উত্থান পশ্চিমায়, প্রকৃতি বিরূপ হলে ড. ইউনূসের পতনও সেখানে হবে : রনি

সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, যার যেখানে উন্নয়ন, যে কর্ম করে উন্নয়ন, যে সমাজকেন্দ্রিক তার উন্নয়ন, ঠিক সেখানে তার পতন। আমাদের এই বাংলাদেশে সবাই একবাক্যে বিশ্বাস করেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখানে এসেছেন মূলত ইউরোপের পছন্দে, আমেরিকার পছন্দে এবং তার ইউরোপ-আমেরিকার কানেক্টিভিটির কারণেই পশ্চিমারা তাকে বিশ্বস্ত লোক হিসেবে এখানে বসিয়েছেন। আর আগামী দিনে প্রকৃতি যদি বিরূপ হয় তাহলে তার যে পতন, সেটি পশ্চিমা দুনিয়া থেকেই হবে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, পশ্চিমা দুনিয়াতে আপনি কথা বলতে গেলে যত বেশি হিউমার করতে পারবেন এবং যত বেশি কৌতুক করতে পারবেন ততই আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং আপনি মানুষ হিসেবে যাকে বলা হয় অন্যের নিকট আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হবেন। আমাদের নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুদীর্ঘকাল তিনি তার ক্যারিয়ার পশ্চিমা দুনিয়ায় তৈরি করেছেন এবং পশ্চিমা দুনিয়ায় এই যে তাদের যে সোসাইটির যে আচার-আচরণ, চাল-চলন, কথাবার্তা এটা তিনি এতটা রপ্ত করেছেন ফলে তার মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা আসলে পশ্চিমা ধাঁচের, কেবলমাত্র তার গায়ের রং বাংলাদেশের আর তার পোশাক বাংলাদেশের। ফলে তার বক্তব্য আমেরিকার সোসাইটিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় কিন্তু বাংলাদেশের অনেকের কাছে হয়ত এই বক্তব্যগুলো যাকে বলা হয় আপত্তিকর বলে মনে হতে পারে। আপনারা জানেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা দুনিয়ায় নিদারুণ সব অপপ্রচার চলছে তার বিরুদ্ধে, তার সরকারের বিরুদ্ধে।

এই যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, এটার নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত ভারত। ভারতের যে শক্তিশালী মিডিয়া এবং তাদের যে পশ্চিমা বন্ধু রয়েছে অর্থাৎ ধরুন ভারতের এনডিটিভি বা ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস, দ্য হিন্দু, দ্য গার্ডিয়ান- এ সকল পত্রিকার সঙ্গে অ্যাফিলিয়েটেড যে সকল পশ্চিমা মিডিয়া রয়েছে, তারা সবাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অতীত কর্মকাণ্ড সবকিছু ভুলে গিয়ে তাকে এই গত এক বছরের প্রেক্ষিতে যে অবমূল্যায়ন করছেন বা যেভাবে তার সমালোচনা করছেন তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্যারিয়ারকে রীতিমতো তছনছ করে দিচ্ছে। তাকে বলা হচ্ছে তিনি এখন মিয়া ইউনুস। ড. ইউনূসের পরিবর্তে তাকে বলা হচ্ছে মিয়া ইউনুস।

বুঝার চেষ্টা করেন যারা আপনারা সামাজিক মাধ্যমে আছেন, এই শব্দটার অর্থ দ্বারা কি বুঝায়? আমরা সবাই তাকে সম্মান করি ড. ইউনূস বলে। ভারতীয় মিডিয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়ায় এখন তাকে বলা হয় মুহাম্মদ ইউনূস। মানে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এই যে তার নামটিকে তারা উনার নামের সঙ্গে যুক্ত করে, ডক্টর বাদ দিয়ে, সবকিছু বাদ দিয়ে তাকে একজন ইসলামিস্ট, একজন এক্সট্রিমিস্ট হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তারা উঠে পড়ে লেগেছে। তাহলে কি হলো? ড. ইউনূস না বলে তারা বলছে, মিয়া ইউনূস আর মুহাম্মদ ইউনুস।

তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত তারা যে ন্যারেটিভটি তৈরি করার চেষ্টা করছেন, সেটি হলো যে তিনি একটি উগ্রবাদী সরকার পরিচালনা করছেন।
তার সরকারে যারা কর্তাব্যক্তি এবং তার সরকারের যারা প্রমোটার, তারা সবাই উগ্রবাদী, জঙ্গিবাদী, এক্সট্রিমিস্ট, ইসলামপন্থী এবং বাংলাদেশে একটা আইএস-এর মতো একটা সংগঠন বা তালেবানের মতো একটা রাষ্ট্র সম্ভবত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঘটতে যাচ্ছে। এই কথাগুলো ওয়েস্টে প্রচার করা হচ্ছে। যেটি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য খুবই মনোবেদনার। এর কারণ হলো যে মাটিতে তার প্রবৃদ্ধি অর্থাৎ ইউরোপের মাটিতে তার প্রবৃদ্ধি।

ইউরোপ এবং আমেরিকাকে মার্কেটিং করে তিনি আজকের এই অবস্থানে পৌঁছে গেছেন। ফলে তিনি তো নিয়তি জানা মানুষ, সেই নিয়তিতে যেটি বলা হয়েছে তোমারে বোধিবে যে গোকুলে বাড়ি শেষে এবং তোমার যেখান থেকে শুরু সেখানেই তোমার শেষ, যে মাটিতে তোমার রথ উত্থান হবে সেই মাটিতেই তোমার পতন হবে এবং আল্লাহও ঠিক একই কথা বলেছেন আমরা কবরে লাশ রেখে প্রায় আমি কথাগুলো বলি তো সেই কবরে লাশ রাখার সময় আমরা যে দোয়াটি পড়ি সেটি কি- মিনহা খালাকনাকুম ওয়া ফি হা নুয়িদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা। তার অর্থ- হে মানুষ! তোমাকে এই মাটি থেকে তৈরি করা হয়েছিল, আবার এই মাটির মধ্যে তোমাকে রাখা হলো। আবার তোমাকে মাটি থেকে উঠানো হবে।

তিনি আরো বলেন, বাস্তব জীবনে একই অবস্থা, যার যে যেখানে উন্নয়ন, যে কর্ম করে উন্নয়ন, যে সমাজকেন্দ্রিক তার উন্নয়ন, ঠিক সেখানে তার পতন। আমাদের এই বাংলাদেশে সবাই একবাক্যে বিশ্বাস করেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যেখানে এসেছেন মূলত ইউরোপের পছন্দে, আমেরিকার পছন্দে এবং তার ইউরোপ-আমেরিকার কানেক্টিভিটির কারণেই পশ্চিমারা তাকে বিশ্বস্ত লোক হিসেবে এখানে বসিয়েছেন। আর আগামী দিনে প্রকৃতি যদি বিরূপ হয় তাহলে তার যে পতন, সেটি পশ্চিমা দুনিয়া থেকেই হবে।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মেসির সম্মানে হবে বার্সেলোনার স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণ Nov 17, 2025
img
যুগ পরিবর্তনের সাক্ষী হয়ে সিনেমার পরিবর্তিত ভাষা দেখালেন পাহাড়ী স্যানাল Nov 17, 2025
img
হাসিনার মৃত্যুদণ্ড নিয়ে শুভেন্দুর বিতর্কিত মন্তব্য Nov 17, 2025
img
বিশ্বকাপের পর ফ্রান্সের কোচিং দায়িত্বে যুক্ত হচ্ছেন জিদান! Nov 17, 2025
img
ধানমন্ডি ২৭-এ পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ Nov 17, 2025
img
বলিউডে নিজের অবস্থান ও জীবন দর্শন শেয়ার করলেন রাজকুমার Nov 17, 2025
img
নিকুঞ্জে ডিএনসিসির উচ্ছেদ: ফুড কোর্ট অক্ষত, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী! Nov 17, 2025
img
‘রায় দিলো, আব্বুকে ফোন করলাম, কাঁদলাম!’ Nov 17, 2025
img
পারিশ্রমিক নয়, চরিত্রকেই সবসময় গুরুত্ব দেই : দীপিকা Nov 17, 2025
img
বিবাহবার্ষিকীর দিনেই দেওয়া হলো শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় Nov 17, 2025
img
মিস ইউনিভার্স বিজয়ী হলে ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ পাবেন কত টাকা? Nov 17, 2025
img
শেখ হাসিনার নামের আগে ‘খুনি’ না লিখলে গণমাধ্যমও অপরাধী: হাদি Nov 17, 2025
img
নেটপাড়ায় জিতুর মানবিক বার্তা Nov 17, 2025
img
পল্লবীতে দোকানে ঢুকে যুবদল নেতাকে গুলি করে হত্যা Nov 17, 2025
img
দণ্ডিত হাসিনাকে দ্রুত ফেরত দিতে হবে : রাশেদ খাঁন Nov 17, 2025
মাত্র ১২ বছর বয়সে পেশাদার সংগীত যাত্রা শুরু রুনা লায়লার Nov 17, 2025
বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষে নিভে গেল ৪২ প্রাণ, মোদির শোক Nov 17, 2025
img
নতুন ৩ দেশসহ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করল ৩২ দল Nov 17, 2025
‘হাজারবার ভাঙলেও তোরা ৩২ নম্বরের ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবি না’ Nov 17, 2025
img
শুধু হাসিনা-কামালের বিচার হলে তা অসম্পূর্ণ হবে: নুর Nov 17, 2025