সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি আজকাল এক নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে নেতারা আর কেবল কথায় নয় বরং সরাসরি প্রতিপক্ষকে অপমান করতে পিছপা হচ্ছেন না। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট- এখন গালাগালই যেন রাজনৈতিক বাক্যালাপের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এমনকি আমেরিকার মতো বিদেশেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘর্ষের ছায়া পড়েছে- যেখানে নেতাদের ওপর ডিম ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি নয়া বাস্তবতা, যেখানে রাজনীতির সংস্কৃতি বদলে যাচ্ছে আর দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গোলাম মাওলা রনি এসব কথা বলেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দিতে আমেরিকায় যান, তখন থেকেই দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগকে ঘিরে যে আলোচনা শুরু হয়, সেটি গত এক বছরে আর কখনো এত তীব্র হয়নি। এর আগেও দেখা গেছে, তিনি যেখানেই সফরে গেছেন সেখানেই কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে লন্ডনে।
তবে লন্ডনের বিক্ষোভ ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত এবং অপ্রত্যাশিত। অনেকেই ভেবেছিল, লন্ডনে এমন কিছু ঘটবে না কারণ সেখানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ভিত্তি অতটা শক্ত নয়। আর বিএনপি ও জামায়াতের তো বরাবরই সেখানে প্রভাব বেশি। তবে ড. ইউনূস লন্ডনে যাওয়া মাত্রই যা ঘটল তা সবাইকে চমকে দিল।
আওয়ামী লীগ লন্ডনে যেভাবে বিক্ষোভ দেখাল ড. ইউনূসকে বিব্রত করল, সেটা বাংলাদেশের ইতিহাসে খুবই বিরল ঘটনা। কেউ কেউ বলছে, বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিদেশে কখনো এতটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি।
তিনি বলেন, লন্ডনের ঘটনার রেশ না কাটতেই যখন জানা গেল ড. ইউনূস এবার আমেরিকায় যাচ্ছেন, তখন সবাই ধরে নিল- এবারও আওয়ামী লীগ কিছু একটা করবে এবং করবে লন্ডনের চেয়েও বড় পরিসরে। বাংলাদেশি জনগণও যেন এই ‘সিন’ দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল। ঠিক তেমন মনোভাব থেকেই অনেকে ড. ইউনূসের ওপর ডিম ছোড়ার অপেক্ষায় ছিল।
কেউ ভাবছিল- ডিমটা টাটকা হবে না পচা?
তিনি আরো বলেন, আরেকটা দুঃখজনক বিষয় হলো, আমাদের দেশে আজকাল যেসব মানুষ সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় গালি দিতে পারে, তাদেরই আমরা ‘জনপ্রিয় নেতা’ বানিয়ে ফেলছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এই গালাগাল প্রবণতা ঢুকে পড়েছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এনসিপি- সবাই এখন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গালিই ব্যবহার করছে। শিক্ষিত তরুণরাও এই গালি প্রতিযোগিতায় নামছে, এমনকি বুয়েটের মতো জায়গাতেও।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, এই যে সংগঠিতভাবে আমেরিকায় আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ- এটা দেখে অনেকে বলছে, সরকার নিজেই এখন বিব্রত। কারণ, অভিযোগ উঠেছে- ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের যেসব কর্মকর্তা আছেন, তারা নাকি শেখ হাসিনার হয়ে কাজ করছেন। তারা ড. ইউনূস, মির্জা ফখরুলসহ অন্য বিরোধীদের তথ্য আওয়ামী লীগপন্থীদের জানিয়ে দিয়েছে। এই অভিযোগের জেরে অনেকে বলছে- এই কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আরেকটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে- জামায়াতকে কেউ কিছু বলল না কেন? মির্জা ফখরুল, তাসনিম জারা, আখতার সাহেব- এদেরকে গালাগাল করা হলো, আখতারকে ডিম মারা হলো সেখানে জামায়াতের নেতাকে কিছু বলল না কেন।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির ভেতরে আগে থেকেই জামায়াত নিয়ে ক্ষোভ ছিল। এখন সেটা আরো বেড়েছে। এদিকে জামায়াতের তরফ থেকে বলা হচ্ছে- তাদের জনপ্রিয়তা এখন আকাশছোঁয়া। কেউ বলছে ৩৩%, কেউ বলছে ৩৫% ভোট তাদের দিকে। তারা এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে বলছে, আগামীতে আমরাই সরকার গঠন করব, বিএনপি থাকবে বিরোধী দলে। কিন্তু বাস্তবে কি জামায়াতের এই পরিমাণ ভোট আছে? পিআর পদ্ধতিতে অতীতে তাদের ভোট ৫-৬% এর বেশি ছিল না। তাহলে হঠাৎ করে এত জনপ্রিয়তা কিভাবে? অনেকে বলছে, এটা আসলে আওয়ামী লীগের কৌশল। বিএনপিকে চাপে ফেলতেই জামায়াতকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। জরিপে আওয়ামী লীগ সমর্থকরাই জামায়াতের নামে ভোট দিচ্ছে, যেন জামায়াতকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা যায়।
কেএন/টিএ