বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, চট্টগ্রামে জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে জড়িত। তাদের কথাবার্তা ও হুমকিমূলক অবস্থান ইঙ্গিত দিচ্ছে- প্রশাসনকে কব্জা করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ‘আওয়ামী মার্কা’ নির্বাচন এখন তাদের মূল এজেন্ডা।
তিনি সোমবার (২৪ নভেম্বর) দিনব্যাপী ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার বাঘবেড় ইউনিয়নের মুন্সিরহাট, গোয়াতলা ইউনিয়নের জিরাখালী এবং পুরাকান্দুলিয়া ইউনিয়নের টেঘুরিয়া বাজারে গণসংযোগ ও তিনটি পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন।
শহীদ পরিবারের যোগদান
এর আগে সকালে ধোবাউড়া উপজেলার বিগত গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যরা এমরান সালেহ প্রিন্সের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন।
যোগদানকারীরা হচ্ছেন- ২০২৪-এর ২৪ জুলাই ঢাকায় মহাখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ঘোষগাঁও ইউনিয়নের জরীপাপাড়া নিবাসী শহীদ শাহজাহানের মা সাজেদা বেগম, ৫ আগস্ট ