বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারের একটি অংশ তুলে ধরা হলো।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান
বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল এমন যে, শেষ প্রশ্নটি করি তাহলে আপনাকে এবং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়েই। বিগত সরকারের আমলে তাদের একটা বিষয় একটা বড় সমালোচনা ছিল যে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ। আপনারা (বিএনপি) যদি ক্ষমতায় আসেন সেক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদ বা সংবাদ মাধ্যমের উপর দমন-পীড়নের বিষয়গুলো যে আর হবে না, সেই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
তারেক রহমান বলেন,
জ্বি, ইয়েস পারি। একদম দিতে পারি। আপনি ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত পত্রপত্রিকা খুলুন। আমি কারও নাম উল্লেখ করবো না। কোনো পত্রিকার কথা উল্লেখ করবো না। শুধু খুলে দেখুন কিভাবে অনেক খবর ছাপা হয়েছিল। যার সত্যতা কিন্তু ছিল না, অপপ্রচার ছিল। কিন্তু অপপ্রচারটা সংবাদ হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আপনি কী শুনেছেন, আপনি কী আমাকে প্রমাণ দিতে পারবেন-বলতে পারবেন যে বিএনপির সময়, আমি কিন্তু বলতে পারবো অনেক অনেক সাংবাদিকের নাম, যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন স্বৈরাচারের সময়। আবার পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইভেন, এখনও অনেকে প্রবাস জীবনে আছেন এরকম বহু সাংবাদিক।
আমি বলতে পারব, স্বৈরাচারের সময় বহু সাংবাদিককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন করে বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন-ধমক দেওয়া হতো। বিএনপির সময় এগুলো করা হয়নি কারণ তখন সংবাদপত্রে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে তৎকালীন বিএনপি সরকার সম্পর্কে, আমার সম্পর্কে যে খবরগুলো প্রকাশিত হয়েছে, যদি ওইরকম হতো তাহলে কিন্তু ওরকম খবর প্রকাশিত হতো না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন,
অর্থাৎ বিএনপির সময় যদি অত্যাচার-নির্যাতন থাকতো তাহলে খবরগুলো প্রকাশিত হতো না স্বাভাবিকভাবে। যা হয়নি বিগত সরকারের সময় স্বৈরাচার সরকারের সময়। কাজেই আপনাকে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বিএনপির অতীত সরকারের সময় যেরকম সাংবাদিকদের গুম করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে নির্যাতন করা হয়নি। সাংবাদিকদেরকে দেশ ছেড়ে যেতে হয়নি, বাধ্য হতে হয়নি। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও হবে না।
বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল তাহলে কী সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধ করে-এ ধরনের যে আইনগুলো রয়েছে সেগুলো আপনারা বাতিল করবেন, এটা কী ধরে নেওয়া যায়?
তারেক রহমান বলেন,
অবশ্যই, আমরা সকলে মিলে বসবো, আলোচনা করব। আপনাদের মত সাংবাদিকসহ যারা আছেন, তাদের সাথে আলোচনা করা হবে। আলোচনা করে সেগুলোকে আমরা এরকম কালো আইন যা যা আছে, আমরা আস্তে আস্তে ঠিক করব। তবে এখানে বোধহয় একটি বিষয় আবার আমাকে উল্লেখ করতে হয়- যেটি আমি সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বলেছি। দেখুন, এটি তো সবাইকে মিলে করতে হবে। অপপ্রচারকে তো অবশ্যই সংবাদ হিসেবে তো প্রচার করা ঠিক নয়, তাই না?
আমাদের কাছে আপনাদের যেরকম চাওয়া থাকবে, ভবিষ্যৎ সরকারের কাছে, যারাই আসুক সরকারে, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদেরও অনুরোধ থাকবে আপনাদের প্রতি, যে অপপ্রচার সংবাদ হিসেবে যেন প্রচারিত না হয়, এই বিষয়টিকে একটু সকলকে সচেতন বা খেয়াল রাখতে হবে বলেও জানান তিনি।
বিবিসি বাংলা-তারেক রহমান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার জন্য।
তারেক রহমান বলেন, আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমার কথাগুলো দেশের মানুষের সামনে আমি তুলে ধরতে পেরেছি। সেই সুযোগটুকু আপনারা করে দিয়েছেন, তার জন্য আপনাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ।
ইএ/টিকে