বৃদ্ধ বয়সে কোনো হারাম কর্ম যেন আমাকে স্পর্শ না করে : রনি

সাবেক সংসদ সদস্য ও কলামিস্ট গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, কোনো অবস্থাতেই পরিণত ও বৃদ্ধ বয়সে কোনো হারাম কর্ম যেন আমাকে স্পর্শ না করে। মূলত মানুষ যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়, বুড়ো হয়ে যায়। তা সে নর হোন কিংবা নারী হোন- তার সেই বার্ধক্যের সময়টি কেমন যায়? তা নিয়ে মূলত আলোচনা করব। তার আগে এই বুড়ো মানুষদের সম্পর্কে একটি বিখ্যাত বক্তব্য যেটা আমি শুনেছিলাম- সেটি কি হাদিসে কুদসী নাকি কোরআনের কোনো আয়াত নাকি কোনো হাদিস? আমি এটা স্পষ্ট বলতে পারব না।

কিন্তু একজন মশহুর আলেমের কাছে আমি এটা শুনেছিলাম তিনি যখন জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন এখন সেটা কি বায়তুল মোকাররমের সে বিখ্যাত খতিব যাকে বলা হয় ওবায়দুল ওবায়দুল্লাহ বা ওবায়দুল হক তিনি নাকি মাওলানা আব্দুল জলিল নাকি খন্দকার গোলাম মাওলা। কার মুখে শুনেছিলাম আমি বলতে পারব না, তবে এই তিনজনের যেকোনো একজন এই কথাটি দিয়ে বলেছিলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, জুমার খুতবাতে বক্তব্যটা হলো আল্লাহ বলেন, যেকোনো বৃদ্ধ, কোনো বৃদ্ধ যখন তার দাড়ি চুল পেকে যায় এবং বৃদ্ধ বয়সে সে অনুসূচনা না করে দিনের কর্মে রত না হয়ে সে যখন অপকর্ম করে, অন্যায় করে ও জুলুম করে তখন তাকে শাস্তি দিতে আমার আসলে খুব শরম লাগে, লজ্জা লাগে। তো যখন আমি বক্তব্যটি শুনছিলাম তখন আসলে আমার মসজিদে উপস্থিতির সংখ্যা এখনের চাইতে বেশি ছিল।

আমি ধর্মকর্মে খুব বেশি মনোযোগী ছিলাম। এখনকার চাইতে এবং এটা ধরুন বহু বছর আগে আজ থেকে ৩০/৪০ বছর আগের কথা। তার এই কথা শুনে আমি খুব কেঁদেছিলাম। ভীষণভাবে কেঁদেছিলাম এবং আমি তওবা করেছিলাম এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম যে আল্লাহ তুমি আমার বার্ধক্যকে যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করো।

কোনো অবস্থাতেই পরিণত ও বৃদ্ধ বয়সে কোনো হারাম কর্ম যেন আমাকে স্পর্শ না করে। আল্লাহ তুমি আমাকে সেই তৌফিক দান করো। এ কথা বলে আমি অনেক কেঁদেছিলাম। যাহোক আমি এখন প্রবীণ না হলেও পৌড়। বার্ধক্যের পূর্বক্ষণে আছি।

তো আমাদের এই সমাজে আপনি দেখবেন যারা সারাটা জীবন ভালো কর্ম করেন হয়তো নাস্তিক, আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে দিব্যি সুস্থ, মানুষজন সম্মান করছেন। তারা যেখানে যাচ্ছেন সেখানে রাজপুত্রের মতো তাদেরকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে। তাদের বৃদ্ধকালে একটা অসাধারণ অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে। শ্রদ্ধা, মর্যাদা, সম্মান সব মিলিয়ে দেখলেই মনে হয় যেন তারা আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সেটা ধর্মমত নির্বিশেষ শুধু মুসলমানদের মধ্যে নয়।

