বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি

অক্টোবরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৬৯ জন

বিদায়ী অক্টোবর মাসে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে ৪৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৯ জন নিহত ও ১ হাজার ২৮০ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে রেলপথে ৫২টি দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। অন্যদিকে নৌপথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন। সবমিলিয়ে সড়ক, রেল ও নৌপথে মোট ৫৩২টি দুর্ঘটনায় ৫২৮ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩১০ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (১২ নভেম্বর) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ তথ্য জানান। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে— ১২৬টি দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ৩৪৩ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ বিভাগে— ২০টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত ও ৩৭ জন আহত হয়েছেন।

এই সময়ে ১৭০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৬ জন নিহত ও ১৩৭ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় ৫০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩৯ জন চালক, ১১৯ জন পথচারী, ২৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৮ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন শিক্ষক, ৯৭ জন নারী, ৪০ জন শিশু, ১ জন আইনজীবী, ২ জন সাংবাদিক, ৩ জন প্রকৌশলী এবং ১৮ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ছিলেন। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন ৪ জন পুলিশ সদস্য, ১ জন র্যাব সদস্য, ১ জন বিজিবি সদস্য, ১ জন আইনজীবী, ৩ জন প্রকৌশলী, ১৩৩ জন চালক, ৯৯ জন পথচারী, ৫৮ জন নারী, ৩৫ জন শিশু, ৩৫ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন পরিবহন শ্রমিক, ১৩ জন শিক্ষক ও ১৪ জন রাজনৈতিক নেতাকর্মী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনায় মোট ৭৭২টি যানবাহনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬ দশমিক ০৬ শতাংশ বাস, ১২ দশমিক ৮০ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৮ দশমিক ৪১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা এবং ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।

মোট দুর্ঘটনার ৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৫ দশমিক ১৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০ দশমিক ৬৩ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটেছে। স্থানভেদে দেখা যায়, ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে, ২৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৭ দশমিক ২৯ শতাংশ ফিডার রোডে, ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরে, ১ দশমিক ২৭ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরে এবং ০ দশমিক ৬৩ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে ঘটেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, অক্টোবর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি ও নসিমন-করিমনের অবাধ চলাচল, জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং ও সড়কবাতির অভাব, মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁক সৃষ্টি, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি ও যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন এবং বিশ্রামহীনভাবে গাড়ি চালানো।

দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক দ্রুত মেরামত করা, রাতে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও যানবাহনের ডিজিটাল ফিটনেস প্রদান, গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে ফুটপাত ও সার্ভিস লেনের ব্যবস্থা করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা। এছাড়া মহাসড়কে পথচারী পারাপার, রোড সাইন ও রোড মার্কিং স্থাপন করা, সড়ক পরিবহন আইনকে উন্নত বিশ্বের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা, সারাদেশে আধুনিক বাস নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও নিয়মিত রোড সেফটি অডিট করা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন স্ক্র্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া, প্রশিক্ষণরত চালকদের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও আয়কর মওকুফ করা এবং মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিকশার আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা।

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশের টিকিট কাটা যাবে অনলাইনে Nov 12, 2025
img
রিয়ামনির মামলায় বিপাকে হিরো আলম Nov 12, 2025
img
বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার আমার আছে: ট্রাম্প Nov 12, 2025
img
রাজনীতিতে ফিরতে আওয়ামী লীগের পুরনো কৌশল : রনি Nov 12, 2025
img
পে কমিশনের জন্য আলাদা একটি কমিশন কাজ করছে: অর্থ উপদেষ্টা Nov 12, 2025
img
রাজধানীতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ২৩৫৬ মামলা Nov 12, 2025
img
জাপা ও ১৪ দলকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে ডাকা উচিত হবে না : রাশেদ খান Nov 12, 2025
img
জামায়াতসহ আট দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Nov 12, 2025
img
প্রভাসের ২৩ বছরের চলচ্চিত্রজীবন উদযাপনে ‘দ্য রাজা সাব’-এর নতুন পোস্টার Nov 12, 2025
img
এখনো হাসপাতালে হাসান মাসুদ Nov 12, 2025
img
রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পরিবারসহ ৬ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা Nov 12, 2025
img
বাঙালি মূলত ক্ষমতাকে ভয় পায় : গোলাম মাওলা রনি Nov 12, 2025
img
আগামী নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করবে আওয়ামী লীগ : মাসুদ কামাল Nov 12, 2025
img
বক্স অফিসে ব্যর্থ ইমরান হাশমি-ইয়ামি গৌতমের ‘হক’ Nov 12, 2025
img
সিস্টেম মেনে চলার গুরুত্ব তুলে ধরলেন অম্বরীশ ভট্টাচার্য Nov 12, 2025
img
মেয়ের চোখে প্রিয় নায়ক শাকিল খান নিজেই Nov 12, 2025
ভোলা-বরিশাল সেতুসহ ৫ দফা দাবিতে চরফ্যাশন থেকে ঢাকা লং মার্চ Nov 12, 2025
খুলনায় সেনাবাহিনীর ৪৪তম সম্মেলনে সেনাপ্রধান Nov 12, 2025
img
বিশ্বকাপ খেলার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন না মেসি! Nov 12, 2025
img
শপথ নিলেন হাইকোর্টের ২১ বিচারপতি Nov 12, 2025