এক্সিট বিতর্ক কি জুলাই সনদ থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে: জিল্লুর রহমান

‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে, তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে’ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বিস্ফোরক এ মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এমন মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের এ মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন। ফলে ‘সেফ এক্সিট’ শব্দটি এখন আলোচনার তুঙ্গে।

এমন পরিস্থিতিতে ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যুটি জুলাই সনদ থেকে মনযোগ সরিয়ে দিচ্ছে কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও উপস্থাপক জিল্লুর রহমান।  তিনি বলেছেন, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সেফ এক্সিট বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। নাম না বলায় অভিযোগ গুরুভার রাজনৈতিকভাবে টিকে আছে। আইনি অর্থে ঝুলে আছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান সরাসরি বলেছেন এ ধরনের দাবি যিনি করেছেন, তাকেই প্রমাণ দিতে হবে তিনি নিজে কোনো এক্সিট খুঁজছেন না, বাংলাদেশেই থাকবেন। প্রায় একই রকমের কথা বলেছেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মর্শিদও। উত্তরাঞ্চল এনসিপি সংগঠক সারজিস আলম আরো কড়া ভাষায় সেফ এক্সিট প্রসঙ্গ রাজনৈতিক মাঠে ছুড়ে দিয়েছেন। সরকারের দায়বদ্ধতার রাজনীতিতে এই কথাগুলো অবধারিতভাবে নতুন চাপ সৃষ্টি করেছে।

বিশেষ করে যখন নির্বাচন ফেব্রুয়ারির ক্যালেন্ডারে ধরা। এখন প্রশ্ন সেফ এক্সিট বিতর্ক কি জুলাই সনদের ট্র্যাক থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে? বাস্তবে তাই। 
 
নিজের ইউনিউব চ্যানেলে দেওয়া এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ন্যায়, পুনর্মিলন ও সংস্কারের যে তিন কোণা রূপরেখা গত এক বছরে গড়ে উঠেছিল, তার কেন্দ্রে ছিল স্বচ্ছতা এবং অংশগ্রহণ। উপদেষ্টাদের নৈতিক অধিকার আসে রাজপথে রক্ত-ঘামে অর্জিত প্রত্যাশা রক্ষার দায় থেকে।

এখানে কোনো পলিটিক্যাল ইনসাইডার খেলা চললে তা অবিশ্বাস তৈরি করবে। তাই দুইদিকেই সমান সতর্কতা দরকার। অভিযোগকারীকে তথ্য প্রমাণ হাজির করতে হবে। অভিযুক্তকে স্বচ্ছতা দেখাতে হবে। নইলে সেফ এক্সিট নিয়ে ন্যারেটিভ যেভাবে মেরুকরণ ঘটায়, তাতে গণভোটের প্রশ্নপত্রের ভাষাই নয়, ভোটারের আস্থা-সাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই প্রেক্ষাপটে কমিশনের কাজ শুধু টেকনিক্যাল ডিজাইন নয়, বিশ্বাসের অবকাঠামো বানানো। 
জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চের নাটক আবারো জমে উঠতে শুরু করেছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে এখন সবচেয়ে বড় অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে। এ কথা কেউ অস্বীকার করবেন না। জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের পাঁচ দফা সংলাপ শেষ হলো। কবে কিভাবে কোন আইনি রাস্তায় গণভোট হবে এ নিয়ে দলগুলোর অনড় অবস্থান অটুটি রয়ে গেল। বিএনপি বলছে জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট, যেন অর্থ-প্রশাসনিক ব্যয় কমে এবং ক্যালেন্ডার পেছায় না।

অন্যদিকে জামায়াত ইসলামী ও এনসিপি চাইছে নির্বাচনের আগে, যাতে সনদের আইনি স্পষ্ট হয়। সংসদের গঠন, ক্ষমতা, ও পরিধি নিয়ে ব্যর্থ না থাকে। কমিশন নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে অধ্যাদেশ বা অর্ডিনেন্স জারি করে গণভোট আয়োজন  এটাই বাস্তবসম্মত পথ হতে পারে। এমনকি দ্বৈত ক্ষমতা প্রথম অধিবেশনে পরবর্তী সংসদের গাঠনিক কনস্টিটিয়েন্ট ক্ষমতা নির্ধারণ নিয়েও ভাবনা চলছে।

এসএস/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইউজিসির নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত Dec 19, 2025
img
সন্ধ্যায় আসবে হাদির মরদেহ Dec 19, 2025
img
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল পাকিস্তান Dec 19, 2025
img
ওসমান হাদির শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়: ফরিদা আখতার Dec 19, 2025
img
বুলডোজার দিয়ে রাজশাহীতে আ.লীগের অফিস গুঁড়িয়ে দিলেন বিক্ষোভকারীরা Dec 19, 2025
img
প্রাপ্য ভালোবাসা মানেই সৃষ্টিকর্তার দয়া: রানী মুখার্জি Dec 19, 2025
img
পত্রিকা অফিসে হামলার তীব্র নিন্দা জানালেন মির্জা ফখরুল Dec 19, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারদর Dec 19, 2025
img
চাপের বিয়েকে অর্থহীন বললেন অভিনেতা অক্ষয় খান্না Dec 19, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান দুর্ঘটনায় সাবেক রেসার গ্রেগ বিফলের মৃত্যু Dec 19, 2025
img
হুমকির ঘটনায় থানায় জিডি করলেন হান্নান মাসউদ Dec 19, 2025
img
দ্রুত বিচার না হলে এনসিপি কঠোর কর্মসূচিতে যাবে : আখতার হোসেন Dec 19, 2025
img
এবার হান্নান মাসউদকে হত্যার হুমকি Dec 19, 2025
img
সম্পর্কের চেয়ে আয়োজন বড় নয়: শ্রুতি হাসান Dec 19, 2025
img
বজ্রপাতে কেঁপে উঠল দুবাইয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন 'বুর্জ খলিফা' Dec 19, 2025
img
গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতার থানায় সেলফি, দুই পুলিশ ক্লোজড Dec 19, 2025
img
টানা ৯ দিন ধরে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রির ঘরে Dec 19, 2025
img
ট্রাম্পের চাপে বিপাকে ভেনেজুয়েলা, বাণিজ্যসহ সব কার্যক্রমে প্রভাব Dec 19, 2025
img
চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন ভবন থেকে সাড়ে ৪ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার Dec 19, 2025
img
আজ ঢাকার আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা থাকতে পারে Dec 19, 2025