পর্যটক নেই সেন্টমার্টিনে, ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস

পর্যটক খরায় ফাঁকা সেন্টমার্টিন। কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে দুটি জাহাজকে প্রশাসন চলাচলের অনুমতি দিলেও গত এক সপ্তাহেও যায়নি কোনো জাহাজ। ফলে জমছে না ব্যবসা-বাণিজ্য। খাঁ খাঁ করছে জেটিঘাট। এতে সংকট বেড়েছে দ্বীপে। হতাশ দ্বীপবাসির দাবি, বিধি-নিষেধ শিখিল করা না হলে আর্থিক সংকট আরও বাড়বে মানুষের।

বিষাদে ভরা পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপ। নেই কোনো ভিড়; ফাঁকা হোটেল, রেস্টুরেন্ট আর জনশূন্য সৈকত। জেটিতেও নেই জাহাজের হুইসেল। সবখানে একরাশ সুনশান নীরবতা।

দ্বীপবাসীর অভিযোগ, আগে অক্টোবর থেকেই পর্যটক আসা শুরু হলেও গত বছর থেকে পরিবেশ রক্ষার নামে নানা বিধিনিষেধে থমকে গেছে পর্যটন। এবারও নভেম্বরের শুরুতে ভ্রমণ উন্মুক্ত হলেও জাহাজ চলাচল না করায় দেখা নেই পর্যটকের। আগে চার মাস ব্যবসা করে সারাবছর সংসার চললেও এখন মাত্র দুই মাসের আয়েই টিকে থাকতে হচ্ছে। অভাব-অনটনে অনেকেই জীবিকার খোঁজে দ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

দ্বীপের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘দ্বীপে জেটিঘাটে আমার দুটি দোকান। কর্মচারী রয়েছে ৩ জন। এখন দোকান ভাড়া দিতে পারছি না। কর্মচারী ও আমার চলতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন লোকসানে আছি, একবেলা খেতে পারলে অন্য বেলায় খেতে পারছি না। এমন অবস্থায় আছি। শুধু আমি না এখানকার হোটেল, রেস্তোরা কিংবা দোকানদার; সবাই লোকসানে আছে।’

দ্বীপের আরেক বাসিন্দা জিয়া খান বলেন, ‘গত বছর ২ মাস পর্যটন মৌসুম পেয়েছিলাম। তখন আয় রোজগার হয়েছিল। যা দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ মাস সংসার চালিয়েছি। কিন্তু এরপর থেকে দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে আমাদের জীবনে।’

দ্বীপের ইজিবাইক চালক মো: রহিম বলেন, ‘দ্বীপে পর্যটক না আসায় অনেক কষ্ট হচ্ছে। সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ব্যাটারি চার্জের বিলও উঠে আসছে না। ব্যাটারি চার্জের বিল ৫০০ টাকা আর সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২০০ টাকাও আয় হয় না। কারণ এখানে তো সবাই স্থানীয়। পর্যটক আসলে তো আয় হয়।’

সেন্টমার্টিনে হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্ট মিলে দুই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকলেও পর্যটক না থাকায় পড়েছে চরম মন্দায়।

দ্বীপের সী প্রবাল বিচ রিসোর্টের পরিচালক আব্দুল মালেক বলেন, ‘পর্যটক না আসায় হোটেল মোটেলগুলো বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। কাজ কর্মেও হাত দেয়া যাচ্ছে না। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছি। জাহাজ কখন ছাড়বে। গতবছরও নভেম্বরে জাহাজ দিনে গিয়ে দিনে ফেরার যে নির্দেশনা ছিল, তার জন্য নভেম্বরে একদিনের জন্য জাহাজ ছাড়েনি। এবছরও দেখছি একই অবস্থায়। এমন পরিস্থিতিতে আমরা ভালো নেই।’

সেন্টমার্টিন হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি এম এ রহিম জিহাদী বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা নভেম্বরে পর্যটকরা দ্বীপে যেতে পারবে, কিন্তু থাকতে পারবে না। যার কারণে দ্বীপবাসির মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার পাশাপাশি মানুষের আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে পর্যটন। এই পর্যটন মৌসুমে নভেম্বরেও জাহাজ চলাচল না করায় আয়ের পথও বন্ধ। যার কারণে দ্বীপের অনেক মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: উন্মুক্ত হলেও কেন নভেম্বরে সেন্টমার্টিন যাচ্ছে না জাহাজ?

এদিকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশঙ্কা- দ্বীপের ৮০ শতাংশ মানুষ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল; মাত্র দুই মাসের আয় দিয়ে সারাবছর টিকে থাকা অসম্ভব, যা শিগগিরই জীবিকা ও খাদ্য সংকটে রূপ নিতে পারে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপের মানুষজন খুবই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছে। অনেকের আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বীপও ছেড়েছে। সাগরে মাছ ধরা না পড়ায় জেলেরাও কষ্টে আছে। সবমিলিয়ে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে অনেকেই অনাহারে মরবে।’

৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। নিরিবিলি প্রকৃতির এই দ্বীপ এখন নীরবতা আর উদ্বেগে ঘেরা। পর্যটনের এই স্থবিরতা কতদিন চলবে- সেটিই এখন সেন্টমার্টিনবাসীর বড় প্রশ্ন।

কেএন/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
১০ বছর পর আর্জেন্টিনার বর্ষসেরা ফুটবলার ডি মারিয়া Dec 24, 2025
img

মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী

আমরা সবাই বুকে বুক মিলিয়ে ধানের শীষ ও খেজুরগাছ প্রতীক নিয়ে কাজ করব Dec 23, 2025
img
আন্তর্জাতিক দাবায় চ্যাম্পিয়ন মনন রেজা নীড় Dec 23, 2025
img
রংপুর-২ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন এটিএম আজহারুল ইসলাম Dec 23, 2025
img
ঢাকা থেকে বিপিএল সরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মুখ খুললেন বিসিবি সভাপতি Dec 23, 2025
img
সামান্থাকে নিয়ে জনতার টানাহেঁচড়া, রাগের বশে কী করলেন স্বামী রাজ? Dec 23, 2025
img
বাংলাদেশে পা রেখেছেন মোহাম্মদ আমির, খেলবেন কোন দলে? Dec 23, 2025
img
সুনিল গাভাস্কারের ব্যক্তিসত্তা রক্ষায় নজির সৃষ্টি করল আদালত Dec 23, 2025
img
তৈমুরের জন্মদিনে মেসি থিমে বার্থডে পার্টির আয়োজন কারিনার! Dec 23, 2025
img
টানা ৩ দফায় বাড়ল রুপার দাম, ভরি কত? Dec 23, 2025
img
স্বাস্থ্য খাতে ব্রিটিশ মডেল আনতে চায় বিএনপি: ডা. রফিকুল ইসলাম Dec 23, 2025
img
বহু বছর পর ফের সামনে এলো শেফালি-হর্ষের বিচ্ছেদের গল্প Dec 23, 2025
img
বরিশাল-৫ আসন অবশ্যই আমাদের থাকবে : ফয়জুল করীম Dec 23, 2025
img
ওসমান হাদির খুনিদের বিচার নিশ্চিত করতে ‘শহিদি শপথ’ ইনকিলাব মঞ্চের Dec 23, 2025
img
কর্মপরিষদসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতে নারীর অংশগ্রহণ ৪২ শতাংশ : আযাদ Dec 23, 2025
img
‘মা-বাবা তোমায় অগাধ ভরসা করে’, আহানের জন্মদিনেই প্রেমে সিলমোহর অনীতের? Dec 23, 2025
img
বিপিএলে একই দলে মাঠে নামবেন বাবা ও ছেলে Dec 23, 2025
img
হাদি হত্যা: মূল অভিযুক্তের ব্যাংক হিসাব নিয়ে আদালতের নতুন নির্দেশনা Dec 23, 2025
img
ওয়েব সিরিজের প্রোমোতে রোহিত, বিনোদন দুনিয়ায় পা রাখা নিয়ে শুরু জল্পনা Dec 23, 2025
img
ঈশ্বরের চেয়ে তো মোদী ভাল, উনি অন্তত মানুষের খেয়াল রাখেন: জাভেদ আখতার Dec 23, 2025