শতাংশ এ পদ্ধতির পক্ষে বলেছেন। প্রবীণদের তুলনায় নবীন প্রজন্ম এ বিষয়ে বেশি সচেতন ও ইতিবাচক।

চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগ
গত ছয় মাসে চাঁদাবাজির অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে ৫৬.৬ শতাংশ জানিয়েছেন, চাঁদাবাজি বেড়েছে। অন্যদিকে ২২ শতাংশ বলেছে চাঁদাবাজি কমেছে। খানার উত্তরদাতাদের (৫৫.৫ শতাংশ) তুলনায় ছাত্র-ছাত্রীরা (৬৬.৫ শতাংশ) চাঁদাবাজি পরিস্থিতিকে বেশি খারাপ বলেছেন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ঢাকা ছেড়েছেন হানিয়া আমির Sep 22, 2025
img
আমাজনকে হারিয়ে সিপিএলে চ্যাম্পিয়ন নাইট রাইডার্স Sep 22, 2025
img
সাইবার হামলা: ব্যাহত ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম Sep 22, 2025
img
কনসার্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানালেন তাহসান Sep 22, 2025
img
পাকিস্তানে বৃষ্টি-বন্যায় সাড়ে ৩ মাসে প্রাণ গেল অন্তত ১০০৬ জনের Sep 22, 2025
img
আজ বিকেলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক এনসিপির  Sep 22, 2025
img
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিচারের মুখোমুখি করতে চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প Sep 22, 2025
img
ফখর জামানের আউট নিয়ে বিতর্ক, মুখ খুললেন সালমান আঘা Sep 22, 2025
img
এক বছরে অনলাইনে তথ্য ফাঁস বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৮ গুণ Sep 22, 2025
img
ইংল্যান্ডের সিরিজ জয়, ইতিহাস গড়লেন জ্যাকব বেথেল Sep 22, 2025
img
এবার বাল্টিক সাগরে রুশ গোয়েন্দা বিমান, প্রতিক্রিয়ায় ২ যুদ্ধবিমান পাঠালো জার্মানি Sep 22, 2025
img
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে কোনদিনই প্রতিষ্ঠা পাবে না: নেতানিয়াহু Sep 22, 2025
img
ইসির নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে এনসিপিসহ ছয় দল Sep 22, 2025
img
একাধিক দাবিতে শ্রমিক ধর্মঘট; চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা ও রাজশাহী রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা Sep 22, 2025
img
রউফের দিকে অভিষেকের তেড়ে যাওয়ার কারণ Sep 22, 2025
img
রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম লজ্জার Sep 22, 2025
img

এশিয়া কাপ ২০২৫

পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা জয়ের পর সূর্যকুমারের মন্তব্য Sep 22, 2025
img
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে ৪ দেশের স্বীকৃতিকে স্বাগত জানাল বাংলাদেশ Sep 22, 2025
img
লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় চার মার্কিন নাগরিকসহ নিহত ৫ Sep 22, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ২০তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Sep 22, 2025