হাবিবুরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য ২৩ অক্টোবর

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী এলাকায় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দুজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগামী ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

রামপুরার মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের দিন নির্ধারিত ছিল আজ। তবে প্রসিকিউশনের পক্ষে আরও এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। পরে আগামী ২৩ অক্টোবর দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের কথা ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। এরপর শুরু হতো সাক্ষ্যগ্রহণ।

ওই দিন এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান। আসামিকে অভিযোগ পড়ে শোনান তিনি। এরপর নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আসামি চঞ্চল।

শুনানি শেষে অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

১৬ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি এ মামলা থেকে নিজের মক্কেলদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। এছাড়া আজ সকালেও এ মামলায় রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।

হাবিবুর ছাড়া বাকি তিন আসামি হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পক্ষে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি।

ওই সময় পুলিশও তার পিছু পিছু যায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির। কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার ওপর ছয়টি গুলি ছোড়েন এক পুলিশ সদস্য। এতে তিন তলায় পড়ে গেলে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করেন। এরপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ।

এছাড়া একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একইসঙ্গে মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলে এখনও কথা বলতে পারছে না এই শিশু।

গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ।


আইকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে নেপালের রাষ্ট্রদূতের বৈঠক Oct 16, 2025
img
নোয়াখালী বিভাগ দাবিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও Oct 16, 2025
img
ডাকসু-জাকসু-চাকসুর প্রতিচ্ছবি আগামীতেও জাতি দেখবে : জামায়াত আমির Oct 16, 2025
img
নির্বাচন বিলম্ব হলে জনগণ সহ্য করবে না : শামসুজ্জামান দুদু Oct 16, 2025
img
দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান হওয়ার গল্প Oct 16, 2025
img
রাকসু নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের অবস্থান, উত্তেজনার শঙ্কা Oct 16, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের রপ্তানিতে ব্যাপক ধস Oct 16, 2025
img
ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশ দলে নতুন মুখ Oct 16, 2025
img
জুলাই সনদে সাইন না হওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে : জাহেদ উর রহমান Oct 16, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৭৫৫ ডেঙ্গু রোগী Oct 16, 2025
img

জেরায় আসিফ মাহমুদ

জুলাই আন্দোলনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ কেউ ছিল না Oct 16, 2025
img

মির্জা ফখরুল

ক্ষমতায় গেলে পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করবে বিএনপি Oct 16, 2025
img
ভিকারুননিসায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে Oct 16, 2025
img
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ, আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন সোমবার Oct 16, 2025
img
প্রখ্যাত অভিনেত্রী মধুমতি আর নেই Oct 16, 2025
img
বিএনপি কৃষকদের হাতকে শক্তিশালী করবে : তারেক রহমান Oct 16, 2025
img
ফেসবুক লাইভে কান্নায় ভেঙে পড়লেন হিরো আলমের স্ত্রী রিয়ামনি Oct 16, 2025
img
নতুন ভূমিকায় দীপিকার কণ্ঠে সাড়া দেবে মেটা এআই! Oct 16, 2025
img
ভারতের জন্য আকাশপথ খুলছে না পাকিস্তান Oct 16, 2025
img
রাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন Oct 16, 2025