রবিবার (১৯ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনারা যারা হাফেজ্জী হুজুরকে দেখেছেন, তিনি বটগাছ মার্কায় একবার নির্বাচন করেছিলেন এবং তখন ওই সময়টিতে তার চলাফেরা করার সামর্থ্য ছিল না। কিন্তু আপনারা যারা তার নূরানী ছবি দেখেছেন এবং সেই যে তিনি বিছানায় শুয়ে থাকতেন ওই অবস্থাতে তার কণ্ঠে যে লালিত্য ছিল স্পষ্ট বোঝা যায় যে, রহমতপ্রাপ্ত ব্যক্তি। আপনি চিন্তা করুন যে বহু বছর অসুস্থ প্যারালাইজড কোনো স্মরণ শক্তি নাই। কবি নজরুল ইসলাম তার বার্ধক্যকালের ছবিগুলো দেখেন কিংবা রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখেন বঙ্কিমের ছবি দেখেন মাওলানা আবুল কালাম আজাদের ছবি দেখেন আল্লামা ইকবালের ছবি দেখেন। কি অসাধারণ তাদের বার্ধক্য ছিল আমাদের দেশের অনেক বিখ্যাত লোক মাওলানা মহিউদ্দিন খান সাহেব ছিলেন অধ্যাপক অধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেব ছিলেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ছিলেন। তাদের সেই বৃদ্ধ বয়সে আমি তাদের সঙ্গে চলেছি, কাছাকাছি গিয়েছি তাদের বক্তব্য শুনেছি। বিশ্বাস করেন তাদের সব কিছুর মধ্যেই মেশক এবং আম্বরের গন্ধ ছিল। ব্যক্তিত্ব যে প্রখরতা ছিল, এরকম আমি এই কজনের নাম বললাম কিন্তু আমার সৌভাগ্য হয়েছে ৮০’র দশক অলমোস্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে অর্থনৈতিক অঙ্গনে যে সকল দিকপাল ছিলেন সত্যিকার অর্থে আমি বেহরুজানীকে দেখেছি মির্জা বেহরুজহানীকে দেখেছি তার বাবাকে দেখেছি এখন যে সালমান ইসপাহানী আছেন তার বাবাকে দেখেছি। তো এরা মানে কি ধরনের পাহাড়ের মতো মানুষ ছিলেন আপনি না দেখলে বুঝতে পারবেন না অসাধারণ তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্তিত্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমলাদের মধ্যে অনেক বিখ্যাত আমলাকে দেখেছি ৮০’র দশকে সিএসপি অফিসার ছিলেন তাদের ধর্ম-কর্ম শিক্ষা দীক্ষা ব্যক্তিত্ব মানে ভালো মানুষ যে সত্যিকার অর্থে কত সুন্দর হয়ে যায় বার্ধক্যে এটা না দেখলে বুঝতে পারবেন না। একজন ভদ্র মহিলা আছেন ভারতের রানীমাতা গায়ত্রী দেবী নেটে গিয়ে দেখবেন ইন্টারনেট রাজস্থানের সেই এক যে রাজা ব্রিটিশ জমানাতে সর্বশেষ রাজা তার স্ত্রী ছিলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার খুব দ্বন্দ্ব ছিল। তো এ নিয়ে সেই রাজমাতা গায়ত্রী দেবী আর ইন্দিরা গান্ধী কিংবা মার্গারেট থ্যাচার এদের একেবারে জীবনের শেষ প্রান্তের ছবিগুলো দেখেন আর যৌবনকালের ছবি দেখেন দেখবেন যে, দেখতে মানে মরণের আগে তাদের চেহারার মধ্যে এক ধরনের সৌন্দর্য চলে এসেছিল আপনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের ৮০ বছর বয়সে তার ছবিগুলো দেখেন, নেলসেন ম্যান্ডেলার ছবি দেখেন কি অসাধারণ আপনি আকবরের ছবি দেখেন ৮০ বছর বয়সে আওরঙ্গজেবের ছবিগুলো দেখেন জাহাঙ্গীরের ছবিগুলো দেখেন, বয়স যত বেড়েছে তাদের কর্ম এই পৃথিবীতে তাদেরকে অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে। অন্যদিকে ফেরাউনের ছবি দেখেন বৃদ্ধ বয়সে কেমন শয়তানের মতো হয়ে গেছে।

এর বাইরে যতওলো আল্লাহ গাউস কুতুব রয়েছেন সবার জীবনে ভুল রয়েছে, পাপ রয়েছে, গুনাহ রয়েছে। তো রাজনীতিবিদ বলেন, কবি সাহিত্যিক তাদের জীবনেও পাপ আছে। গুনাহ আছে, পরকীয়া আছে, জেনা রয়েছে, ব্যভিচার রয়েছে, খুন রয়েছে, ধর্ষণ রয়েছে, কত কিছু রয়েছে।

