তিস্তা প্রকল্পের দাবিতে নেওয়া কর্মসূচিটি খুবই ব্রিলিয়ান্ট : জাহেদ উর রহমান

উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলার তিস্তাপাড়ের মানুষ সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন, যার মূল দাবি ছিল তিস্তা নদী ঘিরে একটি টেকসই মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন।

রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধার মানুষ এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে অংশ নিয়েছেন। এই কর্মসূচির আয়োজক ছিল তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এই কর্মসূচিকে খুবই ব্রিলিয়ান্ট বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।

নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এসে এ বিষয়ে তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, এটি বিএনপি সমর্থিত একটি রাজনৈতিক উদ্যোগ হলেও, এটিকে নিছক রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। কারণ এটি জনগণের প্রকৃত সমস্যা ও দীর্ঘদিনের একটি পানিসংকটকে কেন্দ্র করেই সংগঠিত হয়েছে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, গত ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি তিস্তার দুই তীরে ১১টি পয়েন্টে লক্ষাধিক মানুষ একযোগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ৯ অক্টোবর উপজেলা শহরগুলোতে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। দাবির মূল কথা ছিল, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে হবে। এই আন্দোলনের ভূমিকায় একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে, সরকার ইতিমধ্যেই ২৪৫০ কোটি টাকা প্রথম ধাপের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে গতি আসছে না কেন।

তিনি বলেন, তিস্তা শুধু একটি নদী নয়; এই অঞ্চলের কৃষি, পরিবেশ, সেচ, মাছ চাষ, পানির স্তর, ভূগর্ভস্থ পানির ভারসাম্য, এমনকি পরিবহনের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে তিস্তার বেড শুকিয়ে যায়, আবার বর্ষায় হঠাৎ পানি ছাড়লে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ বন্যা ও নদীভাঙন। ভারত কখনোই তিস্তা নিয়ে চুক্তি বাস্তবায়ন করেনি। ২০১১ সালের যেই তিস্তা চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটি ছিল পানি ভাগাভাগির নামে এক ধরনের প্রতারণা।

যেখানে গজলডোবার ব্যারাজে যে পানি পৌঁছাবে, শুধু সেটিই ভাগ করা হবে। অথচ তার আগেই সিকিম ও অন্যান্য পয়েন্টে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কাজেই চুক্তি হলেও বাস্তবে বাংলাদেশ তেমন কিছু পায় না। ভারতের অনাগ্রহের পেছনে একটি ভূরাজনৈতিক বিষয় রয়েছে। তিস্তা প্রকল্প যেখানে বাস্তবায়ন হওয়ার কথা, সেটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছেই। এই করিডর ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত করে। চীন যদি এই এলাকায় ঘাঁটি গড়ে তোলে বা প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়, ভারত সেটিকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে। এ জন্য ভারত চায় না তিস্তা প্রকল্প চীনের অর্থায়নে হোক।

তিনি আরো বলেন, ভারতের সাহায্য নেওয়া মানেই প্রকল্প ঝুলে থাকবে। তাই বাংলাদেশের উচিত হবে নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা প্রকল্প এগিয়ে নেওয়া। কারণ ভারত আমাদের পানি দেয় না, প্রকল্পও করতে দেবে না, এটা অগ্রহণযোগ্য। আমাদের বার্তা হওয়া উচিত, আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করছি না, কিন্তু নিজের দেশের প্রয়োজন মেটাতে আমরা পদক্ষেপ নেব।

তিনি বলেন, এই কর্মসূচিটা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত বিএনপির। এটা রাজনৈতিক ইস্যু হিসেবে বিএনপি ব্যবহার করুক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাজই হচ্ছে জনকল্যাণের ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করা। যদি সেই রাজনীতির ফলে জনগণের জীবনমান উন্নত হয়, তবে সেটা ইতিবাচক। এর মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়। সুতরাং বিএনপি এ ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতেই পারে তাতে আপত্তি নেই। এই কর্মসূচিটার সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদেরও সংহতি প্রকাশ করা জরুরি।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বড়দিনের আগেই সেনাসদস্যরা পাবেন বোনাস চেক- ঘোষণা ট্রাম্পের Dec 18, 2025
img
বাতাস অস্বাস্থ্যকর, বছরে প্রাণ হারাচ্ছে ১০ লাখ মানুষ : বিশ্বব্যাংক Dec 18, 2025
img
‘আমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু’ -সহযোদ্ধাকে জানিয়েছিলেন রুমী Dec 18, 2025
img
শেখ হাসিনা ও ১২ সেনা কর্মকর্তার বিচার শুরুর আদেশ ট্রাইব্যুনালের Dec 18, 2025
img
২০২৯ সাল থেকে অস্কার সরাসরি সম্প্রচার করবে ইউটিউব Dec 18, 2025
img
পিঠখোলা গাউনে রেড কার্পেট মাতালেন অনন্যা Dec 18, 2025
img
ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী হবেন মেঘনা আলম Dec 18, 2025
img
বাড়ছে মোবাইল-ইন্টারনেট, কমছে টেলিভিশনের দাপট Dec 18, 2025
img
শুটার ফয়সালকে নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য দিলেন তার মা-বাবা Dec 18, 2025
img
সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, ৫ কিলোমিটার যানজট Dec 18, 2025
img

প্রধান বিচারপতি

সংবিধান বাতিল করা জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল না Dec 18, 2025
img
মেসির সঙ্গে আরো এক মৌসুম কাটাবেন লুইস সুয়ারেজ Dec 18, 2025
img
আজ বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস Dec 18, 2025
img
হত্যা মামলায় সুব্রত বাইনের মেয়ের ৫ দিনের রিমান্ড Dec 18, 2025
img
চিৎকারের চেয়ে নীরবতা অনেক বেশি জোরালো: শাকিব খান Dec 18, 2025
img

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন

খালেদা জিয়ার অবস্থা আগের মতো, গ্রহণ করতে পারছেন চিকিৎসা Dec 18, 2025
img
পাখির মাধ্যমে আমাদের আলাপ শুরু হয়েছিল : প্রিয়াঙ্কা Dec 18, 2025
img
নভেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮৩ জন Dec 18, 2025
img
ফেনীতে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয়ে আগুন Dec 18, 2025
img
ন্যায় বিচারের শেষ আশ্রয়স্থল সুপ্রিম কোর্ট: প্রধান বিচারপতি Dec 18, 2025