পাকিস্তানের ২ বিচারপতির পদত্যাগ

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র বিচারপতি মনসুর আলী শাহ এবং বিচারপতি আথার মিনল্লাহ পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী পাস হওয়ার পর একযোগে তারা তাদের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারির কাছে জমা দেন। এই পদত্যাগ পাকিস্তানের বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত তৈরি করেছে।

বুধবার জাতীয় পরিষদে এবং বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে পাস হয় বহুল আলোচিত ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনী বিল। আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার সংশোধিত বিলটি উপস্থাপন করেন, যা ৯৬ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষে ৬৪ ভোটে অনুমোদিত হয়। এই বিলের মাধ্যমে পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের উপরে একটি নতুন ফেডারেল সাংবিধানিক আদালত গঠনের বিধান করা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনে।

১৩ পৃষ্ঠার পদত্যাগপত্রে বিচারপতি মনসুর আলী শাহ লিখেছেন, ‘২৭তম সংশোধনী পাকিস্তানের সংবিধানের ওপর ভয়াবহ আঘাত। এটি সুপ্রিম কোর্টকে ভেঙে দিয়েছে, বিচার বিভাগকে নির্বাহী শাখার নিয়ন্ত্রণে এনে দিয়েছে এবং আমাদের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের হৃদয়ে আঘাত করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির সর্বোচ্চ আদালতের ঐক্য ভেঙে দিয়ে এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, পাকিস্তানকে কয়েক দশক পিছিয়ে দিয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সাংবিধানিক শৃঙ্খলার এই ধরনের বিকৃতি টেকসই নয় এবং সময়ের সাথে সাথে এটি বিপরীত হবে।’

বিচারপতি শাহ উল্লেখ করেন, সংশোধনীর ফলে সুপ্রিম কোর্ট এখন “সংবিধানিক কর্তৃত্বহীন” হয়ে পড়েছে এবং এমন আদালতে দায়িত্ব পালন করা একটি সাংবিধানিক অন্যায়ের প্রতি নীরব সম্মতির সমান। তিনি বলেন, ‘আমি এমন আদালতে থাকতে পারি না যা তার সংবিধানিক ভূমিকা হারিয়েছে; পদত্যাগই এখন আমার শপথ রক্ষার একমাত্র সৎ পথ।’ বিচারপতি শাহ আরও অভিযোগ করেন, সংশোধনীটি কোনো আলোচনা বা পরামর্শ ছাড়াই পাস করা হয়েছে, যার লক্ষ্য হলো বিচার বিভাগকে নির্বাহী প্রভাবাধীন করা। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান প্রধান বিচারপতি ইয়াহিয়া আফ্রিদি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার পরিবর্তে নিজের অবস্থান রক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েছেন।’

তার ভাষায়, ‘সরকার ও বিচার বিভাগের নেতৃত্ব উভয়েই তাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক বৈধতা হারিয়েছে, তবুও তারা বিচার কাঠামো পরিবর্তনের সাহস দেখাচ্ছে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘২৭তম সংশোধনী পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠিত বিচার কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টকে কেবল একটি আপিল ট্রাইব্যুনালে পরিণত করেছে, যা আর রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাচার রোধ বা মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে সক্ষম নয়।’

বিচারপতি আথার মিনল্লাহও তার পদত্যাগপত্রে সংবিধানকে “অস্তিত্বহীন” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই সংশোধনী শুধু আদালতের ক্ষমতা খর্ব করেনি, বরং পাকিস্তানের সংবিধানকেই কার্যত বিলুপ্ত করেছে।’

দুই বিচারকের এই পদত্যাগ পাকিস্তানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সাংবিধানিক ভারসাম্য ও নির্বাহী প্রভাব নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এটি দেশটির বিচারব্যবস্থার জন্য এক ঐতিহাসিক সংকট মুহূর্ত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: জিও নিউজ

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইব্রাহিমাবাদ পর্যন্ত আবার চলছে ‘নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস’ Dec 29, 2025
img
নাবিক ও প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিদপ্তরের নাম পরিবর্তন Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তারেক রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালেন ফখরুল Dec 29, 2025
img
গ্লোব সকার অ্যাওয়ার্ডে বড় জয় কার, কে কোন বিভাগে পেলেন পুরস্কার Dec 29, 2025
img
শহীদ হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ভারতীয় গুপ্তচর অপসারণের দাবি মঞ্চ ২৪- এর Dec 29, 2025
img
নয়াপল্টনে যাচ্ছেন তারেক রহমান, নিরাপত্তা জোরদার Dec 29, 2025
img
কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক পেলেন ৭২ বিজিবি সদস্য Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান Dec 29, 2025
img

বিপিএল ২০২৬

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে রংপুর রাইডার্স Dec 29, 2025
img
ভিড় সামলাতে হোঁচট খেলেন বিজয়, ভিডিও ভাইরাল Dec 29, 2025
img
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মাহবুব উদ্দিন খোকন Dec 29, 2025
img
ফিরে দেখা ২০২৫: তারকা অঙ্গনে যাদের বিচ্ছেদ হয়েছে Dec 29, 2025
img
বিপিএলে রাজশাহীতে যুক্ত হলেন আরব আমিরাতের ওপেনার Dec 29, 2025
img
জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে বিজিবিকে প্রস্তুতির নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার Dec 29, 2025
img
মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম Dec 29, 2025
img
তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আব্দুস সালাম Dec 29, 2025
img
৭ জানুয়ারির মধ্যে হজ ফ্লাইট সূচি প্রকাশের অনুরোধ Dec 29, 2025
img
খালেদা জিয়ার ৩ আসনে তিন বিকল্প প্রার্থী প্রস্তুত Dec 29, 2025
img
আজও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিশোরগঞ্জের নিকলীতে Dec 29, 2025