সর্বশেষ এশিয়া কাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে অনবদ্য নৈপুণ্যে দলকে শিরোপা জিতিয়ে নায়ক বনে গেছেন তিলক বার্মা। ফাইনালের নায়ক এবার শোনালেন জীবনের অন্য এক গল্প। ফিটনেস নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতাই যেন একসময় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তরুণ এই ব্যাটারের। নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তার শরীরের পেশি। ভারতের যুব দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার পর আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর কারা কীভাবে তার পাশে এগিয়ে এলেন সে গল্পই শোনালেন তরুণ এই ক্রিকেটার।
২০২২ সালে পেশির বিরল এবং কঠিন অসুখ র্যাবডোমায়োলাইসিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ভারতের সেনসেশন তিলক বার্মা। পেশিতে যন্ত্রণা হতো তার। ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন।
সমস্যার শুরুতে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। ভাবতেন ক্রিকেটীয় পরিশ্রম এবং ক্লান্তির জন্য পেশিতে ব্যথা হয়। দেশটির ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম কর্ণধার আকাশ আম্বানীকে সে সময় পাশে পেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সঠিক সময় অসুখ ধরা পড়ায় চিকিৎসার পর এখন সুস্থ তিলক।
গৌরব কাপূরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রথমবার নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন তিলক। তিনি বলছেন, ‘প্রথমবার আইপিএল খেলার পর আমার শরীরিক কিছু সমস্যা হয়েছিল। সব সময় ফিট থাকতে চাই। কিন্তু পারছিলাম না। তারপর র্যাবডোমায়োলাইসিস নামে একটি অসুখ ধরা পড়ে আমার। এই অসুখে শরীরের পেশিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। সেই সময় আমি টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখছি। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছি। ভারত ‘এ’ দলে সুযোগ পাচ্ছি। বিভিন্ন প্রস্ততি শিবিরে যোগ দিচ্ছি। সে সময়ই সমস্যাটা ধরা পড়ে।’
তিলক জানিয়েছেন, জিমে প্রচুর সময় কাটিয়ে নিজেই সমস্যা ডেকে এনেছিলেন। তরুণ ব্যাটার বলেছেন, ‘সব সময় ফিটনেস বৃদ্ধির কথা ভাবতাম। বিশ্রামের দিনেও জিমে চলে যেতাম। লক্ষ্য ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ফিট প্লেয়ার এবং দুর্দান্ত ফিল্ডার হওয়া। তাই সমস্যা হলেও শুরুর দিকে সমাধানের কথা ভাবিনি। আইস বাথ নিতাম। কিন্তু শরীরকে বিশ্রামের যথেষ্ট সময় দিতাম না। শরীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের প্রয়োজন। সে সব মানতাম না। যত বেশি সম্ভব পরিশ্রম করার কথা ভাবতাম। ফলে আমার পেশিগুলোর ওপর অত্যধিক চাপ পড়ত। ক্রমশ সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। পাশাপাশি শিরাগুলোও শক্ত হয়ে যাচ্ছিল।’
ভারত ‘এ’ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিলক। সে সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলছিলেন, ‘‘বাংলাদেশে ‘এ’ দলের হয়ে সিরিজ খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি।
একটা ম্যাচে শতরানের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম। সে সময় হঠাৎ আমার চোখ থেকে পানি বের হতে শুরু করল। হাতের আঙুলগুলো ঠিকমতো নাড়াতে পারছিলাম না। সব কিছু খুব কঠিন লাগছিল। নড়াচড়া করতে সমস্যা হচ্ছিল। নিজেকে পাথরের মতো লাগছিল। শতরান মাঠে ফেলে উঠে যেতে হয়েছিল। আঙুল শক্ত হয়ে যাওয়ায় গ্লাভসও খোলা যাচ্ছিল না। কেটে গ্লাভস খুলতে হয়েছিল। সেই কঠিন সময়ে পাশে পেয়েছিলাম আকাশ আম্বানীকে।’
কীভাবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অন্যতম কর্ণধার? তিলক বলেছেন, ‘অসুস্থ হয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরেই আকাশের ফোন পেয়েছিলাম। উনি বিসিসিআইয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
তার সক্রিয়তায় উপকৃত হয়েছিলাম। জয় শাহ স্যারের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, কয়েক ঘণ্টা দেরি হলেও পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারত। সে সময় আইভি লাইনের সুচও পেশির মধ্যে ঢুকছিল না। বার বার সুচ ভেঙে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি সত্যিই খুব জটিল হয়ে গিয়েছিল। মা সারা ক্ষণ হাসপাতালে আমার সঙ্গে ছিলেন।’
অসুস্থতার জন্য বেশ কয়েক মাস খেলতে পারেননি। ২০২৩ সালের আইপিএলের কিছু দিন আগে অনুশীলন শুরু করতে পেরেছিলেন হায়দরাবাদের ক্রিকেটার। সে বার আইপিএল নিজের প্রথম ম্যাচেই মুম্বাইয়ের হয়ে ৪৬ বলে ৮৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে। এখন ট্রেনারদের নির্দেশ মেনে চলেন তিলক। ফিটনেসের জন্য অতিরিক্ত কিছু করার চেষ্টা করেন না আর।
আইকে/ টিকে