ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি প্রকাশ করতে প্রধানমন্ত্রীকে বিএনপির চিঠি

সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের করা চুক্তি প্রকাশ্যে তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত চিঠি নিয়ে রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্রেটারি-২ এই চিঠি গ্রহণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ গেছেন।

বিএনপি বলছে, সংসদে তাদের সাংসদেরা এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ না পাওয়ায় তারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছেন।

চিঠি দিয়ে বের হয়ে সাংবাদিকদের মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে সেখানে দেশের স্বার্থ ক্ষতি করে, এমন কিছু আছে কি না, বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ দেওয়ার জন্য এই চিঠি দেওয়া।

সংসদে বিএনপির প্রতিনিধি থাকার পরও এভাবে চিঠি দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংসদে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে আগে নোটিশ দিতে হয়। বিএনপির প্রতিনিধিরা কয়েকবার নোটিশ দিলেও তা গ্রহণ এবং কথা বলতে দেওয়া হয়নি। তাই বিএনপি প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দিয়েছে।

চিঠিতে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যা লেখা হয়েছে তা তুলে ধরা হলো-

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সৌজন্যে আমরা জানতে পেরেছি যে আপনি সর্বশেষ ভারত সফরকালে ৫ অক্টোবর ২০১৯ ভারতের সাথে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন।

এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি বিষয়সহ ৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে মর্মে প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে এ সফরের সময় ভারতের সাথে সর্বমোট কয়টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সে সম্পর্কে জনগণ অবহিত নয়।

ইতিমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সকল চুক্তিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী তথা বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি হিসেবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। অপরদিকে স্বাক্ষরিত এ সকল চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মর্মে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি উত্তোলনের চুক্তি, বাংলাদেশের উপকূলে ভারতের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সহযোগিতা বিনিময়ের নামে ভারতকে আমাদের উপকূলে রাডার স্থাপনে চুক্তি এবং মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মতো স্পর্শকাতর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট চুক্তি সই করার পূর্বে বিষয়টি নিয়ে কখনো কোনো ধরনের পাবলিক ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়নি কিংবা বাংলাদেশের জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।

বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১৪৫ (ক) তে উল্লেখ আছে যে, বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে।

কিন্তু ভারতের সাথে যেসকল চুক্তি সই করা হলো তার কোনোটিই জনসম্মুখে কিংবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণই এসকল চুক্তির খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। অথচ এসকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির বিষয়ে অবহিত থাকা জনগণের মৌলিক অধিকার, যে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখা স্পষ্টতই সংবিধানের লঙ্ঘন।

প্রকৃতপক্ষে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তিগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি।

এমতাবস্থায় সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুযায়ী ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত সব চুক্তির পূর্ণবিবরণী অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করে জনমনে সৃ্ষ্ট নানাবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করার আহবান জানাচ্ছি।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: