স্ত্রী সাবিকুন্নাহারের অভিযোগ অস্বীকার করলেন ইসলামী বক্তা আবু ত্বহা মোহাম্মদ আদনান। এক ফেসবুক পোস্টে জানালেন— কোনো পরনারীর সঙ্গে তার হারাম সম্পর্ক নেই।
সোমবার আলোচিত এই ইসলামী বক্তা বলেন, কাবার রবের শপথ! আমি যিনাকার নই! মুহাম্মদের রবের কসম! আমি ব্যভিচারী নই! যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, তারা আমাকে যত অপবাদ দিয়েছে তা থেকে আমি মুক্ত! কোনো পরনারীর সাথে আমার কোনো প্রকার হারাম সম্পর্ক নেই।
শুরুতেই ত্বহা বলেন, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের জন্য মহব্বতের পবিত্র পোশাক, পোশাকের কাজই সতর ঢেকে রাখা, যদিও তা ক্ষতবিক্ষত হয়! স্বামী হিসেবে আমি সেটাই আজীবন করে গেছি, আজও করছি।
কারণ আজও আমি তার স্বামী! আর আগামীকাল যদি আমি সে পোশাক না থাকি, তবুও সেই দেহ সম্পর্কে আমি কোনো বাজে মন্তব্য করব না, যার জিম্মাদার আমি নই!
অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে আবু ত্বহা বলেন, আমার দ্বিন আমাকে তা-ই শিখিয়েছে! আল্লাহর কসম! আমি তাদের প্রতিটি অপবাদ ও মিথ্যাচারের লাইন ধরে ধরে জবাব দিতে সক্ষম, হুজ্জাতসহ বিগত বছরগুলোর একেকটা জুলুমের ফিরিস্তি লিখতে, বলতে ও জানাতে সক্ষম। আমি করিনি। আর করবও না। করেও আপাতদৃষ্টিতে কোনো লাভও নেই।
কারণ সমাজে ইউসুফের ভাইদের চোখের পানির দামটাই অনেক বেশি! বরং আমি চাই সেই জবাব, যা মহান আল্লাহ আল জাব্বার স্বয়ং দেন। নিশ্চয়ই ক্ষমা করা বা শাস্তি দেওয়া শুধুই এক আল্লাহর এখতিয়ার। দুটোর ওজনই অসীম! ভুল সত্তায় অন্ধ ভালোবাসার উপযুক্ত প্রতিদান বেশাক আমার প্রাপ্য ছিল! আমি এরই যোগ্য ছিলাম! পেয়েছি। মেনেও নিয়েছি! তবে আল্লাহর কসম, আর না!
পরনারীর সাথে সম্পর্ক নেই জানিয়ে আলোচিত এই বক্তা বলেন, হে আমার জাতি! শুধু এতটুকু বলতে চাই! আরশের মালিকের কসম! আমাকে গুছিয়ে একের পর এক মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে! কাবার রবের শপথ! আমি যিনাকার নই!!! মুহাম্মাদের রবের কসম! আমি ব্যভিচারী নই! যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম, তারা আমাকে যত অপবাদ দিয়েছে তা থেকে আমি মুক্ত! কোনো পরনারীর সাথে আমার কোনো প্রকার হারাম সম্পর্ক নেই।
হুজ্জাত ছাড়াই নিজেদের গুনাহের পাল্লা ভারী করো না! কাউকে জিনার অপবাদ দেওয়ার শাস্তি ৮০টা বেত্রাঘাত! চোখ বুজে গেলেই একেকটা শব্দের হিসাব রবের সামনে বুঝিয়ে দিতে হবে— এটা ভুলে যেয়ো না!
