আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর জুলুম, অত্যাচার ও গণহত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গে ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে। এই গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, নানান জুলুম করে, গণহত্যা করে ক্ষমতায় টিকেছিল। এখানে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন ছিল। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই ভারতকে আওয়ামী লীগের চোখে বাংলাদেশকে দেখার নীতি সেই জায়গা থেকে সরে আসতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
‘বাংলাদেশে কে সরকার গঠন করলো, কে করলো না বা বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের বা প্রভাব বিস্তারের যে চেষ্টা ভারত সবসময় করে আসে। সেই জায়গা থেকে ভারতকে ফেরৎ আসতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমতা এবং মর্যাদার ভিত্তিতে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যে সংকটগুলো রয়েছে, নদী এবং সীমান্ত হত্যাসহ আরো কতগুলো বিষয় সেই সংকটগুলা সুরাহা করতে হবে।’
ভারতকে সবার আগে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণহত্যাকারী কাউকে সেই দেশে ঠাঁই দেওয়া যাবে না। ভারত যখন শেখ হাসিনাকে সেই দেশে আশ্রয় দিয়েছে, এর মধ্য থেকেই কিন্তু তারা গণহত্যাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে সেই জায়গা থেকে ভারতের সঙ্গে যতদিন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশ্নে ভারত তার অবস্থান পরিষ্কার না করছে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নতুন করে সম্পর্কে হাত বাড়িয়ে না দিচ্ছে, ততদিন কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতলতা থাকবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির জায়গা থেকেও যেমন এই বিষয়টা থাকবে এবং বাংলাদেশের সামগ্রিক জনগণের জায়গা থেকেও ভারতকে তারা প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, সংস্কারের পক্ষে কেউ না থাকলে তাদের সঙ্গে আমাদের জোটে যাওয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের মৌলিক দাবি, যেমন– সংস্কার ও বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলা, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ থেকে বাংলাদেশকে একেবারে বের করে আনা, বৈদেশিক আধিপত্যবাদ থেকে বের করে আনা। এই দাবিগুলোর সঙ্গে কাছাকাছি কেউ থাকলে আমাদের যদি ঐক্যবদ্ধ হতে হয় বা সমঝোতায় যেতে হয়, সেটি তখন আমরা বিবেচনায় রাখব। দরজা আমাদের খোলা আছে। কিন্তু এখনও কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ৩০০ আসনে ধরে এগোচ্ছি। ঢাকা থেকেই আমি দাঁড়াব। আর কে কোন আসনে দাঁড়াবে, আমরা প্রার্থীর তালিকা এই মাসেই দিতে পারি।এনসিপির এ নেতা বলেন, জামায়াতের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে তারা নির্বাচনকে পেছনোর অভিসন্ধি বা দুর্ভিসন্ধি আছে কি না। এক দল সংস্কারকে ভেস্তে দিচ্ছে, আরেক দল নির্বাচনকে পিছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এর কোনোটাই চাই না। আমরা চাই, যথাসময়ে নির্বাচন হবে এবং জুলাই সনদও আইনি ভিত্তি পাবে। তাই এই দুইটি দলসহ সব দলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে এক জায়গায় আসে। আমরা এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে চাই।
তিনি বলেন, গণভোট নির্বাচনের দিনও হতে পারে, নির্বাচনের আগেও হতে পারে, তবে এটিই মূল বিষয় নয়। এটি আগে করলেও ভালো, কিন্তু সমস্যা থাকলে নির্বাচনের দিনও করা যেতে পারে। এটা মূল বিষয় নয়। আদেশ জারি করাও বাস্তবায়ন করাটা মূল বিষয়। জুলাই সনদ তথাকথিত প্রেসিডেন্ট যিনি আছেন, অর্থাৎ, প্রেসিডেন্ট অফিস থেকে জারি হলে এই জুলাই সনদের আইনি ও রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি হবে না। বরং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কফিনে শেষ পেরেক মারা হবে। তাই জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জারি করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাহলে শুধু নির্বাচনে জয় নয়, বরং রাজনীতি থেকে তাদের হারিয়ে যেতে হবে।