ড. ইউনূস যে মিশন নিয়ে দলবল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেছেন তা শতভাগ সফল হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। বৃহস্পতিবার নিজের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক বিশ্লেষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের আমেরিকা গমন সারা বাংলাদেশকে উত্তাল করেছে। তিনি যখন সেখানে যাচ্ছিলেন তখন একটার পর একটা ঘটনা ঘটছিল।
শেষ পর্যায়ে তিনি তিনটি দল থেকে ছয়জনকে নিয়ে নিউইয়র্কে গেলেন।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই সন্দেহ করছিল ভারতের সঙ্গে বিএনপির একটা সম্পর্ক হচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলছিল, তা নয়; আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের একটা সম্পর্ক হচ্ছে। আবার এটাও বলা হচ্ছিল যে, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে কয়েকটি সিট পাওয়ার তদবির করছে।
আর জামায়াতের পিআরের মূল উদ্দেশ্য বিএনপির কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫টি আসন বাগিয়ে নেওয়া।’
তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূসকে নিয়ে সমালোচকদের প্রধান ন্যারেটিভ হলো—তিনি যাবেন না। অনেকদিন থাকবেন। হয়তো ৫ বছর, হয়তো ১০ বছর।
আবার কেউ বলছেন তিনি হয়তো ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেবেন না। এর মধ্যে মার্কিন ডিপস্টেটের কথা এসেছে। এসব নিয়ে রীতিমতো মহাকাব্য রচিত হচ্ছে।’
গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘ড. ইউনূস যখন বাংলাদেশ থেকে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন ঠিক তখনই কয়েকজন ইনফ্লুয়েন্সার বলেছেন, বাংলাদেশে যেসব দুষ্পাপ্য খনিজদ্রব্য আছে, এগুলোকে নেওয়ার জন্য আমেরিকা নানারকম ফন্দি করে যাচ্ছে। ড. ইউনূস এই বিষয়টি নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে দর কষাকষি করছেন কিনা? আমেরিকাকে যদি তিনি এসব সম্পদ প্রদান করেন তাহলে কি তিনি অগণিত সময় ক্ষমতায় থাকতে পারবেন? এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
’
তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূস এবার কেবলমাত্র একটি ভাষণ দেওয়ার জন্য নিউইয়র্কে যাননি। তিনি যাদেরকে নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে জামায়াত নেতা ছাড়া বাকিদের বিমানবন্দরে অপদস্ত করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের ওইসব নেতাদের গ্রামের বাড়িতে এনসিপির নেতারা ডিম মারছে। রাজনীতির এই বিভেদ ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক ভ্রমণের আগে ছিল না। এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হলো অন্তর্বর্তী সরকারের।’
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের একটি অলিখিত সমঝোতা চলে এসেছিল ডাকসু নির্বাচনের পরে। ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতের ভূমিধস বিজয়ে সবাই বলার চেষ্টা করেছেন এর পেছনে আওয়ামী লীগের হাত রয়েছে। এরপর ছাত্রদল, যুবদল, বিএনপি মনে মনে বলল, আমরা সারা দেশে মব করছি, আর জামায়াত এই সুযোগে কোরমা খাচ্ছে। আমরা আর এখন থেকে কোনো অবস্থাতেই আওয়ামী লীগকে ঠেকাব না।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখন প্রতিদিন মিছিল করছিল, সরকারের যখন টনক নড়ে যাচ্ছিল; ঠিক সেই সময়ে ড. ইউনূস তার প্রজ্ঞা-মেধা দিয়ে কূটচাল চাললেন। তিনি মির্জা ফখরুলকে তার সফরসঙ্গী করলেন, এতে মির্জা ফখরুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার মুখ থুবড়ে পড়েছে। ভারতীয় মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার নিয়ে তাকে গালাগাল করা হয়েছে। তিনি যদি আমেরিকায় না যেতেন তাহলে এই জিনিসগুলো সামনে আসত না। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাজনৈতিক নেতাদের দেখা যায়নি। কেবল ড. ইউনূস ও তার লোকজনকে দেখা গেছে। মির্জা ফখরুলের সমালোচকরা বলছেন, দ্রুত নিউইয়র্ক থেকে তার দেশে ফিরে আসা উচিত।’
তিনি আরো বলেন, ‘ড. ইউনূস যে মিশন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন, সেই মিশনে তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন। তার মিশনের ফাঁদে যারা পা দিয়েছেন তাদের সবার সর্বনাশ হয়ে গেছে। সেই সর্বনাশের পরিমাণ কতটা তা আমরা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে দেখতে পাব।’
ইএ/টিএ