রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আমরা এভাবে যদি চিন্তা করি, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নিল এবং একটাও সংস্কার কমিশন তৈরি হলো না, কোনো সংস্কার হলো না, কোনো ঐকমত্য কমিশন না, কিছুই না, তাহলে কী হতো, তার কাজ কী ছিল? একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন এ ধরনের পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়, তার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ যেহেতু কনস্টিটিউশনালি একটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাকে তুলে দিয়ে যাওয়া।’
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) নিজ ইউটিউব চ্যানেলে এক ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. জাহেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, তিনি দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাকে নষ্ট করেছেন। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ হচ্ছে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ট্রাকে দেশকে তুলে দিয়ে যাওয়া। পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মধ্যে ইন্টারেকশনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সব ঠিক করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন কিছু সংস্কারের কথা হলো। কিছু সংস্কার করতে পারলে ভালো, জরুরিও। কিন্তু যদি না হয়, তাহলে কী হবে? এই সরকার কি তাহলে নির্বাচন না দিয়ে বসে থাকবে? আমরা এভাবে যদি চিন্তা করি, রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করল না। এই রাগে-ক্ষোভে কি তারা নির্বাচন থেকে দূরে থাকবেন?’
রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন নির্বাচনে যদি তারা না যান এবং সেটার কারণে যদি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে, নির্বাচন যদি না-ই হয়, পিছিয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি হয়, দেশে যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি হবে সেটার দায় কি তারা নেবেন? দায় তাদের নিতে হবে।’
জাহেদ উর রহমান বলেন, “একটা কথা মনে রাখব, যারা সংস্কার নিজেদের ইচ্ছেমতো হয়নি বলে নির্বাচনে যাচ্ছেন না, তারা আদতে দেশটাকে আনস্টেবল করে ফেলার পদক্ষেপের মধ্যে ঢুকছেন। বরং তারা এটা করতে পারতেন, একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের সামনে দেখাতে পারতেন যে, ‘আমি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ, এই জিনিসগুলো (ইচ্ছেমতো সংস্কার) হয়নি বলে এবং আমি মনে করি এই জিনিসগুলো না হলে আদতে তেমন কিছুই হবে না। এত কিছুর পরও আমি জাতির স্বার্থে, দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্বাচনে যাচ্ছি।’ এটা দেখানো। এর মাধ্যমে তারা জনগণের সঙ্গে বেটার কমিউনিকেট করতে পারে।”
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখা দরকার, জুলাই সনদের সঙ্গে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোনোভাবেই রিলেটেড না। শেখ হাসিনার সময়েও মোটা দাগে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল। সেটা সংবিধানের সমস্যা ছিল, গণতান্ত্রিক উপাদানের সমস্যা ছিল যে সংবিধানের মধ্যেই দেশে একটা অথরিটারিয়ানিজম মাথাচাড়া দিতে পারে, সেই অব্যবস্থার সুযোগ ছিল। এগুলো ভুল না। কিন্তু আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই ছিলাম। যেকোনো বিবেচনায়।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সনদ স্বাক্ষরিত হবে। আমি জাস্ট তাত্ত্বিকভাবে কথাগুলো বললাম। কারণ এই ধরনের একটা ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা হয়তো হচ্ছে, এতেও সমস্যা নেই। রাজনীতিতে চাপ প্রয়োগ হতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত সবাই এই স্বাক্ষর করবেন। যে অবস্থায় আছে, নোট অব ডিসেন্টসহই করবেন। আর খুব ভালো হয়, যদি আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের একটা পদ্ধতি ঠিক করা যায়।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করলে কী হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি স্বাক্ষর নাও করে, তারা নির্বাচনে যাবেন। কারণ আমি মনে করি নির্বাচনে না গিয়ে দেশকে আনস্টেবল করে ফেলার যে দায়, যে ঝুঁকি আছে, সেটার দায় বা অপরাধ কোনো দল নিতে চাইবে বলে আমার মনে হয় না। সুতরাং যদি সেটা সবাই স্বাক্ষর না-ও করেন, বিশেষ করে মেজর দলগুলোর কেউ, তা-ও নির্বাচন অনিশ্চিত হবে বলে আমার মনে হয় না।’
গণভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গণভোট আগে হবে, না নির্বাচনের দিন হবে-এই দুটির মধ্যে আসলে ইম্প্যাক্টগত কোনো পার্থক্য নেই। লজিস্টিক্যাল কিছু এদিক সেদিক হতে পারে, কিন্তু না। এগুলো ইস্যু করা হচ্ছে, আবারো বলছি এগুলো রাজনীতি।’
কেএন/টিএ