সাবিকুন্নাহারের প্রতি প্রশ্ন রেখে ত্বহা বলেন, আমার দোষ ভুল সত্তায় মাত্রাতিরিক্ত মহব্বত, উভয় পরিবারের মাঝে সুন্নাহসম্মত ইনসাফ করতে চাওয়া, ক্ষমার ওপরে ক্ষমা ও সবরের ওপরে সবর করতে থাকা! দিনের পর দিন ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিজের প্রয়োজন ও মানসিক প্রশান্তির আশায় সুলাসা করতে চাওয়া! যাতে আমার প্রথম স্ত্রী, মা কিংবা বোন সবাই সম্মত ছিল! যা শরিয়তে হালাল তাতে যদি কেউ সম্মত না থাকত, তবে সে ঘরে বসে উত্তম বিচ্ছেদ (সারহান জামিলায়) চলে যেতে পারত! অতীত টেনে সম্পর্ক, স্বামী, সম্মান ও দ্বিনকে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করত না!
আর সত্যি বলতে যার চোখে আমি এতটাই ‘চরিত্রহীন’ হয়ে থাকি, তবে কেনই বা সে আমার মতো অপবিত্র! মানুষের সাথে সম্পর্ক রেখেছে বা রাখবে? কোন স্বার্থে?
সমাধানের পথে হাঁটছেন জানিয়ে ত্বহা বলেন, আর যারা পরতে পরতে অপবাদ দিয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এক আল্লাহই যথেষ্ট হবেন ইনশাআল্লাহ! ফা সবরুন জামিল! আমি বিষয়টি দেশের বরেণ্য মুরব্বি ওলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে শরিয়াসম্মতভাবে যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া মেনে সমাধানের পথে হাঁটছি! যারা ছেড়ে গেছেন, যেতে পারেন। যারা সাথে ছিলেন, তাদের বলব- যদি ভবিষ্যতে প্রিয় মানুষদের দ্বারা আরও কোনো ইলজাম, হেনস্তা বা মিথ্যা মামলার শিকার হই (যার আশঙ্কা উড়িয়ে দিই না) অন্তত আপনাদের দুয়ারে আমাকে শামিল রাখবেন!
আবু ত্বহা আদনান বলেন, আল্লাহর কসম, আমি নবী ইউসুফ কিংবা মা আয়েশা তো নই! তবে তারা আমাকে যিনা ও ব্যভিচারের যে মিথ্যা তহমত দিয়ে গেছে তার সাথে আমার দূর-দূরান্তের কোনো সম্পর্ক নেই! অনুগ্রহ করে যখন আমি কোনো দেহের পোশাক থাকব না তখন সেই দেহের ব্যাপারে আমাকে, আমার পরিবার ও দ্বিনকে জড়িয়ে অনলাইন গরম করে আপনারা নিজেদের গুনাহ বাড়াতে যাবেন না! আমাদের সবার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য এটাই হবে উত্তম অবস্থান! কোটি মানুষের শহরে আমার দুটি সন্তান আছে! দোয়া করবেন, তাদের বাবা যেন তাদের থেকে মাহরুম না হন! তারাও বাবার বুকের উষ্ণতা থেকে বঞ্চিত না হয়! আল্লাহর কসম! তারা আমার কাছে অনেক বেশিই প্রিয়! অনেক ভালোবাসার! যাদের মুখের দিকে তাকিয়েই বছরের পর বছর সবর করে গেছি! আমার হুরপরি আইশাহ! আমার ‘ইউসুফ’ কলিজার টুকরা উসমান!
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার আর কিছুই বলার নেই! আমার সেই হালতও আর অবশিষ্ট নেই! এত বড় ক্ষতি করার পরেও আমি আমার জায়গা থেকে সাধ্যের শেষটুকু করেছি! হয়তো এটাই তাক্বদিরের ফয়সালা! হয়তো কিছু বিচ্ছেদেই শান্তি থাকে, আর নিশ্চয়ই কষ্টের পরেই স্বস্তি থাকে! আল্লাহ পাক যেন দুনিয়া ও আখিরাতে জালেম ও মজলুমের মাঝে উত্তম ফয়সালা করে দেন।
আমিন।
আইকে/এসএন