প্রকৃতি কন্যা বিজয়পুরের সাদামাটির পাহাড়

ভ্রমণ মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী! প্রতিদিন কাজের প্রয়োজনে মানুষকে ভ্রমণ করতে হয় নানান জায়গায়। আর কাজ করতে করতে যখন সে ক্লান্ত, বিষ্ন্ন; তখনই প্রয়োজন হয় একটু অবসরের। শত ব্যস্ততার মাঝেও মানুষ অজানাকে জানতে, অদেখাকে দেখতে চাই। তাই ব্যস্ততাকে ক্ষণিকের তরে ছুটি দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা সাদামাটির পাহাড়ে। বিচিত্র আবহাওয়া, সোমেশ্বরী নদী তীরের কাঁশবন আর দূর আকাশে গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্ন প্রতিকৃতি দূর করে দিবে আপনা ক্লান্তি।

নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম বিজয়পুর। এখানে রয়েছে বিজিবির  একটি সীমান্তফাঁড়ি। সাদামাটি এলাকায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির বসবাস। পাশেই রয়েছে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত।

এই অঞ্চলের প্রায় সব গ্রামেই সাদা মাটি পাওয়া গেলেও বিজয়পুর বেশি জনপ্রিয় তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য। সাদামাটি প্রতিনিয়ত আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। সাদামাটির পাহাড় ঐ অঞ্চলের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম।

সাদামাটি বাংলাদেশের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে চলছে।  চীনে সর্বপ্রথম এই মাটির ব্যবহার শুরু হয়েছিল বলে অনেকে সাদামাটিকে চীনা মাটিও বলে থাকে। এ মাটি বিজয়পুর অঞ্চল থেকে উত্তোলন হয় বলে একে বিজয়পুর কে বা বিজয়পুর সাদামাটি বলা হয়। সাদা বা চীনামাটি হচ্ছে  কেওলিন কর্দম মণিক দ্বারা গঠিত উন্নতমানের  কর্দম; প্রধানত সিরামিক শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে গৃহস্থালি সামগ্রী তৈরীতে সাদামাটির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

এখানে সাদামাটির পাহাড়ের বুক চিরে জেগে উঠেছে নীলচে সবুজ রংয়ের হ্রদ। সাদা মাটি পানির রংটাকে যেন আরও গাঢ় করে তুলেছে। পাহাড়ের নানা রংয়ের মাটি, নীল পানির হ্রদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকেই কাছে টানবে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নিলাভ বিভিন্ন রংয়ের মাটি নিয়ে গড়া পাহাড় চোখকে জুড়িয়ে দেয়।

অনেক উঁচু উঁচু টারশিয়ারী পাহাড়ে সমৃদ্ধ বিজয়পুর। পাহাড়ের পাদদেশে বিভিন্ন রহস্যময় গুহাও চোখে পড়ে। সীমান্তফাঁড়ির পাশেই রয়েছে পাহাড়ে ওঠার ব্যবস্থা। এখান থেকে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সোমেশ্বরী নদীর সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়।

বাংলাদেশের যে কয়টি স্থানে সাদা বা চীনা মাটি পাওয়া যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে বিজয়পুরে। ছোট বড় টিলা-পাহাড় ও সমতল ভূমি জুড়ে প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রস্থ এই খনিজ অঞ্চল। অধিকাংশ সাদামাটির টিলা ১৫ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত উচু। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী,  ১৯৫৭ সালের হিসাব অনুযায়ী এই অঞ্চলে ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন সাদামাটি মজুদ রয়েছে, যা বাংলাদেশের তিনশত বৎসরের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

১৯৫৭ সাল থেকে এই মাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। তারপর থেকে বেশ কয়েকটি কোম্পানি এখান থেকে মাটি উত্তোলনের অনুমতি পায়। বর্তমানে এখান থেকে ৯টি কোম্পানী সাদামাটি উত্তোলন করছে। এছাড়া প্রতিনিয়তই প্রায়  কয়েকশ  শ্রমিক এই মাটি উত্তোলন কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।

