মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে জামায়াত-শিবির দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলেই ছাত্রদের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে-এমনটাই দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, ইসলামী ছাত্রশিবির যখন গঠিত হয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রথম সভাপতি আমি ছিলাম। ওই সময় আমরা প্রকাশ্যে কাজ করতে পারতাম না, গোপনে নামাজ পড়তে হতো। কিন্তু জুলাই পরবর্তী সময়ে শিবির যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পেল তারপর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজ পড়ার কারণে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। সেখানে ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে শিবির জিতেছে। পরে চাকসু ও রাকসুতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিজয় লাভ করেছে শিবির।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকার বলে প্রচারণা এখন আর জনগণ বিশ্বাস করে না উল্লেখ করেন জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আমাদের বলা হয় রাজাকার, একাত্তর সালের স্বাধীনতাবিরোধী; তাহলে তাদের কল্পিত রাজাকারকে ছাত্ররা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করল? এ ট্যাবলেট আর মানুষ খায় না। মিথ্যা প্রচারণা দিয়ে আমাদের দমানোর চেষ্টা করা হয়েছে তাই ছাত্রদের মধ্যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, মিথ্যা অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছিল। একাত্তরে ১ হাজার ২০০ লোককে নাকি আমি হত্যা করেছি। একজন মহিলাকে হত্যার জন্য দায়ী করে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হলো। মামলার শুনানির সময় আইনজীবীরা সাক্ষীদের জিজ্ঞেস করতে তারা বলেছে, কেউ তিন বা ছয় কিলোমিটার দূর থেকে দেখেছে, মাঝখানে আবার বাড়ি-ঘর ছিল। এমন মিথ্যা অপবাদে আমাকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের আগের নেতাদের এরকমভাবেই ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি কিন্তু আমাদের কথা কেউ শোনেনি।
জামায়াতের শীর্ষ এ নেতা বলেন, আমার অপরাধ হলো আপনাদের পাশে থেকেছি, জনগণ ও তাদের মুক্তির জন্য কাজ করেছি। আর এ দেশকে ভারতীয় আধিপত্য থেকে বাঁচাতে ও একজন মুসলিম হিসেবে আল্লাহর আইন কায়েম করার চেষ্টা করেছি। এ অপরাধে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়ে গেল।
আগামী সংসদ নির্বাচনে রংপুর-২ আসনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, অনেক দল দেখেছেন, এবার জামায়াতে ইসলামীকে দেখেন। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা করেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনারা আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সরকারি বরাদ্দের আমানতের খেয়ানত হবে না। জনগণের কল্যাণে জনগণের আমানত ব্যবহার করব ইনশাআল্লাহ।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অনেক আলেম, যুবক, নারী-শিশুকে নির্বিচারে হত্যা এবং গুম নির্যাতন করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছে।
ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ আজ জুলুমমুক্ত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দেশ এবং সমাজে শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইসলামী শক্তির পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
লোহানীপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি অনাবিল লোহানী জাদুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির শাহ মুহাম্মদ রোস্তম আলী, সেক্রেটারি মেনহাজুল ইসলাম, বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা আশরাফ উদ্দিন, উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
আরপি/এসএন