সোনা রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আউন্সপ্রতি সোনার দাম ইতিহাস গড়ে ৪ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়েছে; যা ২০০৮ সালের পর সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক উত্থান বলে জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে সোনার দাম শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৩৩২ দশমিক ১৭ ডলারে দাঁড়ায়। এর আগে দাম সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৬৯ ডলারে উঠেছিল।
ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে সোনা ফিউচারসের দাম ১ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪ হাজার ৩৪৫ দশমিক ৯০ ডলারে লেনদেন হয়। চলতি সপ্তাহে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ যা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের সময়ের পর সর্বোচ্চ সাপ্তাহিক বৃদ্ধি। জার্মানির হেরাউস মেটালসের মূল্যবান ধাতু ব্যবসায়ী আলেকজান্ডার জুম্ফে বলেন, ‘সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং ব্যাংক খাতের উদ্বেগ সোনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। তবে সাময়িকভাবে কিছুটা স্থিতি দেখা দিতে পারে।
প্রযুক্তিগত সূচকে দেখা গেছে, সোনার রিলেটিভ স্ট্রেংথ ইনডেক্স (আরএসআই) এখন ৮৮ যা ইঙ্গিত দেয়, দাম বর্তমানে অতিরিক্ত ক্রয় অঞ্চলে রয়েছে। অন্যদিকে, স্পট মার্কেটে রূপার দাম শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ৫৪ ডলারে নেমেছে। এর আগে এটি ৫৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠে ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছিল। তবু সপ্তাহজুড়ে রূপার দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোর শেয়ারে বড় ধস নামায় বিশ্ব শেয়ারবাজারে চাপ পড়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ থেকে সরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালার আরও এক দফা সুদের হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ফেড ২৯-৩০ অক্টোবরের বৈঠকে ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমাতে পারে এবং ডিসেম্বরেও আরো এক দফা হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, চীন বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘অযথা আতঙ্ক সৃষ্টির’ অভিযোগ তুলেছে এবং রপ্তানি সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়ার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় বৃদ্ধি, ডি-ডলারাইজেশন প্রবণতা এবং এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ) প্রবাহই এই ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ।
সোসিয়েত জেনেরালের পণ্য গবেষণা বিভাগের প্রধান মাইকেল হেইগ বলেন, ‘ইটিএফ প্রবাহই এখন বাজারে সোনার দাম বাড়ার প্রধান চালিকা শক্তি।’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোনাভিত্তিক ইটিএফ ‘এসপিডিআর গোল্ড ট্রাস্ট’ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের মজুত বেড়ে ১ হাজার ৩৪ দশমিক ৬২ টনে দাঁড়িয়েছে যা জুলাই ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি তাদের ২০২৫ সালের গড় সোনা মূল্যপ্রত্যাশা ১০০ ডলার বাড়িয়ে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪৫৫ ডলার করেছে। ব্যাংকটির পূর্বাভাস, ২০২৬ সালে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে। অন্য মূল্যবান ধাতুর মধ্যে প্লাটিনামের দাম ৪ শতাংশ কমে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৭৫ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২.২ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫৭৮ দশমিক ০৭ ডলারে নেমেছে।
দেশে বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। ২১ ক্যারেটের ভরি ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ভরি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকা। রুপার বাজারেও রেকর্ড দেখা গেছে। দেশে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০৫ টাকায় যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২১ ক্যারেটের ভরি ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ভরি ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির ভরি ৩ হাজার ৮০২ টাকা।
সূত্র : রয়টার্স
এসএস/টিএ