আর আপনি যদি শুধু মন্দ কাজ করতে থাকেন, মন্দ চিন্তা করতে থাকেন, অন্যের অনিষ্ট সাধন করতে থাকেন, মুনাফেকি করতে থাকেন। জাস্ট লাইক কারুন জাস্ট লাইক হামান জাস্ট লাইক মিরজাফর জাস্ট লাইক যাকে বলা হয়, আবু জেহেল আবু লাহাব আপনার শেষের যে জিন্দেগীটি হবে আপনার চেহারাটা বিকৃত হয়ে যাবে, চুল এলোমেলো হয়ে যাবে, আপনি আশ্রাবেন কিন্তু চুল ঠিক থাকবে না। তারপর আপনার চামড়া এমন অবস্থা হয়ে যাবে এবং শেষ মুহূর্তে এসে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আপনার গুনাহর পাহাড়গুলো আপনার ওপরে এমনভাবে যাকে বলা হয় আচড়ে পড়বে যে আপনার মৃত্যুর প্রকৃতি দেখে আপনার পরিণতি দেখেই কিন্তু মানুষজন বুঝে যাবে যে মৃত্যুর পর আপনার জন্য কি পরিণীতি অপেক্ষা করছে এবং আপনি আসলে কেমন মানুষ ছিলেন।

তো সেই দিক থেকে নারী হোক নর হোক যারা বৃদ্ধ বয়সে এসে লোভের কবলে পড়েন, লালসা থেকে বের হতে পারেন না কামনা তাদেরকে তাড়িত করে ব্যভিচার তাদেরকে তাড়িত করে এবং একটার পর একটা প্রতারণা করতে থাকেন ব্যক্তির সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে দেশের সঙ্গে জাতির সঙ্গে এই পৃথিবীতে তাদের যে কি পরিণতি হয়েছে। আপনি চিন্তা করেন একজন লোভী মানুষ সুদখোর এবং সম্পদলোভী। এই মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে মন্দ মানুষ হিসেবে যাদেরকে আমরা বর্ণনা করি সে হলো হযরত মুসা আলাই সালামের সম্ভবত চাচাতো ভাই কারুন। যে ফেরাউনের আমির ছিল বা ওমরা ছিল অথবা মিনিস্টার ছিল। খুব বড় মানে যাকে বলা হয় ওই জমানাতে মিসরের সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই কারুনকে তার ধনসম্পদসহ জীবন্ত মাটিতে পুতে ফেলেছিলেন। দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য সে তার সমস্ত ধনসম্পদসহ একেবারে সবার লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে মাটির মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। এই কারুনের মতো লোক যারা আছেন এ জামানাতে আগের জামানাতে বা আগামীতে তাদের সবার জন্যই একই পরিণতি। আফসোস আমরা ইতিহাস থেকে কখনোই শিক্ষা নেই না।

 পিএ/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মনোনীত প্রার্থীদের সাথে আজ ফের বিএনপির বৈঠক Dec 18, 2025
img
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ব্রিফিং দুপুর সাড়ে ১২টায় Dec 18, 2025
img
বিকেলে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করবেন পররাষ্ট্র সচিব Dec 18, 2025
img
ট্রাম্পের মন্তব্যের পর পদত্যাগের ঘোষণা এফবিআই উপপ্রধানের Dec 18, 2025
img
ভারতীয় হাইকমিশনারকে বের করে দেওয়া উচিত ছিল: হাসনাত Dec 18, 2025
img
৫ দিনের শেষের দিকে কমবে তাপমাত্রা Dec 18, 2025
img
অনন্যার কাছ থেকে ‘জেন জি’ ভাষা শিখলেন অমিতাভ Dec 18, 2025
img
নাম-খ্যাতি বাড়লেও সংযম হারানো যাবে না: রঞ্জিত মল্লিক Dec 18, 2025
img
উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই সরকারি বাসায় অবস্থান করছেন আসিফ-মাহফুজ Dec 18, 2025
img
সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে অবিলম্বে মুক্তি দিন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল Dec 18, 2025
img
রেস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ১২ ফান্ড তদন্তে বিএসইসির ৬ কমিটি Dec 18, 2025
img
ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদ, দাবি করেছেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহকারী Dec 18, 2025
img
নতুন চুক্তি করে মায়ামিতেই থাকছেন সুয়ারেজ Dec 18, 2025
img
চট্টগ্রামের চকবাজার তেলিপট্টিতে আগুন Dec 18, 2025
img
ইউনাইটেড ছাড়লে স্পেনিশ বা ইতালিয়ান ক্লাবে খেলতে চান ব্রুনো ফের্নান্দেস Dec 18, 2025
img

জুলাই হত্যাযজ্ঞ

কাদের-আরাফাতসহ ৭ নেতার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল Dec 18, 2025
img
‘ধুরন্ধর’ অক্ষয় খান্নার হয়ে কি বললেন স্মৃতি ইরানি? Dec 18, 2025
img
প্রাক্তন স্ত্রী রীতা ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে মামলা করলেন কুমার শানু Dec 18, 2025
img
লেভানদোভস্কির ‘অবিশ্বাস্য’ রেকর্ডে চোখ কেইনের Dec 18, 2025
img
ঢাকায় ফের চালু ভারতীয় ভিসা সেন্টার Dec 18, 2025