সাদিক কায়েম

কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমাদের আবারও রাস্তায় নামতে হবে

বাংলাদেশে কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমরা জুলাইয়ে যেমন রাস্তায় নেমেছি, ঠিক একইভাবে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম।

তিনি বলেন, আজ আমরা শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ভুলে যাচ্ছি, ছাত্রসংগঠনগুলোতে দেখা দিচ্ছে দাম্ভিকতা- তাই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ জারি রাখার আহ্বান জানাই। রাজনৈতিক দলগুলো আজ ফ্যাসিবাদের ভাষায় কথা বলছে এবং তাদের দোসররা এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। তাই আমরা বলতে চাই আপনারা খুনি হাসিনা ও তার দোসরের মতো ভুল করবেন না। ইসলামী ছাত্রশিবির আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না- বাংলাদেশে কেউ নব্য ফ্যাসিস্ট হতে চাইলে আমরা জুলাইয়ে যেমন রাস্তায় নেমেছি, আবারও ঠিক একইভাবে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। মানুষের আজাদীর লড়াই ইসলামী ছাত্রশিবির কিয়ামত পর্যন্ত চালিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলতে চাই- খুনি হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার করে দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির ব্যবস্থা করতে হবে, আর ফ্যাসিবাদের দোসরদের যেখানে পাওয়া যাবে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে, কারণ তারা রাজনৈতিক দল নয়- তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে সাদিক কায়েম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ভূমিকা আমরা দেখেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল জনগোষ্ঠী সে সময় শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশে ৩০ জুলাই সবচেয়ে বড় মিছিলটি হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার রাবির ভাইয়েরা সেদিন সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রাস্তায় নামার পরেই দেশের সকলে রাস্তায় নেমেছিল।

সাদিক কায়েম বলেন, জুলাই বিপ্লবে রাজশাহী মহানগরের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ আলী রায়হান ভাইও শহীদ হয়েছিল। এই ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করার জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহীর সমগ্র মানুষের অগ্রণী ভুমিকা আমরা দেখেছি।

বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে খুনি হাসিনা, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও তার দোসররা বাংলাদেশের প্রতিটা ক্যাম্পাসে একটি কনসেনট্রেট ক্যাম্প তৈরি করেছিল। গণরুম-গেস্টরুম কালচারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারকে তারা ক্ষুণ্ন করেছিল। সেই আমলে ক্যাম্পাসগুলোতে কেউ ইসলাম চর্চা করতে পারতো না, কেউ যদি ইসলাম চর্চা করতো, নামাজ পড়তো, আল্লাহ-রাসুলের কথা বলতো, তখন তাকে বিভিন্নভাবে ট্যাগিং করা হতো। আজকে এই জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে এবং অসংখ্য ভাই-বোনের সেক্রিফাইসের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও আমাদের মুক্তি আসেনি।

অনুষ্ঠানে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ ছাত্রশিবির রাবি শাখা নবীনবরণ আয়োজন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আপনারা অনেকেই জানেন সেদিন কী হয়েছিল। সেই ঘটনা আমাদের এখনো আবেগতাড়িত করে। সেই নবীনবরণ অনুষ্ঠানকে অন্যান্য মতাদর্শের ভাইয়েরা বুমেরাং হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। নবীনবরণ আয়োজনের পর আমাদের চার ভাই আর ঘরে ফিরে যেতে পারেনি। তাদের আঘাতে আমাদের চারজন ভাই শহীদ হয়েছিলেন। তারা হলেন সাব্বির ভাই, হামিদ ভাই, আইয়ুব ভাই এবং জব্বার ভাই। তারা ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সারা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ হিসেবে আজও বিবেচিত। এ ঘটনার পর থেকেই প্রতি বছর ১১ মার্চ ছাত্রশিবির ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে। এটি ছিল রাবি ছাত্রশিবিরের প্রতি জুলুমের ইতিহাস।'

তিনি আরও বলেন, সেই দিন আজ পাল্টে গেছে। এই নবীনবরণ করতে গিয়ে আমার ভাইয়েরা শহীদ হয়েছিল, আর আজ আমরা সেই অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারছি -এজন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৮২ সালের পর আজই প্রথম আমাদের ক্যাম্পাসের ভেতরে এত বড় নবীনবরণের আয়োজন করেছি। এর আগে ক্যাম্পাসের বাইরে আয়োজন করলেও সেখানে আমরা আমাদের বোনদের রাখতে পারিনি। কিন্তু এবার আমরা তা করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের নবীনবরণ সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে নবীনবরণ হলেও ক্যাম্পাসের ভেতরে এটি প্রায় সাড়ে চার দশক পর প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলো।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম এবং ও চাকসুর ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি। প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মালদ্বীপে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 31, 2025
img
শাহজাহান চৌধুরীর হাতে নগদ ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, হলফনামায় ৭১ মামলা Dec 31, 2025
img
২ দেশের সম্পর্ক সমৃদ্ধ হবে তারেক রহমানের নেতৃত্বে, আশা নরেন্দ্র মোদীর Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে আরো বেগবান করবে : প্রধান উপদেষ্টা Dec 31, 2025
img
‘হ্যাপি ২০৩০’ লিখে ট্রলের শিকার বাদশা Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে দেশ সুবিচারের পথে আরও এগিয়ে যাবে: গোলাম পরওয়ার Dec 31, 2025
img
নববর্ষের অঙ্গীকার হবে-অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
চীনে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 31, 2025
img
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াল ৩৩ বিলিয়ন ডলার Dec 31, 2025
img
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আপসহীন যোদ্ধা ছিলেন মাহমুদুল হাসান: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
দুঃসংবাদ দিয়ে বছর শেষ হলো এমবাপ্পের! Dec 31, 2025
img
গোপনে মেয়ের বিয়ে দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান Dec 31, 2025
img
১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিল ফ্রান্স Dec 31, 2025
img
৫০তম ছবিতে সমাজসেবকের ভূমিকায় নতুন চ্যালেঞ্জে দেব Dec 31, 2025
img
মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব Dec 31, 2025
img
লিখে নিন, এবার পশ্চিমবঙ্গে আমাদেরই সরকার: অমিত শাহ Dec 31, 2025
মন প্রশান্ত করার উপায় | ইসলামিক টিপস Dec 31, 2025
img
বিতর্কের মুখে শচীন টেন্ডুলকারের কন্যা সারা! Dec 31, 2025
img
তারেক রহমানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
img
জার্মানিতে ব্যাংক ডাকাতি, লুট প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা Dec 31, 2025