সাদামাটির পাহাড় ও এর আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটক আসে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে একটি মনোরম পর্যটন কেন্দ্র।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে বাসযোগে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়া যায়। অথবা ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ ভায়া শ্যামগঞ্জ, দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে দুর্গাপুর। অথবা ট্রেনযোগে ময়মনসিংহ, সেখান থেকে বাসে দুর্গাপুর। দুর্গাপুর বাজার থেকে রিক্সা বা মোটর বাইক যোগে বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্চলে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে দূরত্ব আনুমানিক ১৮০ কিলোমিটার। বিজয়পুর পৌছাতে ভাড়া বাবদ লাগতে পারে ৬০০ টাকা।

থাকার ব্যবস্থা: থাকার জন্য় রয়েছে কয়েকটি আবাসিক হোটেল।  তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- এম সি এ রেস্টহাউজ,বিরিসিরি, দুর্গাপুর(০১৭৪৩৩০৬২৩০); ওয়াইডাব্লিওসি, বিরিসিরি, দুর্গাপুর(০১৭২১৩৯৪৩২০); স্বর্ণা গেস্টহাউজ,বিরিসিরি, দুর্গাপুর(০১৭১২২৮৪৬৯৮); সুসং রেসিডেন্ট হোটেল,দুর্গাপুর, (০১৯১৪৭৯১২৫৪); হোটেল মদিনা, দুর্গাপুর( ০১৯২৪১৮১৪৫৫)। ভাড়া রাতপ্রতি গড়পড়তা ৫০০ টাকা লাগতে পারে।

খাবার সুবিধা: দুর্গাপুরে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশকিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘রশিদ-হাসারাঙ্গা’ না থাকায় স্বস্তিতে বাংলাদেশ Oct 18, 2025
img
অঙ্কনের সামর্থ্যে আস্থা রাখছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্স! Oct 18, 2025
img
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে অমুসলিমরা সবচেয়ে ভালো থাকবে: রফিকুল ইসলাম খান Oct 18, 2025
img
সেনা হেফাজতে থাকা তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার নিয়ে ভিন্ন তথ্য! Oct 18, 2025
img
হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরলেন খালেদা জিয়া Oct 18, 2025
img
ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি’তে তুরস্কের অবদান রয়ে: জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী Oct 18, 2025
img
চীনে দুর্নীতির অভিযোগে সেনাবাহিনীর ৯ শীর্ষ জেনারেলকে বরখাস্ত Oct 18, 2025
img
প্রতিহিংসার রাজনীতি নয়, প্রতিযোগিতার রাজনীতি করুন: জুয়েল Oct 17, 2025
img
শেষ মুহূর্তে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে কারো না আসাটা ডিস্টার্বের অংশ: মির্জা আব্বাস Oct 17, 2025
img
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায় খাদ্য মজুতের ঘোষণা সুইডেনের Oct 17, 2025
img
শাকসু নির্বাচনের দাবিতে রঙ তুলিতে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের Oct 17, 2025
img
আগামীকাল রিয়া মনিকে তালাকের পর দুধ দিয়ে গোসল করব : হিরো আলম Oct 17, 2025
img
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে জবিতে মশাল মিছিল Oct 17, 2025
বাজারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা হলে মুখ লুকাতে হয় Oct 17, 2025
img
মার্টিন ওডেগোর ছিটকে যাওয়ায় আর্সেনাল শিবিরে বড় ধাক্কা Oct 17, 2025
img
মরক্কোয় জেন-জি বিক্ষোভে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীকে কারাদণ্ড Oct 17, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের সেইফটি নিয়ে চিন্তিত: সারজিস Oct 17, 2025
img
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ল Oct 17, 2025
img
গাজায় ৩ মাসের খাদ্য মজুত আছে : ডব্লিউএফপি Oct 17, 2025
img
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে অভ্যুত্থানে সঙ্গে বেঈমানি হবে : তাহের Oct 17, 2025