গণভোট কিংবা সাংবিধানিক আদেশ জারির কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও ন্যাশনাল লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন মো. ফারুক রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুক রহমান বলেন, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র মানে দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র। যারা নির্বাচন বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে, তাদের পরিণতি ভালো হবে না। এসব জেনেই তারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণের প্রচেষ্টায় সব ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। জনগণের ভোটাধিকার যারা বাধাগ্রস্ত করবে, জনগণ তাদের রুখে দেবে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য আওয়ামী লীগ তাদের ১৫ বছরের শাসনামলে দেশে অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ কোনো নির্বাচন হতে দেয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। সেই সঙ্গে বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও এই সময়ে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছিল। সব মিলিয়ে দীর্ঘ দেড় দশক ধরে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
ফারুক রহমান বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হলেও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। দেড় বছর ধরে একটি অনির্বাচিত ও জনগণের প্রত্যক্ষ ম্যান্ডেটবিহীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারের প্রধান কর্তব্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব আশু প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা অর্থাৎ দেশকে পুনরায় কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা। কিন্তু সেই সংস্কার প্রক্রিয়া অগ্রসর করতেই দেড় বছর কাটিয়ে দিয়েছে তারা। যদিও তার আগেই সরকারপ্রধান ঘোষণা করেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কিন্তু বারবার এমন ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনটি হবে কি না- তা নিয়ে সব মহলে সন্দেহ দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এর মধ্যেই আবার ‘জুলাই সনদ’ ঘিরে সরকার ও কিছু মহলের অবস্থান ও তৎপরতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ও সংবিধানের বেশ কিছু বিধান সংস্কারে একমত হয়েছে। আবার অনেক বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি করেনি, সেগুলোকেই ‘ঐকমত্য’ ধরে নিতে হবে। কিন্তু তা না করে ঐকমত্য কমিশনের সব সিদ্ধান্তকেই ‘জুলাই সনদে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, এখন আবার একটি পক্ষ জাতীয় নির্বাচনের আগেই ‘সাংবিধানিক আদেশ’ জারি এবং গণভোট আয়োজনের মাধ্যমে তা কার্যকর করার দাবি তুলছে। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলো যেসব বিষয়ে সর্বসম্মত হতে পারেনি, সে বিষয়ে ‘সাংবিধানিক আদেশ’ জারি ও গণভোট আয়োজন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর গণভোট কিংবা সাংবিধানিক আদেশ জারির কোনো এখতিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। ফলে গায়ের জোরে গণভোট আয়োজন এবং অতীতের মতোই নীলনকশার মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ ভোট জেতানোর চেষ্টা করা হলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের সব প্রচেষ্টা ও প্রত্যাশাকে বিনষ্ট করবে।
সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি কে. এম. রকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সমাজকল্যাণ পরিষদের সভাপতি গিয়াসউদ্দিন খোকন, ন্যাশনাল লেবার পার্টির মুখপাত্র মো. শরিফুল ইসলাম, সমবায় দলের নেতা শাহ আলম বাবলুপ্রমুখ।
আইকে/এসএন