প্রেস সচিব শফিকুল আলম

অন্তর্বর্তী সরকার কয়েক দশকের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকার

অন্তর্বর্তী সরকার গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি বলে দৃঢ়ভাবে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে তার ভেরিফাইড ফেসবুকে প্রোফাইলে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা লিখেন।
শফিকুল আলম লিখেন, অন্তর্বর্তী সরকার : নামেই শুধু সরকার, আসলে এক প্রকার এনজিও-গ্রাম!! অনেকের দৃষ্টিতে এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল প্রশাসন— এতটাই দুর্বল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত এর সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি করতে আগ্রহী হয়নি!!

‘এর নেতারা প্রায়ই ভীত বা অদক্ষ বলে মনে হয়— রাস্তাঘাটে নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন এমন এক সময়ে, যখন ৫০০ দিনে ১ হাজার ৭০০টির বেশি বিক্ষোভ হয়েছে!! তারা যেন নতুন ও অদক্ষ, আইন পাস করতেও হিমশিম খাচ্ছেন, প্রয়োগ তো দূরের কথা!! অন্তর্বর্তী সরকার বারবার তুলনামূলক ছোট বা অখ্যাত গোষ্ঠীর চাপের সামনে নতি স্বীকার করেছে!!’

‘গত ১৫ মাসে, এই সরকারকে অক্রিয়তা ও অযোগ্যতার অভিযোগে ঘিরে ফেলা হয়েছে। অনেকেই এটিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, এটি এক “কিছু না করা, মাখন-খাওয়া দল”—যারা কাকতালীয়ভাবে ক্ষমতায় এসেছে, কিছুই করতে পারেনি, আর এখন অপমানজনক নিরাপদ প্রস্থানের পথ খুঁজছে!!!’

‘তবুও, পেছনে তাকিয়ে আমি দৃঢ়ভাবে বলি— এটি গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ সরকারগুলোর একটি। তারা তাদের প্রায় সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে।’

এই সরকারের অর্জনগুলোর কথা তুলে ধরে তিনি লিখেন—
# শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক হামলা থামানো হয়েছে।
# মার্কিন শুল্ক চুক্তি কোনো লবিং ফার্ম ভাড়া না করেই সম্পন্ন হয়েছে।
# মাত্র ১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে, যার মধ্যে বিস্তৃত শ্রম সংস্কার আইনও অন্তর্ভুক্ত।
# জুলাই ঘোষণা (July Declaration) একটি ঐতিহাসিক নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, এবং জুলাই চার্টার (July Charter) এমন এক রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তুলেছে যা আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিকে পুনর্গঠন করতে পারে।
# সুপ্রিম কোর্ট নিম্ন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, ফলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জামিন বা মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা অনেক কঠিন হবে।
# বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ বন্দর অপারেটর লালদিয়া টার্মিনাল চুক্তি স্বাক্ষর করেছে—যা বাংলাদেশের শিল্প রূপান্তরের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বিনিয়োগ।
# নতুন পররাষ্ট্রনীতি কাঠামো বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে নিয়ে এসেছে।
# অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে ও পুনরায় প্রবৃদ্ধির পথে ফিরেছে।
# ব্যাংকিং খাতের লুটপাট রোধ করা হয়েছে, টাকা স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে — খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে নেমে ৭ শতাংশে।
# আদালতের কার্যক্রম অনুযায়ী, অতীতের নিপীড়নের জন্য জবাবদিহিতা শুরু হয়েছে, এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বোধের আবির্ভাব ঘটেছে। শেখ হাসিনাকে তার অবস্থান দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে!!
# গুম বন্ধ হয়েছে, একসময় জাতীয় জীবনে আধিপত্যকারী বিএএল চরমপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে, এবং একটি সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ এসেছে — পূর্ববর্তী নির্যাতনের ওপর নির্মিত জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্রগুলো এর প্রমাণ। এটি এক ফারুকি-ইফেক্ট!!
# র‍্যাব এখন আইনের অধীনে পরিচালিত হয়, আর কোনো অনানুষ্ঠানিক মতবাদে নয়; গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ভিন্নমতাবলম্বীদের হয়রানি থেকে সরে এসেছে।
# গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ১৬ মাসে একটিও সাজানো “ক্রসফায়ার” ঘটনার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। আমি আরও বলতে পারতাম।
তিনি আরও লিখেন, আমাদের ইতিহাসের এক আগ্রহী পাঠক হিসেবে আমার বিশ্বাস বাংলাদেশের ইতিহাসে এত অল্প সময়ে কোনো সরকার এত কিছু অর্জন করতে পারেনি, যতটা অন্তর্বর্তী সরকার (আইজি) এই পনেরো মাসে করেছে।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অখন্ড ২-এ আসছে সিজনের বড় মাস অ্যান্থেম Nov 18, 2025
img
বাজার নিয়ন্ত্রণে রোজার আগেই চাল ও গম আমদানি: অর্থ উপদেষ্টা Nov 18, 2025
img
শিক্ষকের শূন্যপদের চাহিদা চেয়ে এনটিআরসিএর বিজ্ঞপ্তি Nov 18, 2025
img
আনসার বাহিনীর জন্য কেনা হবে ১৭ হাজার শটগান : অর্থ উপদেষ্টা Nov 18, 2025
img
জকসু নির্বাচনের জন্য প্যানেল ঘোষণা শিবিরের Nov 18, 2025
img
ভারত এখন উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় অস্থির : মোদি Nov 18, 2025
img
হারল্যান ছেড়েছেন আগেই, নতুন বিজ্ঞাপনে শাকিব খান Nov 18, 2025
img
বিশ্বকাপে জায়গা নিশ্চিতে নেইমারকে ছয় মাস সময় ও চার শর্ত আনচেলত্তির Nov 18, 2025
img
জাপানে যাওয়ার প্রায় ৫ লাখ ফ্লাইট বাতিল করল চীন Nov 18, 2025
img
৫ ব্যাংক একীভূত করার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট Nov 18, 2025
img
৭৯ বাংলাদেশি জেলে সহ ৩ নৌকা জব্দ করে নিয়ে গেছে ভারতের কোস্ট গার্ড Nov 18, 2025
img
সুষ্মিাতা সেনের গল্প: ভয়কে জয় করে আবারো সেটে ফিরে আসা Nov 18, 2025
img
১১ দফা দাবিতে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে শ্রমিকদের বিক্ষোভ Nov 18, 2025
img
ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরে ১২ দফা নাগরিক ইশতেহার প্রকাশ নাগরিক সমাজের Nov 18, 2025
img

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি না তা নিয়ে উদ্বেগ আছে Nov 18, 2025
ইসলামে জুলুমকারীর শাস্তি | ইসলামিক জ্ঞান Nov 18, 2025
দেয়াল তুলে পথ বন্ধ—বাসিন্দাদের অভিযোগ ‘গায়ের জোরে দখল’ Nov 18, 2025
শেখ হাসিনার রায়কে নিয়ে যা বলছেন ছাত্র জনতা! Nov 18, 2025
img
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে তেজস্বী-করণ জুটি Nov 18, 2025
img
টলিউডে কাস্টিং কাউচের কঠিন অভিজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পায়েল Nov 18, 2025