সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘বিএনপি গত কয়েক দিনের মধ্যে একটি বড় এবং ইতিবাচক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। পদক্ষেপটি হলো -তারা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (যার তারিখ ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হয়েছে) জন্য আজ দুই শতাধিক আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচন করেছে। যদিও এটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি, তবে জানা গেছে। ওই আসনগুলোতে কাদেরকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে, সে ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।
ইতোমধ্যে অনেক আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামও প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির এই সিদ্ধান্তটি আমার কাছে অত্যন্ত ইতিবাচক মনে হয়েছে।’
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেছেন।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘অনেক আগেই জামায়াতে ইসলাম তাদের সব আসনের জন্য প্রার্থী নির্বাচন করে ফেলেছে।
কোন আসনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তারা তা আগেই জানিয়ে দিয়েছে। আমি যতটুকু জানি এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জেনেছি, তাতে দেখা যাচ্ছে—সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের ওই প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। তাদের প্রচারণার ধরনটি বেশ ব্যতিক্রমী এবং লক্ষণীয়। তারা মূলত ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন, বিশেষ করে নারীদের মাধ্যমে তারা একটি কার্যকর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন।
আমার জানা মতে, জামায়াতে ইসলামী নারীদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সমর্থন গড়ে তুলতে পেরেছে। অন্যদিকে, পুরুষ প্রার্থীরা মসজিদে, হাটে, বাজারে এবং অন্যান্য সামাজিক জায়গায় গিয়ে জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলছেন, মতবিনিময় করছেন এবং প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা বুঝে-শুনে প্রতিটি এলাকায় উপযোগী কৌশল প্রয়োগ করছেন, যাতে সেখানকার জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়।’
তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমরা বিএনপির মধ্যে এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ্য করেছি। তারা ঠিক করতে পারছিলেন না, কে কোন আসনে নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন।
সেইসঙ্গে কিছু কিছু এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির মতো নেতিবাচক ঘটনার খবরও পাওয়া গেছে, যা বিএনপির ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর ছিল। এই প্রেক্ষাপটে আজকে যখন আমি দেখলাম -বিএনপি বিভিন্ন আসনের জন্য কাদেরকে মনোনয়ন দিচ্ছেন, তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে (যদিও এটি আনুষ্ঠানিক নয়), তখন বিষয়টিকে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক অগ্রগতি হিসেবে দেখেছি।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘জানতে পেরেছি তারেক রহমান লন্ডন থেকেই স্কাইপ বা অন্যান্য মাধ্যমে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং সরাসরি নির্দেশনা দিচ্ছেন -যাতে মনোনীত প্রার্থীরা তাদের এলাকায় প্রচার শুরু করতে পারেন। এই পদক্ষেপের একটি বড় ইতিবাচক দিক হলো -যদি কোনো এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকেন কিংবা কারো মধ্যে মনোনয়ন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে, তা আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যেই প্রকাশিত হয়ে যাবে। যখন এসব বিষয় আগেভাগেই প্রকাশ পায় তখন সেই প্রার্থী বা নেতার সঙ্গে আলোচনা করা, বোঝানো কিংবা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করা অনেক সহজ হয়। কিন্তু যদি প্রার্থীদের নাম একেবারে শেষ মুহূর্তে ঘোষণা করা হতো, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের থামানো বা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সুযোগ অনেকটাই সীমিত হয়ে যেত। তাই আমি মনে করি, বিএনপির পক্ষ থেকে এটি একটি দলীয়ভাবে অত্যন্ত ইতিবাচক ও কৌশলগত সিদ্ধান্ত।’
তিনি মনে করেন বিএনপির সিদ্ধান্তের সুফল খুব শিগগিরই দেখা যাবে। আর যেগুলো এখনো বাকি আছে -যথাক্রমে প্রায় ১০০টি আসন সেগুলোর মনোনয়নও বিএনপি খুব দ্রুতই চূড়ান্ত করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পিএ/টিএ