বৈষম্যহীন রাষ্ট্র নির্মাণে নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য বারবার রক্তপাত হয়েছে। রক্ত দিয়েও অদ্যবধি আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারিনি। মর্যাদা ও অধিকারের জন্য দেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা অধিকার না করলে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সম্ভব নয়। তাই বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক ফ্রন্ট গড়ে তোলাই এই মুহূর্তের প্রধান কর্তব্য।

 শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর তোপখানা সড়কস্থ বিএমএ মিলনায়তনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনে এসব কথা বলেন তিনি। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া কনভেনশনের প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন। বক্তৃতা করেন রাজনীতিবিদ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, নাসিরউদ্দিন চিশতি প্রমুখ। 

কনভেনশনে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অধিকার বঞ্চিত প্রান্তিক মানুষ বারবার বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির কাছে প্রতারিত হয়েছে।

ক্ষমতায় যাওয়ার কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যারা নিপীড়িত মানুষের ভোট ও সমর্থন আদায় করেছে তারা কেউই শ্রেণিগতভাবে এই জনগোষ্ঠীর পক্ষের না। ফলে প্রয়োজন শেষে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এবার সময় এসেছে অন্য কারো কাছে স্বার্থ ইজারা দেওয়ার পরিবর্তে নিজের অধিকার আদায়ে নিজেই রাজনৈতিক সংগ্রামে সংগঠিত হওয়ার। তিনি আগামী দিনে প্রান্তস্থিত জনগোষ্ঠীর ঐক্য এবং বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তির সম্মিলনে সরকার গঠন করার সংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, বৈষম্যকে বুঝতে হবে আইনের মধ্য দিয়ে। দেশের নাগরিকগণ বুঝুক আর না বুঝুক আইনের দ্বারাই চূড়ান্তভাবে বৈষম্যের শিকার ও নিপীড়িত হন। তিনি বলেন, বিভিন্ন পরিচয় ও সামাজিক অবস্থানের কারণে প্রান্তিক বলে বিবেচিত জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি ‘উন্নয়ন উদ্বাস্তু’ মানুষও প্রান্তিক। গোবিন্দগঞ্জের বাগদা ফার্মে নিজ ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়া সাঁওতালরাও নিঃসন্দেহে উন্নয়ন উদ্বাস্তু। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি শ্রী কৃষ্ণ লাল।

এ অধিবেশনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কনভেনশনের ঘোষণার খসড়া উত্থাপন করেন জাতপাত বিলোপ জোটের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট উৎপল বিশ্বাস। বক্তৃতা করেন মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি অধ্যাপক নীরদ বরণ মজুমদার, খলিফায় দরবারে গাউসুল আজম ডা. শাহ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, খাসি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সহ-সভাপতি ব্লেসমি বাড়েং, বাংলাদেশ কোচ-রাজবংশী-বর্মন সংগঠনের নেতা সুকান্ত বর্মন, পাদুকা হ্যান্ড স্টিচ ইউনিয়নের সভাপতি নিরব রবিদাস, সম্পূর্ণার সভাপতি জয়া সিকদার, সুফিবাদ ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলী চিশতি, বম জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধি রনি বম, মণিপুরী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি ও শিক্ষক জিতেন্দ্র কুমার সিংহ প্রমুখ। 

জাতপাত বিলোপ জোটের আহ্বায়ক পথিক বাদলের সভাপতিত্বে কনভেনশনের তৃতীয় অধিবেশনে বক্তৃতা করেন সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম সংগ্রাম কমিটির নেতা জামিল হেমব্রম, ডাইভার্স ফ্যামিনিস্টের সংগঠক নির্ণয় ইসলাম, ডাকসুর সদস্য হেমা চাকমা, ইলা মিত্র সংসদের সংগঠক বিধান সিং, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের মাহাদেব মাহাতো, হরিজন ঐক্য পরিষদের রিপন হরিজন, ইন্ডিজিনাস স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মেনথাউ ম্রো, শব্দকর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি সুনীল শব্দকর, ওরাও জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি দীপংকর ওরাও, নয়ন মুন্ডা ও প্রণব হাজং, খুমি জাতিগোষ্ঠীর সাং খে. অং খুমি কিতং, গারো ছাত্র যুবক প্রতিনিধি অলিক মৃ প্রমুখ। 

