রাজনীতিতে আবারও ‘মাইনাস’ -কঠিন সময় এনসিপির : জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও ‘মাইনাস তত্ত্ব’ ঘুরে বেড়াচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া এনসিপি এখন কঠিন সময় পার করছে। জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পর জনমনে ভিন্ন ধারণা তৈরি হয়েছে। জোট রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা এবং জনসমর্থন ধরে রাখার লড়াই-সব মিলিয়ে দলটি টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।

জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক বেশ জমে উঠেছে। এনসিপির প্রধান নাহিদ স্পষ্ট করে বলেছেন, জামায়াত জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে এবং তাদের আন্দোলন ছিনিয়ে নিয়েছে। যদিও জামায়াত বলছে, এই বক্তব্যগুলো অসৌজন্যমূলক।

এনসিপির আরেকজন নেতা বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে গনিমতের মালের মতো ভাগ করে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা হিসেবে এনসিপির নেতাদেরকে সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের প্রধান উপদেষ্টা স্বীকার করেছিলেন। তারা সামনের সারিতে ছিলেন। এমনকি বিভিন্ন সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারাও তা স্বীকার করেছেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই তরুণদের মাইনাস করে দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

জিল্লুর রহমান আরো বলেন, এনসিপির সরকারের যাওয়াটা ভুল ছিল। তারা দলটি তাড়াহুড়ো করে গঠন করেছে। তাদের কিছু নেতার দেহভঙ্গি, অঙ্গভঙ্গি ও কথাবার্তায় সীমালঙ্ঘন হয়েছে। কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে, আবার কারো বিরুদ্ধে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের অভিযোগও রয়েছে।

এসব অভিযোগ সত্য। কিন্তু তারপরও এই আন্দোলন ও অভ্যুত্থানে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যে প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, নাহিদ ইসলাম বলেছেন, উপদেষ্টারা ‘সেফ এক্সিট’-এর জন্য বিভিন্ন দল ও স্থানে যোগাযোগ করছে। কেউ কেউ বলছেন, তাদের কথা যদি প্রকাশ্যে চলে আসে, তবে তারা মুখ দেখাতে পারবেন না। আমি মনে করি, নাহিদদের এখন সময় এসেছে। তারা ইতিমধ্যেই বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিকট ভবিষ্যতে তাদের জন্য তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আগামী দিনগুলোতে তারা বেশ ঝুঁকির মধ্যেই থাকবেন। বাংলাদেশের রাজনীতি যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেখানে সাহসের সঙ্গে সত্য প্রকাশ করা জরুরি-আর সেই কাজটি করতে পারবে এই তরুণরাই।

তিনি বলেন, এনসিপি যেহেতু দল গঠন করেছে, তাই আগে তাদের রাজনীতি নির্ধারণ করা উচিত। তারা কি মধ্যপন্থী হবে, নাকি ডানপন্থী বা বামপন্থী-এটা স্পষ্ট করুন। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন -বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চান, কী চিত্র দেখতে চান তা নির্ধারণ করা দরকার; এলোমেলো আলোচনা নয়, সুসংগঠিত নীতি চাই।

তিনি আরো বলেন, তাদের বুঝতে হবে, সবাই তাদের ব্যবহার করে ফেলে দিয়েছে। জুলাই সনদ তাদের দাবি হলেও তারা স্বাক্ষর করেনি এবং স্বাক্ষরের জন্য কাউকে কনভিন্স করার অপেক্ষাও করা হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন, এই ছাত্ররাই তার নিয়োগদাতা, এবং ছাত্ররা চাইলে তিনি চলে যাবেন। ভাগ্যক্রমে ছাত্ররা এখনো তাকে যেতে বলছেন না কিন্তু স্পষ্ট যে ছাত্রদের সঙ্গে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিশেষ করে যারা এনসিপির সঙ্গে যুক্ত ছাত্রনেতারা, তাদের জন্য সামনে পথটি কঠিন। এখন তাদের বুঝে শুনে পথ চলতে হবে।

জিল্লুর রহমান বলেন, সুস্থ ধারার রাজনীতি এবং তরুণ বয়সের কারণে তাদের এখনো বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা আছে। এক বছরেও দেখা গেছে, বড় দলগুলো তেমন কোনো কার্যকর আশা জোগাতে পারছে না। এনসিপির একটি বড় ইস্যু হলো, তারা কার সঙ্গে জোট করবে নাকি একা পথে চলবে। একা চললে তাদের সুবিধা হবে এমন কোনো কারণ নেই। জামায়াতের সঙ্গে এতদিন ঘনিষ্ঠ থাকার কারণে পারসেপশনও তাই। তবে সেখানে একটি বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বিএনপিকে তারা অনেকবার আক্রমণ করেছে এবং এখনো অভিযোগ করছেন। সেই অবস্থায় বিএনপির সঙ্গে জোট করে তারা কতটা সুবিধা পাবে, তা অনিশ্চিত।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
পর্তুগালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে মহান বিজয় দিবস উদযাপন Dec 17, 2025
img
ভিডিও জগতে বড় ধরনের আপডেট আনল অ্যাডোবি Dec 17, 2025
img
১১ পেশায় যুক্ত হতে পারবেন না এমপিও শিক্ষকরা Dec 17, 2025
img
বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে সারায়েভো, ৫ম অবস্থানে ঢাকা Dec 17, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় আরও ৫ দেশ Dec 17, 2025
img

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়

সালমান-আনিসুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি আজ Dec 17, 2025
img
আজ শুষ্ক থাকবে ঢাকার আবহাওয়া Dec 17, 2025
img
নারীর আত্মনির্ভরতার পক্ষে সরব রচনা ব্যানার্জী Dec 17, 2025
img
মৌলভীবাজারে আ.লীগ নেতা ডা. হরিপদ রায় গ্রেপ্তার Dec 17, 2025
মুখে নয়, মাঠের খেলাটাই গুরুত্বপূর্ণ: মিরাজ Dec 17, 2025
img
একটি দামী জামার বদলে অনেক পোশাকেই স্বাচ্ছন্দ্য অভিনেত্রী তিতিক্ষার Dec 17, 2025
img
প্রবাসী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাসহ গ্রেপ্তার ৫ Dec 17, 2025
বিবিসির বিরুদ্ধে ১০০০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের মামলা ট্রাম্পের Dec 17, 2025
জাতিসংঘে পাকিস্তানকে তুলাধুনা করলো ভারত Dec 17, 2025
সৌদি আরবের মোবাইল মার্কেটে চাঞ্চল্যকর ঘটনা Dec 17, 2025
মেসির সফরে বিশৃঙ্খলার জেরে ক্রীড়ামন্ত্রীর পদত্যাগ, নতুন দায়িত্ব মমতার Dec 17, 2025
img
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বাদশ সমাবর্তন আজ Dec 17, 2025
img
ব্যালন ডি’অরের পর ফিফা বর্ষসেরা দেম্বেলে Dec 17, 2025
img
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ছাড়াল ৪ লাখ ৫৫ হাজার Dec 17, 2025
img
দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে মহান বিজয় দিবস উদযাপন Dec 17, 2025