শেখ হাসিনাসহ গুম-খুনের নির্দেশদাতাদের বিচার দাবি ডাকসুর

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ‘নির্দেশদাতা’ শেখ হাসিনা এবং এতে জড়িত সামরিক, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

শনিবার (১১ অক্টোবর) ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) মুহা. মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক যৌথ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনামল। সেই সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত গুম, খুন, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। গুম কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ১৮০০-এর অধিক গুমের অভিযোগ জমা পড়েছে। যার শিকার হয়েছেন সাধারণ নাগরিক, শিক্ষার্থী, নারী, শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। এমনকি শিশুরাও এই নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী এই গুম ও খুনের শিকার হয়েছে। তাদের অনেককে রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে আটক, নির্যাতন ও গুম করা হয়েছে। এখনও অনেক শিক্ষার্থী ও ছাত্র নেতার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে সেটিও আমরা জানি না। গুম কমিশনের প্রতিবেদনে আরও উদ্বেগজনকভাবে উঠে এসেছে যে গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি পার্শ্ববর্তী দেশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল। এই বিষয়টি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি এক গভীর হুমকি।

ডাকসু বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, এই গুম-খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শুধু শেখ হাসিনা ও তার রাজনৈতিক মহল দায়ী নয়, বরং ডিজিএফআই, র‍্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও সরাসরি জড়িত ছিলেন। ‘আয়নাঘর’ সহ গোপন বন্দিশালায় পরিচালিত অমানবিক নির্যাতন লজ্জাজনক ও নিন্দনীয়। রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে অসংখ্য নাগরিককে জোরপূর্বক গুম করে ফেলা, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং তাদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে প্রচার করা ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের একটি পরিকল্পিত কৌশল।

নেতারা জানান, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে গুম, গোপন আটক ও নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পদক্ষেপ গুম ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের দীর্ঘ দিনের বেদনা-বিক্ষোভে কিছুটা আশার আলো জাগিয়েছে। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়।

গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা ও তার ফ্যাসিবাদী প্রশাসনের সকল সদস্যের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ডিজিএফআই, র‍্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব কর্মকর্তা এই অপরাধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। গুম কমিশনের তদন্তকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে পরিচালনা করতে হবে যাতে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পায়। চিহ্নিত অপরাধীদের ‘সেইফ এক্সিট’ বা দায়মুক্তি দেওয়ার যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ সোচ্চার থাকবে।

নেতারা বলেন, দেশে সত্যিকার ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের আস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে পারবে না। অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে এই সংস্থাগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে না বরং গণমুখী ও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরো দৃঢ় হবে।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বিছানায় না গেলে পুরুষ বাউলরা প্রোগ্রামে ডাকে না: হাসিনা সরকার Nov 25, 2025
img
রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আহত ১৫ Nov 25, 2025
img
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন গতি আনতে চায় ফ্রান্স : রাষ্ট্রদূত Nov 25, 2025
img
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিলেন সানাই Nov 25, 2025
img
ফের বড় দুঃসংবাদ পেল ভারত Nov 25, 2025
img
কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ১৯ ইউনিট Nov 25, 2025
img
সিলেটে ৮ দলের মহাসমাবেশের ঘোষণা Nov 25, 2025
img
বাউল শিল্পী আবুলের বিষয়ে এনসিপির ফের বিবৃতি Nov 25, 2025
img
ভারতে ম্যারাডোনাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিগ বাজেটের সিরিজ Nov 25, 2025
img
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ Nov 25, 2025
img
আমরা তো এভাবে খেলেই এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি: আফঈদা খন্দকার Nov 25, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে যেকোনো দিনে তফসিল ঘোষণা Nov 25, 2025
img
হৃদরোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার আগে কেমন ছিলেন স্মৃতির বাবা? Nov 25, 2025
img
বিদেশি স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা, কত খোরপোশ চাইলেন অভিনেত্রী? Nov 25, 2025
img
বিনিয়োগ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেলো আইসিবি Nov 25, 2025
img
বিচ্ছেদের এক বছরের মধ্যে নতুন সম্পর্কে জড়ালেন আরিফিন শুভ! Nov 25, 2025
img
ধর্মেন্দ্রকে ভালোবেসে ছেলের নামই বদলে দিল পরিবার Nov 25, 2025
img
স্মৃতির মতো একই কায়দায় আর কাকে প্রেমপ্রস্তাব দেন পলাশ? Nov 25, 2025
img
এখন সাইবার স্পেসেও নারীদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে : শারমীন মুরশিদ Nov 25, 2025
img
২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সূচি প্রকাশ Nov 25, 2025