বৃষ্টিতে ভিজে জুলাই সনদে সই করেছি, কমিশন প্রতারণা করেছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে 'প্রতারণা' ও 'বিশ্বাসঘাতকতা' করেছে। তিনি দাবি করেছেন, বিএনপি সংস্কারের পক্ষে বলেই সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বৃষ্টি উপেক্ষা করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল, কিন্তু সেই আস্থার প্রতিদান তারা পাননি।

শুক্রবার (৩১শে অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের জন্য সরাসরি অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায়ী করেন।

মির্জা ফখরুল জুলাই সনদে সই করার দিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, যেদিন ঐকমত্যের নথি (জুলাই সনদ) জমা দেওয়া হলো, আমার স্পষ্ট মনে আছে, ১৭ তারিখ সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল। তার আগে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। আমরা আবার ঠিকঠাক করে সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়ে বৃষ্টির মধ্যে ছাতা ধরে সেখানে স্বাক্ষর করলাম।

কিন্তু তিনি অভিযোগ করেন, যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে সেটি উপস্থাপন করা হলো, তখন দেখা গেল অনেক পার্থক্য। বিশেষ করে আমরা যে 'নোট অব ডিসেন্ট'গুলো (ভিন্নমতের নোট) দিয়েছিলাম, সেগুলো উল্লেখ করা হয়নি।

ফখরুল এটিকে 'ইটস অ্যা ব্রিচ অব ট্রাস্ট' (আস্থার লঙ্ঘন) হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তারা সেই আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে। জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে। আমরা যে বিশ্বাসযোগ্যতা আশা করেছিলাম, তারা তা রাখেনি।

বিএনপি সংস্কারের পক্ষে নয় এমন সমালোচনার জবাবে মহাসচিব বলেন, আমরা একটা কথা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বিএনপি সংস্কারের দল।

বিএনপির জন্মই হয়েছে সংস্কারের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বন্ধ পত্রিকাগুলো খুলে দেওয়া এবং মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি আরও যোগ করেন, রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, সবই শুরু করেছিলেন শহীদ জিয়া। পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডশিয়াল ব্যবস্থা থেকে পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে ফিরে আসেন।

ফখরুল মনে করিয়ে দেন, বেগম জিয়াই নির্বাচন করে মেজরিটি নিয়ে এসে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন, যার অধীনে চারটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

যারা বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী বলে, তাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বলে বিএনপি সংস্কার চায় না, তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করছে। বিএনপি সব সময় সংস্কারের পক্ষে। আগে ১০ দফা, পরে ২৭ দফা, এরপর ৩১ দফা দিয়েছে, সবই সংস্কারের জন্য। তিনি দাবি করেন, বিএনপি প্রতিটি সভায় উপস্থিত থেকে আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত ঐক্যমতের সনদে সই করেছে এবং কোনো বিভ্রান্তি এসে থাকলে তা ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকেই এসেছে।

এসময় জামায়াতসহ কয়েকটি দলের প্রতি ইঙ্গিত করে ফখরুল বলেন, যারা এই নিয়ে রাস্তায় নেমে গোলমাল করছেন, তাদের অনুরোধ করবো জনগণকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। এক সময় আপনারা পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলেন। আজকে জনগণ যে নির্বাচন চায়, তার বিরোধিতা করবেন না।

বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, আমরা আমাদের মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চাই। যাদের সঙ্গে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়েছি, একসঙ্গে কাজ করেছি, তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করতে চাই। তিনি সবাইকে নির্বাচনের সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠনের আহ্বান জানান।

এমআর/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ফ্যাসিবাদ সরকার যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ফেলে গেছে: শামা ওবায়েদ Oct 31, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে: নির্বাচন কমিশনার Oct 31, 2025
img
আসন্ন নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ফেক নিউজ : শফিকুল আলম Oct 31, 2025
img
মোবাইল ফোন হারালে ব্লক করার প্রক্রিয়া Oct 31, 2025
img
ভেনেজুয়েলায় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র Oct 31, 2025
img
চরমপন্থা-সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আহ্বান পররাষ্ট্র উপদেষ্টার Oct 31, 2025
img
মহানগর ও বিশেষায়িত পুলিশ ইউনিটে চালু হচ্ছে নতুন পোশাক Oct 31, 2025
img
ডাচ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে রব জেটেন Oct 31, 2025
img
কুয়েতে দুর্ঘটনার কবলে কিংসের বাস, অনুরোধ রাখেননি ম্যাচ কমিশনার Oct 31, 2025
img
তদন্তের মধ্যেই হাসপাতালে ছুটলেন শিল্পা শেঠি Oct 31, 2025
img
আমি যখন কোনো সম্পর্কে থাকি তখন আমার পুরোটা দিই: তামান্না ভাটিয়া Oct 31, 2025
img
দলগুলো ঐকমত্যে আসতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: হাসনাত Oct 31, 2025
img
জবি ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের পদত্যাগ, পরে ডিলিট করলেন পোস্ট Oct 31, 2025
img
যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা লুটপাট দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়ন করেছে : এ্যানি Oct 31, 2025
img
১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ যাচাইয়ে ডিএনসিসির কমিটি গঠন Oct 31, 2025
img
জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত আফগানিস্তানের Oct 31, 2025
img
খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেলে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল এক পর্যটকের Oct 31, 2025
img
সিলেটের জালাল আহমেদ ও যীশুসহ ১০ ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা-কর্মচারী পেলেন বিশেষ সম্মাননা Oct 31, 2025
img
তেল আবিবের সমুদ্র সৈকতে নেতানিয়াহুর ব্যঙ্গচিত্র Oct 31, 2025
img
প্রিন্স উপাধি হারালেন অ্যান্ড্রু, ছাড়তে হবে রাজকীয় প্রাসাদ Oct 31, 2025