জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আরেকটু শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, এ আইনের বিভিন্ন ধারা ও উপধারায় অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। যা ভবিষ্যতে কার্যকারিতা ও প্রশাসনিক সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে। তাই কমিশনকে আরও কার্যকর বা স্বাধীন হতে হবে।
আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ বিষয়ক পরামর্শ সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কমিশনের নানান দিক তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। কিন্তু অ্যাকশন নেওয়ার যে মেকানিজমগুলো আছে, তা গুরুত্ব দিয়ে করার জন্য বা সরাসরি মামলা করতে পারবেন; সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ বা বিধান আইনে রাখা হয়নি।
মানবাধিকার কমিশন আইন খসড়ার ধারা-৫ নিয়ে তিনি বলেন, এ ধারায় বলা হয়েছে কমিশনের মধ্যে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ নারী ও একজন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সদস্য হতে হবে। কিন্তু আধুনিক যুগে নারীকে অনগ্রসর বা অধীনস্ত হিসেবে দেখা ঠিক নয়। এখানে অনেকের সঙ্গে আমার দ্বিমত হবে। তাই কমিশনের সদস্য নির্বাচনে সর্বসম্মত মতামত বা কনসেন্স থাকা উচিত। কারণ আইনে নির্ধারিত বিধান হিসেবে নারী বা নৃগোষ্ঠী সদস্যদের নির্দিষ্ট কোটায় বাধ্যতামূলক রাখলে উপগোষ্ঠী হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে ধারণা জন্ম নিতে পারে। তবে এটা আমরা নিজস্ব ধারণা।
আসাদুজ্জামান বলেন, ধারা-৬ অনুযায়ী কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ ও পদত্যাগের নিয়ম নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু এ ধরনের উচ্চপদস্থ পদে আবেদন জমা নেওয়ার পদ্ধতি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। মানবাধিকারে কাজ করা স্বাধীনচেতা ও নীতিবান ব্যক্তি কি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন কিনা এটি পুনর্বিবেচনার বিষয়। এছাড়া উপধারা (৫) অনুযায়ী কমিশনের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণের প্রক্রিয়া স্পষ্ট নয়। এটি আরও পরিষ্কার হওয়া দরকার। ধারা ১৩ অনুযায়ী কমিশনের কার্যাবলীতে গবেষণা ও সুপারিশের কথা থাকলেও প্রোঅ্যাকটিভ মামলা দায়েরের ক্ষমতাও স্পষ্ট নয়। তাই সবকিছু বিবেচনা করে মানবাধিকার কমিশনকে আরেকটু শক্তিশালী করা দরকার।
ধারা-১৬ ও ধারা ১৯(১) নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ধারা ১৬ অনুযায়ী এক বা একাধিক ব্যক্তিকে মধ্যস্থ সমঝোতার জন্য নিয়োগ করতে পারবে কমিশন। কিন্তু কমিশন নিজেই একটি স্বাধীন সংস্থা। যদি এখানে আলাদা মিডিয়েটর নিয়োগ বা তাদের কাছ থেকে প্রতিবেদন নেওয়া হয়, তাহলে কমিশনের ক্ষমতা ও মিডিয়েটরের ক্ষমতার মধ্যে বিরোধ দেখা দিতে পারে। এছাড়া ক্ষতিপূরণ বা জরিমানা প্রদানের নির্দেশনা কমিশন করবে, নাকি মিডিয়েটর—এ নিয়েও আইনে স্পষ্টতা নেই। এসব বিষয় আরেকটু বিবেচনা করা দরকার। ধারা ১৯(১) এর ‘গ’ অনুযায়ী বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তলব করতে পারবে কমিশন। যদি কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে চলে যায়, তখন তাকে কি না ডেকেই এক্সনারেট (দায়মুক্ত) করে দেওয়া হবে; এটিও স্পষ্ট নয়। এসব ধারা-উপধারার আইনি অস্পষ্টতা দূর না করলে কমিশনের কার্যকারিতা সীমিত হয়ে যাবে।
পিএ/এসএন