রাষ্ট্রপতি নয়, প্রধান উপদেষ্টা থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ চায় জামায়াত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, ‘এই যে রিফর্মস (জুলাই সনদ) হচ্ছে, এটার যে ডিক্লারেশনটা বা আদেশটা কে দিবে? এ নিয়ে একটা প্রশ্ন এখানে উঠেছে। আমরা বলে আসছি, যদি আইনে কাভার করে এবং আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যত্যয় না ঘটে, তাহলে আমরা চাই, চিফ অ্যাডভাইজার (প্রধান উপদেষ্টা) এই আদেশটি দিবেন, প্রেসিডেন্ট দিবেন না। এটা আজকে আমরা মত দিয়েছি।’

আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম ও রফিকুল ইসলাম খান।

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তাহের বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে এখনো সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হচ্ছে। সুতরাং, আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছি। এখনই যদি বিষয়টি আলোচনা করি, তাহলে এটি ইমম্যাচিউরড হবে। আমরা মনে করি, ইন্টেরিম এখন ইন্টেরিমই থাকবে। যদি কোনো ব্যত্যয় না হয় সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে, তাহলে এই সরকারই কেয়ারটেকার সরকারের ভূমিকা পালন করবে।’

তাহের আরও বলেন, ‘আমরা সেখানে বলেছি, একটি আদেশের মাধ্যমে এটাকে (জুলাই সনদ) সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। এটা কনস্টিটিউশন নয়। এটা হচ্ছে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। যেটা কোনো সরকার এ রকম একটি পরিস্থিতিতে পড়লে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। এই সনদের মাঝে যেগুলো আগামী নির্বাচন সম্পৃক্ত, সেগুলোকে আগেই পাস করিয়ে তার ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে ইম্পর্ট্যান্ট।’

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছেন অধ্যাদেশ দেওয়ার জন্য, অধ্যাদেশ খুব দুর্বল। অধ্যাদেশে এগুলোর সাংবিধানিক মর্যাদায় যাওয়ার মতো স্টে অধ্যাদেশ নেই।

কিন্তু আদেশ ইজ ইকুইভ্যালেন্ট টু সাংবিধানিক পরিবর্তন, পাওয়ার অব অথরিটি।’

গণভোটের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিল না প্রথম দিকে। আমরা এটাতে জোর দিয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি গণভোটে রাজি হয়েছে। তারপরেও তারা একটা জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেটা হচ্ছে, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন এক দিনে হতে হবে। দুইটা একেবারে আলাদা জিনিস।’

তাহের বলেন, ‘একটা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে দেশে কারা সরকার চালাবে, সেটার সিদ্ধান্ত। আর গণভোট হচ্ছে আমাদের কতগুলো রিফর্ম, সংস্কার; যেগুলো কীভাবে সরকার পরিচালনা হবে, কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকবে—এসব মৌলিক বিষয়, এটার সঙ্গে এটার কোনো রিলেশন নেই। গণভোটের মাধ্যমে রিফর্মস আলাদাভাবে পাস করতে হবে। জনগণ যদি ‘‘হ্যাঁ’’ বলে, পাস হয়ে গেল। জনগণ যদি ‘‘না’’ বলে, পাস হবে না।’

তাহের আরও বলেন, ‘বিএনপি অজুহাত দেখাচ্ছে, গণভোটের সময় নেই। আমরা বলেছি, নভেম্বরের লাস্টে গণভোট করেন। প্রায় এক মাসের বেশি সময় আছে, তারপরে আরও আড়াই মাস থাকবে জাতীয় নির্বাচনের। সুতরাং, এখানে সময়ের কোনো সমস্যা নাই। এই গণভোট হলেই জনগণের সিদ্ধান্ত নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে, নয়তো আগের মতোই হবে।’

নির্বাচনের আগেই প্রশাসনে রদবদল ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন, সচিবালয়, পুলিশ প্রশাসনে ৭০-৮০ শতাংশ অফিসারই একটি দলের আনুগত্য। তাদের মাধ্যমে এটা হচ্ছে। আমরা গেলে তারা বলে যে প্রচণ্ড চাপ। পুলিশে একই অবস্থা আছে। আমাদের প্রসিকিউটর যারা হয় ওখানে, পিপিএ ৮০ শতাংশ হচ্ছে একটি বিশেষ দলের। এই যে ইমব্যালেন্সটা হয়ে আছে, আপনারা নিরপেক্ষ সরকার, আপনারা এটাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেন। সকলের জন্য সমতল ভূমি তৈরি করেন এবং নির্বাচনের আগে যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার, আপনারা তা করেন।’

প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে তাহের বলেন, ‘উনি আমাদের বলেছেন, উনি নিজে তত্ত্বাবধান করবেন এবং লটারি সিস্টেমে উনি পোস্টিং ঠিক করবেন। তো আমরা বলেছি, আমাদের কোনো আপত্তি নেই, আপনি লটারি টানেন, দেন। তবে লটারির পেছনে যেন কোনো একটা ভূত দাঁড়াইয়া না থাকে।’


আইকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই শুরু হয় সবকিছু: যিশু সেনগুপ্ত Dec 07, 2025
img
জনগণ ও গণতন্ত্রই কেবল দেশের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে: তারেক রহমান Dec 07, 2025
img
ঢাকা বোর্ডে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উর্ত্তীণদের বৃত্তির তালিকা প্রকাশ Dec 07, 2025
img
রাজশাহীতে পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৩৬ Dec 07, 2025
img
গণতন্ত্রের সর্বনাশ ঘটিয়েছে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকার : সালাহউদ্দিন Dec 07, 2025
img
‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন জোট ঘোষণা করলেন নাহিদ ইসলাম Dec 07, 2025
img
শুধু পাসের হার বৃদ্ধি যেনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য না হয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img
কাজ হারানোর ভয়ে ভেঙে পড়েছিলেন অভিনেত্রী ক্যাটরিনা! Dec 07, 2025
img
পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ Dec 07, 2025
img
স্মৃতির সঙ্গে বিয়ে ভাঙার পরই আইনি ব্যবস্থার হুমকি পলাশের Dec 07, 2025
ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী বদলাচ্ছে জামায়াত Dec 07, 2025
img
২ সিনেমা নিয়ে পর্দায় ফিরছেন অভিনেত্রী তানজিকা! Dec 07, 2025
img
১৯৯ কোটি টাকায় বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে : ধর্ম উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img

২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এস আলমের মাসুদসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা Dec 07, 2025
img
দুধ দিয়ে গোসল করে রাজনীতি ছাড়লেন যুবদল নেতা Dec 07, 2025
img
সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগদানের বয়সসীমা বৃদ্ধি Dec 07, 2025
পোস্টাল ভোট বিডি অ্যাপে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন ছাড়াল ২ লাখ ২৪ হাজার Dec 07, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন সিইসিসহ ৪ কমিশনার Dec 07, 2025
img
প্রয়োজনে কৃষি কর্মকর্তাদেরও লটারির মাধ্যমে বদলি করা হবে: স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা Dec 07, 2025
img
বেনিনের ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী, প্রেসিডেন্টকে অপসারণ Dec 07, 2025