অবৈধ বিজ্ঞাপন থেকে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার আয় মেটার

বিশ্বের শীর্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মস (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মূল কোম্পানি) নিজেদের আয়ের বড় একটি অংশ অবৈধ বা প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে অর্জন করছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মেটার অভ্যন্তরীণ নথি অনুযায়ী, গত বছর কোম্পানিটি অনুমান করেছিল যে তাদের মোট বার্ষিক আয়ের প্রায় ১০ শতাংশ (১৬ বিলিয়ন ডলার) এসেছে এমন বিজ্ঞাপন থেকে যা প্রকৃতপক্ষে ভুয়া বা অবৈধ।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত তিন বছর ধরে মেটা তাদের ব্যবহারকারীদের অবৈধ জুয়া, মিথ্যা বিনিয়োগ প্রকল্প এবং নিষিদ্ধ ওষুধ সংক্রান্ত প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এসব বিজ্ঞাপন সাধারণত এমন কোনো পণ্য বা সেবা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয় যা বাস্তবে নেই। ফলে অনেক ব্যবহারকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

মেটার বিজ্ঞাপন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা প্রতারণার আশঙ্কা নিরূপণ করতে পারে। তবে কোম্পানিটি কেবল তখনই বিজ্ঞাপনদাতার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে যখন তারা ৯৫ শতাংশ নিশ্চিত হয় যে সেটি প্রতারণামূলক। অন্যদিকে যারা সন্দেহজনক হলেও পুরোপুরি প্রমাণিত নয়, তাদের কাছ থেকে মেটা বেশি অর্থ নেয় বিজ্ঞাপন চালাতে। এতে বিজ্ঞাপন বন্ধ না হয়ে বরং কোম্পানির আয় আরও বাড়ে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন দাবি করেছেন, প্রকাশিত নথিগুলো কোম্পানির কাজের কৌশলকে "ভুলভাবে উপস্থাপন" করেছে। তিনি জানান, গত ১৮ মাসে মেটা প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত ব্যবহারকারীর অভিযোগ ৫৮ শতাংশ কমাতে পেরেছে। ইতোমধ্যে ১৩ কোটি ৪০ লাখের বেশি ভুয়া বিজ্ঞাপন মুছে ফেলা হয়েছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন বিপুল আয় প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন থেকে আসা মেটার নৈতিক অবস্থান নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরাপত্তা ও আস্থার জায়গায় যদি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় তবে তা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহারকারীদের আস্থার সংকটে ফেলতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেটাকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিজ্ঞাপন যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করা ছাড়া ব্যবহারকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। অন্যথায় মুনাফার দৌড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পরিবেশ আরও অনিরাপদ হয়ে উঠবে বলে সতর্ক করেছেন তারা।

টিএম/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তারেক রহমান দেশে ফেরায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দূর হলো : আখতার হোসেন Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের নেতৃত্বে নির্বাচনে আমরা জয়ী হবো : মির্জা ফখরুল Dec 25, 2025
img
অভিমান ভেঙে নোয়াখালী এক্সপ্রেসের অনুশীলনে ফিরলেন সুজন Dec 25, 2025
img
রাজধানী ছাড়ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা Dec 25, 2025
img
মাকে দেখতে এভারকেয়ারে তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
সিলেটের অধিনায়ক মিরাজ Dec 25, 2025
img
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ খ্যাত সেই ভাষণে কী বলেছিলেন মার্টিন লুথার কিং? Dec 25, 2025
img
গণসংবর্ধনায় তারেক রহমানের বক্তব্যে মুগ্ধ পরীমনি Dec 25, 2025
img
মনোনয়ন সংগ্রহ করলেন জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা রুহুল আমিন হাওলাদার Dec 25, 2025
img
কোটি কোটি টাকা বক্সঅফিস কালেকশন ভুয়া, স্বীকার করলেন দেব Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের পরিকল্পনার বিষয়ে নজর রাখবে জামায়াত : শফিকুর রহমান Dec 25, 2025
img
বড়দিনের বার্তায় ‘পুতিনের মৃত্যু’ কামনা জেলেনস্কির Dec 25, 2025
img
চট্টগ্রামের খেলোয়াড় ও কোচদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি নিশ্চিত করলো বিসিবি Dec 25, 2025
img
৫০০ টাকা বাজিতে ডুব, প্রাণ গেল যুবকের Dec 25, 2025
img
জাতীয় দলে ফেরার কতটুকু সম্ভাবনা সাকিবের? Dec 25, 2025
img
বিশেষ চেয়ার সরিয়ে সাধারণ চেয়ারে বসলেন তারেক রহমান Dec 25, 2025
img
জকসু নির্বাচনে ভোট গনণা হবে ওএমআর মেশিনে Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানকে স্বাগত জানালেন নাহিদ ইসলাম Dec 25, 2025
img
আজ সঞ্জীব চৌধুরীর জন্মদিন Dec 25, 2025
img
তারেক রহমানের আজকের বক্তব্য ইতিবাচক স্বপ্নের ইঙ্গিত দেয়: লুৎফর হাসান Dec 25, 2025