মেহেরপুর সদরে সরকারি প্রণোদনার বিনামূল্যের পেঁয়াজ বীজ ক্রয় ও বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সময়মতো বীজ সরবরাহ করতে না পারায় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা খাত থেকে খরিপ-১ মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ প্রণোদনা প্রকল্পে ১০ হাজার কৃষকের জন্য বরাদ্দ ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ওই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক কৃষক এক বিঘা জমির জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ ১ কেজি, ২০ কেজি ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি), ২০ কেজি মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) এবং ১ কেজি বালাইনাশক পাবেন। জেলা সদর থেকে দূরত্ব অনুযায়ী পরিবহন ব্যয় জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটি উপজেলাওয়ারি বিভাজন ও বরাদ্দ দেবে। কোনো অবস্থাতেই কর্মসূচির বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা যাবে না। জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক বরাদ্দকৃত সব অর্থ উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অনুকূলে ছাড় করতে হবে। ছাড়কৃত অর্থ ব্যয়সহ এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতেই কৃষকদের হাতে পেঁয়াজ বীজ তুলে দিতে ডিপিএম পদ্ধতি অর্থাৎ সরাসরি বীজ ক্রয়ের আদেশ দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। সরাসরি বীজ ক্রয়ের নির্দেশনা পেয়ে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিম্নমানের বীজ ক্রয় করেন। বীজের অঙ্কুরোদ্গমের হার ছিল ৫৫ শতাংশ। নিম্নমানের বীজ ক্রয়ের বিষয় একপর্যায়ে জেলা প্রশাসন জানতে পারে। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা কৃষি কার্যালয় রাতের অন্ধকারে সরকারি গুদাম থেকে নিম্নমানের পেঁয়াজ বীজ সরিয়ে ফেলে। পরে নতুন করে বঙ্গ এগ্রোটেক নামের একটি কৃষিপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান থেকে চার হাজার কেজি পেঁয়াজবীজ কেনা হয়। বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা করে ৬১ শতাংশ পাওয়া যায়। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা থাকতে হবে ৮০ শতাংশ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের কৃষক বোরহান উদ্দিন গত মৌসুমে প্রণোদনার বীজ না পাওয়ায় পেঁয়াজ আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েন। তার মতো তিন উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বোরহান উদ্দিন জানান, সময়মতো বীজ দেওয়া হয়নি। সময় পার হওয়ার পর দিলে তো কাজ হবে না। বীজের মানও ভালো না। এভাবে প্রতিবছর প্রতারণার শিকার হলে কৃষকেরা সর্বস্বান্ত হবেন।
পেঁয়াজ বীজ মূল্যায়ন ও রিসিভ কমিটির সদস্য সাইদুর রহমান জানান, বীজ যাচাইবাছাই কমিটির সদস্য হিসেবে থাকলেও কোন পদ্ধতিতে বীজ কেনা হবে, কার কাছ থেকে কেনা হয়েছে, কোন প্রক্রিয়ায় বিতরণ করতে হবে, তার কিছুই জানেন না তিনি। কমিটির অন্য সদস্য পল্লি উন্নয়ন কর্মকর্তা রকিবুল ইসলামও জানান একই কথা।
বীজ যাচাইবাছাই জেলা কমিটির সদস্য জাহান আল মাহমুদ জানান, তাদের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। তাদের কাজ ছিল বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা ও উৎপাদন ক্ষমতা যাচাইবাছাই করা। কিন্তু তাদের এ কমিটির একটি বৈঠকও হয়নি। তবে তাদের জানানো হয়েছে, একটি কোম্পানির বীজ খারাপ হওয়ায় তা ফেরত দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় চুক্তি কার সঙ্গে করা হয়েছে, কীভাবে করা হয়েছে তার কিছুই তারা জানেন না।
বীজ কিনতে কেন দেরি হলো তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।’ একই কথা জানান, ‘ওই কমিটির সদস্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শায়খুল ইসলাম।’
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পেঁয়াজ বীজ ক্রয় ও বিতরণ করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দেখবে। কোনো অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল আলম জানান, বীজ কেনা, দেরি হওয়া বা নিম্নমানের বীজ কেনার ব্যাপারে কিছুই জানেন না তিনি। কারণ বীজ কেনার দায়িত্ব ছিল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবং মূল্যায়ন ও রিসিভি কমিটির ওপর। সেটা যাচাইবাছাই করার দায়িত্ব ছিল বীজ যাচাইবাছাই কমিটির।
টিজে/এসএন