নিখোঁজের ৩৩ বছর পর হঠাৎ পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন পরশুরামের মোবারক হোসেন (৮৫)। দীর্ঘ সময় নিখোঁজ থাকার পর প্রিয়জনকে ফিরে পেয়ে তার স্বজনদের মধ্যে আনন্দ, আবেগ ও খুশির কান্না ছড়িয়ে পড়েছে।
১৯৯২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর মোবারক হোসেন নিখোঁজ হন। তিনি পরশুরাম পৌরসভার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের আলী আহমদের বড় ছেলে।
পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা গেছে, বন্যার পর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেননি। এরপর থেকে ৩৩ বছর ধরে তাকে খুঁজেছেন স্বজনরা, কিন্তু কোনো হদিস পাননি।
দীর্ঘদিন কোনো সন্ধান না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা কাগজপত্র ও সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা মেটাতে মোবারকের নামে মৃত্যু সনদ তৈরি করেছিলেন।
কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রাজবাড়ী এলাকায় এক এনজিও কর্মীর মাধ্যমে তার খোঁজ মেলে।
ওই কর্মী পূর্বে পরশুরাম উপজেলায় এনজিওতে চাকরি করতেন এবং মোবারকের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তিনি মোবারকের সঙ্গে দেখা করে তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পরশুরামের এক ব্যবসায়ী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরিবার তাকে ময়মনসিংহ থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
মোবারকের বড় মেয়ে মঞ্জু আক্তার বলেন, ‘বাবা নিখোঁজ হওয়ার দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে বলেছিলেন, ওসি বাহার ভাই বদলি হচ্ছেন, তার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
এরপর আর তার খোঁজ পাইনি। তখন আমার বয়স ১৭। আজ বাবাকে ফিরে পেয়ে মনে হচ্ছে, আল্লাহ চাইলে সব কিছুই সম্ভব।’
পরিবার সূত্র জানায়, মোবারকের দুই সংসার রয়েছে। প্রথম স্ত্রী আঁখি আক্তারের সঙ্গে পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে, দ্বিতীয় স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের সঙ্গে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে।
পরে ময়মনসিংহে তৃতীয় বিয়ে করেন, যেখানে কোনো সন্তান নেই। বয়সজনিত কারণে মোবারক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত; বর্তমানে তার চিকিৎসা চলছে।
বড় ছেলে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাবাকে খুঁজতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করেছি। ভাবতাম বাবা নেই। এখন ফিরে পেয়েছি, এটা আল্লাহর রহমত। শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, চিকিৎসা চলছে। আমরা এমনকি তার মৃত্যু সনদও তৈরি করেছিলাম।’
মোবারকের ফিরে আসার খবরে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নুর ইসলাম (৭৮) বলেন, ‘আমার ও মোবারকের বয়স প্রায় কাছাকাছি। একসাথে বড় হয়েছি। আমরা ভাবতাম তিনি মারা গেছেন। তাকে ফিরে পেয়ে পুরনো সব স্মৃতি মনে পড়ছে। জীবনের শেষ প্রান্তে হলেও পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন, এটাই বড় সৌভাগ্য। রাখে আল্লাহ, মারে কে।’
টিকে/