চব্বিশের গণহত্যাকারীদের মতো একাত্তরের গণহত্যাকারীদেরও বিচার চেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। আজ সোমবার রাতে রাজধানীর শাহবাগে আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
নাসীরুদ্দীন জানান, নির্বাচনের আগে নতুন জোট আসবে। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন একটা জোট দেখতে পাবেন। এই জোট হবে নারীদের পক্ষে, আলেম ওলামার পক্ষে, বাংলাদেশের পক্ষে।’
নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামীর দিকে ইঙ্গিত করে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘প্রশাসনকে হুমকি দিয়ে একটি দলের অধীনে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা প্রশ্ন রাখব, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে বিচার চেয়ে গণমিছিল করেছি। একাত্তর সালে কি বাংলাদেশে গণহত্যা হয় নাই? গণহত্যার জন্য তো অনেক পক্ষ দায়ী ছিল। গণহত্যার অভিশাপকে তো আপনি এড়াতে পারবেন না।’
চব্বিশের মতো একাত্তরের গণহত্যারও বিচার চান জানিয়ে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘আমরা চব্বিশের গণহত্যার জন্য যেমন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাচ্ছি। একাত্তর সালে যে সকল দল গণহত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, আমরা তাদেরও বিচার দাবি করছি। আমরা এক পাক্ষিক হতে পারব না।’
এ সময় নাসীরুদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দেখতে পাচ্ছি না। নির্বাচন কমিশন একদিকে হেলে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জাতীয় পার্টির কিছু লোক, যারা ফ্যাসিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে, তারা আবার ডাল-পালা মেলতে শুরু করেছে। আমরা শঙ্কা করছি, আগামী নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, জাতীয় পার্টির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এবং আওয়ামী লীগের যেই অর্থনৈতিক শক্তিগুলো ছিল, তারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমেই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে দ্রুততম সময়ে জাতীয় পার্টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
জাতীয় পার্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, ‘জাতীয় পার্টি হচ্ছে ভারতের একটা এক্সটেনশন (বর্ধিতাংশ), আওয়ামী লীগের একটা এক্সটেনশন। জাতীয় পার্টির বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে অবশ্যই দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। না হলে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হলে এই দায় সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’
এ সময় হাসনাত বলেন, ‘হাসিনার ফাঁসি হওয়ার পর আমরা বিবেচনা করব, আওয়ামী লীগ আসবে কি আসবে না, নির্বাচন করবে কি করবে না। ফাঁসি হওয়ার পর সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর সমালোচনা করেন। কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে হাসনাত বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক দল আছে, যারা সারা দিন গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে, কিন্তু নিজেদের দলে কোনো কাউন্সিল নাই। নিজেদের দলে কাউন্সিল কবে হইসে মনে করতে পারে না। দলীয় স্বৈরতন্ত্র রেখে জাতীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। দলে পরিবারতন্ত্র রেখে জাতীয় গণতন্ত্র কায়েম করবে, এগুলো এক ধরনের হিপোক্রেসি।’
নির্বাচনের আগে প্রশাসনে ভাগাভাগি চলছে বলে অভিযোগ করেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘ডিসি, এসপি এগুলো ভাগাভাগি চলছে এখন। মধ্যরাতে ডিসি পরিবর্তন হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা জানান, রবি ও সোমবার দুদিন ব্যাপী এনসিপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। প্রবাসী মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ কিছু সাক্ষাৎকার এখনো বাকি রয়েছে। সেগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে নেওয়া হবে।
টিজে/টিয়ে