স্মৃতিচারণায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়

‘বাড়ির দরজায় ধরমজিকে দেখে আমার গৃহ সহায়িকার মাথা ঘুরে’

‘আমাকে ভালোবেসে 'ঝাল্লি' (পাগলি) বলে ডাকতেন।’ এত বড় মাপের একজন অভিনেতা যে কত সহজ মানুষ ছিলেন, তা-ই ধরা পড়ল অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের কলমে।

মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী

কত কী যে মনে পড়ছে...

সকাল থেকে কত কথাই তো বলছি। আসলে এক কথায় মানুষটাকে বর্ণনা করা যায় না। তবে এটুকু বলতে পারি, উনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ভালো অভিনেতা তো বটেই, তার চেয়ে অনেক বড় মাপের মানুষ ছিলেন ধরমজি। ভীষণ স্ট্রাগল করে তবে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছিলেন। আমি কোনও দিন ওঁকে কাউকে নিয়ে রাজনীতি করতে দেখিনি। যেমন ভালো মানুষ, তেমন ভালো বাবাও। পর্দার বাইরের মানুষটা যে কী ভীষণ পারিবারিক ছিলেন, তা লিখে বোঝাতে পারব না।

ওই পারিবারিক কারণেই তো হঠাৎ এক দিন এসে পড়েছিলেন আমার বাড়িতে। তখন ‘ঘায়েল’ ছবির শুটিং শুরু হবে। ধরমজি ছেলে সানির জন্য সুপারিশ করতে স্বয়ং আমার বাড়িতে চলে এসেছিলেন। সে তো এক কাণ্ড! দুপুরবেলা বাড়ির দরজায় অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে দেখে আমার গৃহ সহায়িকা তো প্রায় অজ্ঞান হওয়ার জোগাড়। কারণ, ওরা কেউই আমার বাড়িতে এমন সব স্টারের আসা-যাওয়া দেখেনি। আমি এত বছর মুম্বইয়ে কাজ করেছি, কোনওদিন পার্টিতেও ডাকিনি কাউকে। কাজ করেছি, বাড়ি এসেছি। কাজের বাইরে আমি কারও সঙ্গেই এমন সম্পর্ক তৈরি করিনি। কিন্তু আমার শ্বশুরের সঙ্গে ধরমজির এত ভালো সম্পর্ক ছিল যে, উনি নিজে এসেছিলেন ওই ছবির জন্য আমাকে রাজি করাতে।

‘ঘায়েল’ ছবিটি ওঁরই প্রোডাকশন হাউজ়ের। ওই ছবিতে আমাকে অভিনয় করতে হবে। প্রথমে আমিই নাকচ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা! স্নেহের 'ঝাল্লি'কে (পাঞ্জাবি ভাষায় পাগলি) রাজি করাতে সোজা ছুটে এসেছেন বাড়িতে। আমার শ্বশুরমশাই, বরকে ধরে রীতিমতো বায়না শুরু করেছিলেন। শেষমেশ আমাকে রাজি করিয়ে তবে বাড়ি ফিরেছিলেন। এত সহজ মানুষ যে কী বলব। আর ওঁর সেন্স অফ হিউমর! বাপরে! সেটে হাসতে হাসতে মরে যেতাম।

শর্মিলাদি, লিলিদির সঙ্গে অনেক বেশি কাজ করেছেন ধরমজি। সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবীও রয়েছেন তালিকায়। সেই জায়গায় আমার সঙ্গে সর্বসাকুল্যে পাঁচটি ছবি। প্রথম ছবি ‘ফন্দেবাজ়’ (১৯৭৮)। আর শেষ ছবি 'শেহজ়াদে' (১৯৮৯)। যে হেতু ধরমজি আমার শ্বশুরের বন্ধু, তাই আমি ওঁর স্নেহের পাত্রী ছিলাম। আমাকে ভালোবেসে 'ঝাল্লি' (পাগলি) বলে ডাকতেন। সেটে ছোট-বড় সকলের সঙ্গে একই রকম ব্যবহার করতেন। এত বড় একজন অভিনেতা অথচ এতটুকু অহংকার নেই। অভিনেতা তো অনেকেই আছেন, কিন্তু এমন মানুষ আজকাল আর কোথায় পাবেন?

পিএ/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

পদত্যাগী বিচারকের মুখে মিস ইউনিভার্স বিতর্ক তুঙ্গে Nov 25, 2025
‘অ্যানিমেল’ সাফল্যের পর তৃপ্তি দিমরির নতুন চ্যালেঞ্জ Nov 25, 2025
সালাহকে বেঞ্চে বসানোর পরামর্শ রুনির Nov 25, 2025
img
‘এ’ ক্যাটাগরিতে স্থান পেল ৮১ সরকারি কলেজ Nov 25, 2025
img
শরীয়তপুরে নিরাপদ খাদ্য আইনে মামলা, দুই ব্যবসায়ীকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা Nov 25, 2025
img
অ্যামাজন প্রাইমে রাজের ‘ওমর’ Nov 25, 2025
img
১৮ পদে বেতন কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের Nov 25, 2025
img
ক্লান্তিকে সাফল্যের মানদণ্ড মনে করা ভুল: প্রিয়াঙ্কা Nov 25, 2025
img
জীবনের আসল শিক্ষক ব্যর্থতা Nov 25, 2025
img
জামায়াত নেতার বক্তব্যে প্রমাণিত তারা নির্বাচনী ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত : প্রিন্স Nov 25, 2025
img
দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে : সাকি Nov 25, 2025
img
নিজের কবর নিজে খুঁড়েছি : শেফালি শাহ Nov 25, 2025
img
তবে কি ঢাকায় আসছেন সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম? Nov 25, 2025
img
ব্যাটিং বিপর্যয় ভারতের, ক্ষুব্ধ কুম্বলে Nov 25, 2025
img

স্মৃতিচারণায় মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়

‘বাড়ির দরজায় ধরমজিকে দেখে আমার গৃহ সহায়িকার মাথা ঘুরে’ Nov 25, 2025
img
মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের আহ্বায়ক ইশরাক, সদস্য সচিব নান্নু Nov 25, 2025
img
দেশকে নতুন রাজনৈতিক সংস্কার উপহার দেবে এনসিপি : হাসনাত Nov 25, 2025
img
ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে পর্তুগাল Nov 25, 2025
img
দেশের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ আটকে দিচ্ছে অনির্বাচিত সরকার : তারেক রহমান Nov 25, 2025
img
ভূমিকম্প ঝুঁকি এড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জরুরি নির্দেশনা মাউশির Nov 25, 2025