জামায়াতের বিপক্ষে কথা বললে তাদের বট টিম হাজির হয়ে যায় : হান্নান মাসউদ

জামায়াতের বিপক্ষে কথা বললে তাদের বট টিম হাজির হয়ে যায়, গালাগাল করে এমনকি শারীরিকভাবে আঘাত করতেও আসে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক পর্ষদের সদস্য আবদুল হান্নান মাসউদ।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময় কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করলে ট্রায়াল চলত, হামলা হতো—এখনো একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। কারো বিরুদ্ধে, বিশেষ করে জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের বট টিম হাজির হয়ে যায়, গালাগাল করে, এমনকি শারীরিকভাবে আঘাত করতেও আসে। আওয়ামী লীগের সময় বলা হতো শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না।


এখন বলা হয়, আমাদের আমিরের বিরুদ্ধেও কিছু বলা যাবে না।’

সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনে টক শো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে হান্নান মাসউদ এসব কথা বলেন।

হান্নান মাসউদ বলেন, ‘জুলাই সনদে যারা সই করেছে তাদের অন্তত ৯৫ শতাংশ লোকের পরিবারের সন্তানরা বাংলাদেশে নেই। তারা এই বাংলাদেশকে ধারণ করে না।

যদি তারা সত্যিই জুলাই অভ্যুত্থানকে গ্রহণ করত, তাহলে আইনি ভিত্তি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত না করে এই সনদের তামাশায় তারা অংশ নিত না। যাই হোক, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান থাকতে পারে। আমরা সেই অবস্থানকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এনসিপির রাজনৈতিক অবস্থান এখনো জুলাইয়ে আটকে আছে।

তিনি বলেন, ‘অনেকে বলেন, আপনারা কি জুলাই চেতনার নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মতো রাজনীতি করতে চান? আমরা তা বলতে চাই না। আমরা বলছি, জুলাই আমাদের রাজনৈতিক ভিত্তি। জুলাই যে আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে, যে স্বপ্নের জন্য আমরা হাসিনার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে লড়েছি, যাদের রক্তে এই অভ্যুত্থান হয়েছে—আমরা সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চাই। এক-দেড় বছর কেটে গেলেও এখনো এনসিপি দেখছে, সেই বাস্তবায়ন হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্ষ হতো, মারামারি হতো।

এখন জামায়াত ও বিএনপির সংঘর্ষ হচ্ছে, ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতা ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে। আগে কেউ ভিন্নমত প্রকাশ করলে ট্রায়াল চলত, হামলা হতো—এখনো একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

কারো বিরুদ্ধে, বিশেষ করে জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের বট টিম হাজির হয়ে যায়, গালাগাল করে, এমনকি শারীরিকভাবে আঘাত করতেও আসে।’

হান্নান মাসউদ বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের সময় বলা হতো শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। এখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বলা হচ্ছে—বেগম জিয়া, মেজর জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রশ্নে আমরা আপসহীন তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না। জামায়াত আবার বলতেছে আমাদের আমিরের বিরুদ্ধেও কিছু বলা যাবে না। মানে, যে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতি একসময় তৈরি হয়েছিল, তা আজও বহাল। তারা সেই সিস্টেমেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, কিন্তু আমরা তা পরিবর্তন করতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘এনসিপি জুলাইয়ের কাছে যে ওয়াদাবদ্ধ, সেই ওয়াদাটাই আমরা রক্ষা করছি। আমরা যে জুলাই সনদ বা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি, তা আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াসহ চাই। সরকার যদি তা নিশ্চিত না করে, তাহলে আমরা বার বার প্রতারিত হতে চাই না। জুলাই ঘোষণাপত্রে একবার আমরা প্রতারিত হয়েছি; এবার জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও তা হতে দিতে পারি না। আমরা চাই, সরকার যে চুক্তি করছে, তা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিক।’

তিনি আরো বলেন, ‘এনসিপির গতকালের অবস্থান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট—জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব যারা দিয়েছিল, তাদের সঙ্গে নিয়েই ড. ইউনূসের সরকার গঠিত হয়েছে। তারা দেশে এসে শপথ নিয়েছেন। কিন্তু যখন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার প্রশ্ন এলো, তখন তাদের কেউ ছিল না—সবাই সরে গেছে।’

হান্নান মাসউদ বলেন, ‘যুদ্ধের সময় গরিবদের সন্তানরা যুদ্ধ করে, মধ্যবিত্তদের সন্তান থাকে না, ব্যবসায়ীরা শুধু রুটি দেন, আর রাজনীতিবিদরা সমর্থন দেন। যুদ্ধ শেষ হলে গরিবরা তাদের সন্তানদের লাশ খোঁজেন, রাজনীতিবিদরা সমঝোতা করেন আর ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।’


আইকে/ টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাস দুর্ঘটনার শিকার ‘একেন বাবু’ খ্যাত অভিনেতা অনির্বাণ Dec 06, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: ড. আসাদুজ্জামান রিপন Dec 06, 2025
img
দেশের চিনি বিক্রির জন্য আপাতত আমদানি বন্ধ: শিল্প উপদেষ্টা Dec 06, 2025
img
সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরালো কানাডা Dec 06, 2025
img
তালেবান কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি অস্ট্রেলিয়ার Dec 06, 2025
img
তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস Dec 06, 2025
img
বিপিএলে রংপুরের হয়ে খেলবেন ইংলিশ ওপেনার মালান Dec 06, 2025
img
পেছাল মেটার ‘ফিনিক্স’ মিক্সড রিয়েলিটি চশমার উদ্বোধন Dec 06, 2025
img
পুঁজিবাজারে সাপ্তাহিক গড় লেনদেন কমেছে ২২ শতাংশ Dec 06, 2025
img
‘ভিডিও বউমা’ শেষে বড়পর্দায় প্রত্যাবর্তন আরিয়ানের Dec 06, 2025
img
জোট নয়, একাই নির্বাচন করব: হাসনাত আবদুল্লাহ Dec 06, 2025
img
সিলেটে আজ জামায়াতসহ ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ Dec 06, 2025
img
সারাদেশে আগামী ৫ দিন তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে Dec 06, 2025
img
গ্রিভসের ডাবল সেঞ্চুরিতে ড্র নিয়ে বাঁচল ওয়েস্ট ইন্ডিজ Dec 06, 2025
img
আমি বিবাহ নিশ্চিত বা অস্বীকার করতে চাই না: রাশমিকা মান্দানা Dec 06, 2025
img
জন্মগত নাগরিকত্ব, সর্বোচ্চ মার্কিন আদালতে মামলার শুনানি Dec 06, 2025
img
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলেন আন্দ্রে রাসেল Dec 06, 2025
img
ইসিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান নাহিদের Dec 06, 2025
img
নাগা চৈতন্য-সোভিতার প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর উষ্ণতা প্রেমের মুহূর্ত ভাইরাল Dec 06, 2025
img
নির্বাচন বানচাল করতে কুচক্রী মহল ১/১১ ঘটানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : রাশেদ খান Dec 06, 2025