এম এ আউয়াল

জুলাই সনদে নিম্নমধ্যবিত্তের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি

ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর সাধারণ মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তিত হবে।

তিনি বলেন, আমরা যে লক্ষ্য সামনে রেখে গণঅভ্যুত্থান করেছি, ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় দিয়েছি- সেই সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন সরকারের প্রতি আস্থা ছিল যে তারা হয়তো দেশের মানুষের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেবে।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

এম এ আউয়াল বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যে ভুল-ত্রুটি ঘটেছিল, তা সংশোধনের জন্য সরকার বিভিন্ন কমিশন করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে এবং সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, সাধারণ গরিব, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা সেখানে ঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও তা আনা হয়নি।

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, যেমন সংবিধানে কী থাকবে বা কী থাকবে না, একজন রিকশাওয়ালার তাতে কোনো আগ্রহ নেই। একজন দিনমজুর জানতে চান বাজারে চাল, আটা, দ্রব্যমূল্য কত? বাড়ি ভাড়া কত? তারা চান সামাজিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলার উন্নতি, জীবনযাপন সহজ করা। তাদের লক্ষ্য হলো আয় ও ব্যয় সামঞ্জস্য রেখে সন্তানদের পড়াশোনা করানো, দুবেলা দুমুঠো খাবার খাওয়া এবং শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন। কিন্তু জুলাই সনদে এসব বিষয়ের প্রতিফলন ঘটেনি। এই দিকগুলো থাকলে জুলাই সনদ আরও পরিপূর্ণ হতো। সংস্কারের জন্য যা করা হয়েছে, সেটি ঠিক আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি ছিল।

আউয়াল বলেন, সনদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’, কিন্তু এটি সকল রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তৈরি করা হয়নি। দেশের প্রায় ৪০ শতাংশ রাজনৈতিক দলকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাদের ছাড়া কীভাবে জাতীয় ঐক্য বা জাতীয় সনদ প্রতিষ্ঠা হবে? তাদের প্রতিনিধিদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ছিল।

বলা হচ্ছে যেসব দল ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করেছিল, তাদের ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ডাকা হয়নি- এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোষদেরকে বেশি রাখা দরকার ছিল। সেটাই ফ্যাসিবাদের জন্য সবচেয়ে বড় অমর্যাদা হতো, যদি তাদেরকেও জুলাই সনদে স্বাক্ষর করানো হতো। কারণ তারা ব্যর্থ হয়েছে সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণে।

তিনি মন্তব্য করেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়নের উপায় এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এটি কার্যকর করতে গণভোটের প্রয়োজন। পার্লামেন্টে সব রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে না। গণভোটে সাধারণ মানুষ সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাই আমি মনে করি জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদা হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, ভোটারদের মধ্যে অধিকাংশই কৃষক, শ্রমিক বা অর্ধশিক্ষিত। যখন তারা দুটি ব্যালট নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবে- একটি সংসদ নির্বাচনের জন্য, অন্যটি গণভোটের জন্য- তখন তারা সিদ্ধান্ত নিতে বিভ্রান্ত হবে। আবার গণভোটে কোনটায় ‘হ্যাঁ’ বলবে, কোনটায় ‘না’ বলবে সেটাও আছে। তাই জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আলাদা রাখা উত্তম।

কিছু রাজনৈতিক দল সংসদ নির্বাচনে পিআর পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করছে, এতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আউয়াল বলেন, আমি মনে করি শেষ পর্যন্ত সবাই নির্বাচন চায়। কেউ পিআর পদ্ধতি চায়, কেউ সরাসরি ভোট। সরকারও বারবার বলেছেন সময়মতো ভোট হবে। আমরা সরকারের প্রতি আস্থা রাখছি।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ৬টি সংগঠনের বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে- এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষ আমরা নই। দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ বা তাদের সঙ্গে যারা অন্যায়-অপরাধ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং বিচার শুরু হয়েছে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করা হোক। শেখ হাসিনাও এর মধ্যে থাকেন, আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সাধারণ সমর্থকদের কোনো দোষ নেই, তাই দলকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

ঢাকা কলেজ ও আইডিয়ালের ঘটনায় যা বললেন ডিসি মাসুদ Dec 09, 2025
বেগম রোকেয়া নারী জাগরণের আলোক দিশারি : তারেক রহমান Dec 09, 2025
img
১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা Dec 09, 2025
img
কঠিন সময়েও শান্ত থাকতেন অভিনেত্রী অলিভিয়া Dec 09, 2025
img
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে ১২ দফা সুপারিশ টিআইবির Dec 09, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র জনগণ হতে দেবে না : নজরুল Dec 09, 2025
img
অন্যের সংসার ভাঙছি না মন্তব্য শাকিবের সহ-অভিনেত্রীর Dec 09, 2025
img
এদেশে আর আমি-ডামি নির্বাচন হবে না: সেলিমুজ্জামান Dec 09, 2025
img
আগামী ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে আলোচিত সিনেমা 'নূর' Dec 09, 2025
img
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মাউশির জরুরি ৫ নির্দেশনা Dec 09, 2025
img
চরিত্রের আকার নয়, শিল্পই গুরুত্বপূর্ণ: অম্বরীশ ভট্টাচার্য Dec 09, 2025
img
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতে সিইসি Dec 09, 2025
img
মায়ামি নাকি উরুগুয়ে- ভবিষ্যৎ নিয়ে দোটানায় সুয়ারেজ Dec 09, 2025
img
বেগম রোকেয়ার আদর্শে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার Dec 09, 2025
img
সাড়ে ৩ বছরেও অনুমোদন হয়নি নীতিমালা, দায়ীদের চিহ্নিত করতে কমিটি গঠন Dec 09, 2025
img
টলিউড নয়, মঞ্চই আমার ঠিকানা: কৌশিক সেন Dec 09, 2025
img
হজের বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক তুলে নিল এনবিআর Dec 09, 2025
img
ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে গেলেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান Dec 09, 2025
img
ভারতে পর্যটক গমনে ২য় স্থানে বাংলাদেশ Dec 09, 2025
img
রাজনৈতিক ব্যক্তিদের স্বদিচ্ছা না থাকলে দুর্নীতি দমন সম্ভব নয় : অর্থ উপদেষ্টা Dec 09, 2025