জাতিসংঘে ড. ইউনূস

দুর্নীতির উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ায়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাজনৈতিক হীনস্বার্থ ও দুর্নীতির উদ্দেশে নেওয়া অবকাঠামো প্রকল্প শুধু অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ায় তা নয়, জনগণের কোনো উপকারেও আসে না।

তিনি সতর্ক করেন, উন্নয়নের নামে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের এ প্রবণতা এখনই বন্ধ না করলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ টেকসই হবে না।

শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিগত দেড় দশকের অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি যে জবাবদিহিতা ছাড়া যেকোনো উন্নয়ন ক্ষণস্থায়ী ও ভঙ্গুর। রাজনৈতিক হীনস্বার্থ ও দুর্নীতির উদ্দেশ্যে গৃহীত অবকাঠামো প্রকল্প শুধু যে অর্থনীতির উপরই চাপ বাড়ায় তা নয়, তা জনগণের কোনো কল্যাণও করে না।

প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর সরকার একে একে আবিষ্কার করেছে দুর্নীতি ও জনগণের সম্পদ চুরি কীভাবে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল এবং তার ফলশ্রুতিতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়ানকভাবে নাজুক ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল।

‘আমরা এর অবসান ঘটাচ্ছি যেন আর কখনোই উন্নয়নকে জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না যায়,’ বলেন ড. ইউনূস।

অর্থনীতি পুনর্গঠনের কঠিন পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মজবুত করতে আমরা সংস্কারমূলক কিছু কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সংস্কার হলো রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থাপনার সংস্কার— যেখানে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংস্থাকে পৃথক করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এই সংস্কারগুলো সদ্যসমাপ্ত এফএফডি৪ সম্মেলনে গৃহীত সেভিয়া অঙ্গীকারের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। একইসঙ্গে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সংস্কার, আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা, অবৈধ আর্থিক প্রবাহ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ এবং পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি তুলে ধরেন।

ড. ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা কেবল উন্নয়ন নয়— বরং জবাবদিহিতামূলক, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। আর সেই লক্ষ্যেই সরকার কঠিন সংস্কার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মানুষ বদলায় না, মুখোশ পরে থাকে : সোনালী চৌধুরী Nov 14, 2025
img
কটকের বালি যাত্রা মেলায় শ্রেয়া ঘোষালের কনসার্টে বিশৃঙ্খলা Nov 14, 2025
img
বিচারকের ছেলেকে হত্যার ঘটনায় পুলিশের ভাষ্য Nov 14, 2025
img
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের Nov 14, 2025
img
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত হলো : শিশির মনির Nov 14, 2025
img
নিজের সঙ্গেই নিজের তুলনা করো, অন্য কারও সঙ্গে নয়: আমিশা প্যাটেল Nov 14, 2025
img
সৌদি তাকামল হোল্ডিং-এর প্রধান কার্যালয়ে প্রবাসী কল্যাণ সচিবের বৈঠক Nov 14, 2025
img
খালেদা জিয়ার পক্ষে আজ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু Nov 14, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে কড়াকড়ি, অভিবাসীদের ১৭ হাজার বাণিজ্যিক ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল Nov 14, 2025
img
আগামীকাল প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে এনসিপি Nov 14, 2025
img
রাতে পার্টি দেয়ার চুক্তিতে বাসে আগুন দিতে রাজি হন ৩ কলেজ শিক্ষার্থী Nov 14, 2025
img
মাগুরায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ গেল ২ জনের Nov 14, 2025
img
ওসমান হাদিকে কল ও টেক্সটে হত্যার হুমকি Nov 14, 2025
img
কোটাসহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে স্কুলে ভর্তির নতুন নীতিমালা প্রকাশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের Nov 14, 2025
img
নিউমুরিং টার্মিনাল চুক্তি প্রক্রিয়ার রুল শুনানি ১৯ নভেম্বর Nov 14, 2025
img
মাত্র ২৯ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের নতুন ডিসি জাহিদুল Nov 14, 2025
img
দুর্নীতির অভিযোগে ২ মন্ত্রীকে বরখাস্ত করলেন জেলেনস্কি Nov 14, 2025
img
আবার মঙ্গল অভিযানে নাসার দুই মহাকাশযান Nov 14, 2025
img
আজ বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা, গণনা শুরু Nov 14, 2025
img
বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ Nov 14, 2025