জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে ইতিহাস গড়ল এনসিপি : রনি

সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ‘জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যারা জুলাই সনদ নিয়ে এত উচ্ছ্বসিত ছিলেন, তাদের এখন দেখা উচিত-যাদের জন্য এই সনদ, সেই জুলাই যোদ্ধারাই এতে স্বাক্ষর করেনি।’

শনিবার (১৮ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গোলাম মাওলা রনি এসব কথা বলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, গতকাল শুক্রবার উৎসবমুখর পরিবেশে ঢাকায় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।

অনুষ্ঠানে দলগুলো একে অপরের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তারা এমন আনুগত্য দেখিয়েছেন, যা বাস্তবিক অর্থে বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধার সীমা ছাড়িয়েছে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো-যাদের জন্য এই সনদ, সেই এনসিপি বা জুলাই যোদ্ধারা এতে যোগই দেয়নি।

তিনি বলেন, এনসিপিকে একসময় বলা হতো ‘রাজকীয় দল’ বা ‘কিংস পার্টি’।

আর রাজা ছিলেন ড. ইউনূস। তিনি (ড. ইউনূস) নিজেই বলতেন, জনগণ-বিশেষ করে তরুণরা ও বিপ্লবীরা তাকে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু আজ সেই সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে গেছে।

গোলাম মাওলা রনি আরো বলেন, একসময় ড. ইউনূস জুলাই বিপ্লবের নায়কদের নিয়ে গর্ব করতেন, বিদেশে নিয়ে গিয়ে ক্লিনটনসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দিতেন।

তাদের হাতে তিনি রাষ্ট্রের প্রোটোকল দিয়েছেন, মন্ত্রী বানিয়েছেন, মর্যাদা দিয়েছেন, রাজভান্ডার খুলে দিয়েছেন। কিন্তু আজ সেই বিপ্লবীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই বললেই চলে। এনসিপির নেতারা—নাহিদ, সারজিস, মাহফুজ,আসিফ মাহমুদ, নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, আখতারসহ অনেকেই এখন সরকারের সমালোচক। তারা অভিযোগ করছেন, সরকার এখন মূলত ‘সেফ এক্সিট’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যস্ত, যেখানে দেশের জনগণের স্বার্থ তেমন কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না।

রনি মনে করেন, এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করে একটি দায়িত্বশীল ও নৈতিক অবস্থান নিয়েছে।

তারা যেভাবে ঘোষণা দিয়েছিল-স্বাক্ষর করবে না তাতে তারা অন্তত নিজেদের মেরুদণ্ড দেখাতে পেরেছে।

তিনি বলেন, এনসিপির নেতাদের বক্তব্যের বেশিরভাগই যুক্তিসঙ্গত। নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী কক্সবাজারে সালাউদ্দিন সম্পর্কে যেভাবে কথা বলেছেন, আখতার বা নাহিদ যে মন্তব্যগুলো করেছেন-তা অনেকাংশেই বাস্তবসম্মত। আমি তাদের অবস্থানকে শতভাগ সমর্থন করি।

রনি বলেন, অনেকেই মনে করেন জুলাই সনদ একটি রাজনৈতিক প্রদর্শনী, যার আইনি বা সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। এই সরকার সংবিধানের অধীনে কাজ করছে, কিন্তু সংসদবিহীন অবস্থায় এমন একটি সনদ বাস্তবায়ন করা কার্যত অসম্ভব। এমনকি আগামীতে যদি বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপি ক্ষমতায়ও আসে, তাহলেও এই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এটা একটা কাগজে বাঘ, যার কার্যকারিতা শূন্য। আগামী সংসদ যদি এটি না চায়, তবে এর কোনো মূল্যই থাকবে না।

তিনি দাবি করেন, গত ১৪ মাসে বর্তমান সরকার এমন কোনো সুকর্ম করতে পারেনি, যা ভবিষ্যতে সম্মানজনকভাবে স্মরণীয় হবে। তারা শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সময় নষ্ট করেছে-কমিশন, উপদেষ্টা, গবেষণা, সভা এসবের আড়ালে আসলে নিজেরা সেফ এক্সিটের পথ তৈরি করেছে।

রনি সতর্ক করে বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা অনেকের জন্য ভবিষ্যতে দায় হয়ে দাঁড়াবে। যে কলমে স্বাক্ষর করা হয়েছে, যে কাগজে লেখা হয়েছে, যে চেয়ারে বসে স্বাক্ষর করা হয়েছে-ইতিহাস একদিন সেসবের জবাব নেবে। সেই কলম, সেই কাগজ একদিন কথা বলবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি অন্তর থেকে এনসিপিকে ধন্যবাদ জানাই-ওই দিন তারা স্বাক্ষর করেনি, এটা তাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতার পরিচায়ক। ভবিষ্যতে যদি তারা কখনো স্বাক্ষর করে, তবুও ধন্যবাদ জানাব, কারণ অন্তত ওই দিন তারা দেখিয়েছে যে তাদের একটা মেরুদন্ড আছে।’

টিজে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশ গরিব না, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ: কর্নেল অলি Oct 19, 2025
img
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করে ব্যক্তির জন্য ভোট চাচ্ছে জামায়াত: আবুল খায়ের ভূঁইয়া Oct 19, 2025
img
বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ শিকারের সময় ১৪ ভারতীয় জেলে আটক Oct 19, 2025
img
যারা বিএনপি ও আ. লীগকে এক পাল্লায় মাপতে চায়, তাদের ঈমানে সমস্যা আছে: প্রিন্স Oct 19, 2025
img
বাঙালির ইতিহাসে এত বড় দুর্ঘটনা কখনো ঘটেনি: রনি Oct 19, 2025
img
চেষ্টা করেছি হতাশ না হয়ে ধৈর্য রাখার: রিশাদ Oct 19, 2025
img
পল্লী চিকিৎসকের ধারণা জিয়াউর রহমানের, বিএনপি তা বজায় রাখবে: তারেক রহমান Oct 19, 2025
img
৮ মাস পর দেশে ফিরলেন ভারতের উপকূলে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশি ১২ নাবিক Oct 19, 2025
img
৩০ দিন ফাস্টফুড না খেলে শরীরে হবে যে পরিবর্তন Oct 19, 2025
img
শত্রুর সঙ্গে থাকা যায় কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের সঙ্গে নয়: রিয়া মনি Oct 19, 2025
img
বয়কট করা ক্লাবগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে কোয়াব Oct 19, 2025
img
কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ৬ ঘণ্টা পর বিমান চলাচল শুরু Oct 18, 2025
img
আফগানদের না বলায় পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় সিরিজে সুযোগ পেল জিম্বাবুয়ে Oct 18, 2025
img
আহত জুলাই যোদ্ধা আতিকুলের সার্বিক খোঁজ নিলেন নাহিদ ইসলাম Oct 18, 2025
img
আরাউহোর শেষের গোলে রোমাঞ্চকর জয়ে শীর্ষে বার্সেলোনা Oct 18, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দরে ১২০০ টন পণ্য নিয়ে জাহাজডুবি Oct 18, 2025
img
রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশকে জেতালেন রিশাদ, ম্যাচশেষে আবেগঘন প্রতিক্রিয়া Oct 18, 2025
img
মিষ্টি কম দেয়া নিয়ে টর্চ জ্বালিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ Oct 18, 2025
img
আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের আপিল প্রত্যাখ্যান, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল Oct 18, 2025
img
‘জুবিনদা আমার কণ্ঠ ছিলেন’ মন্তব্যে কটাক্ষের মুখে দেব Oct 18, 2025