সমাপনী অধিবেশনে বিশ্ব সুফী সংস্থার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সুরেশ্বর দরবারের পীর সাহেব শাহ নূরী দিপু সুরেশ্বরীর সভাপতিত্বে বক্তৃতা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সুফী মোবারক হোসেন মুরাদ, অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম, চা-শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি সবুজ তাঁতি প্রমুখ। 

কনভেনশনে গৃহীত ঘোষণায় বলা হয়, বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে নিপীড়িত জনতার রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, সংগঠিত হয়ে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণভাবে অধিকার আদায় করব। আমরা ন্যায়বিচার, সম্মান ও মানবাধিকারের জন্য সচেষ্ট থাকব। আমরা বিশ্বাস করি সমতার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে প্রান্তিক জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে।

আরপি/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওসমান হাদীকে হত্যাচেষ্টা : ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি Dec 17, 2025
img
পুরনো অপর্ণা দিতিপ্রিয়াকে কটাক্ষ, বাড়াবাড়ি করে ফেললেন জিতু? Dec 17, 2025
img
নাঈম শেখের দুর্দান্ত ইনিংসে মিরাজের দলের কাছে হারল শান্তরা Dec 17, 2025
img
জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির হামলা, আহত অন্তত ১২ Dec 17, 2025
img
গ্রিনের পর পাথিরানাকেও দলে টানল কলকাতা Dec 17, 2025
img
এশিয়া কাপের সেমিফাইনালে ভারত ও পাকিস্তান Dec 17, 2025
img
ফিফা দ্য বেস্ট ফুটবলার পুরস্কার জিতলেন ফরাসি ফরোয়ার্ড উসমান দেম্বেলে Dec 17, 2025
img
ওসমান হাদিকে গুলি : মূল অভিযুক্ত ফয়সালের বাবা গ্রেপ্তার Dec 17, 2025
img
হাদির ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট এবং ভুয়া নাম্বার প্লেট উদ্ধার করেছে সিটিটিসি Dec 17, 2025
img
জামায়াতে ইসলামীতে রাজাকার ছিল ৩৬ জন: দেলাওয়ার হোসেন Dec 17, 2025
img
'রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে বিএনপির হামলা, অভিযোগ জামায়াতের Dec 17, 2025
img
কলকাতা দলের পার্ট হতে পেরে আমি খুবই খুশি ও আনন্দিত, সি ইউ সুন: মুস্তাফিজ Dec 16, 2025
img
এবারের আইপিএল নিলামে মুস্তাফিজসহ দামি ১০ ক্রিকেটার Dec 16, 2025
img
হাদিকে লম্বা সময় আইসিইউতে থাকতে হতে পারে: ডা. রাফি Dec 16, 2025
img

মাসুদ সাঈদী

‘হাদির ওপর হামলা মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা’ Dec 16, 2025
img
সিলেটে আওয়ামী লীগের ৫ নেতা গ্রেপ্তার Dec 16, 2025
img
স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে এসে আটক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মী Dec 16, 2025
img
নিলামের মঞ্চে বিজয়ী শাহরুখের দল, বাজেট ছাড়াল ১২৪ কোটি Dec 16, 2025
img
ছিমছাম আয়োজনে আইনি বিয়ে সারলেন দীপান্বিতা ও গৌরব Dec 16, 2025
img
হিজাব টান দিয়ে বিতর্কে নীতীশ, প্রতিবাদে মুখ খুললেন জায়রা Dec 16, 2025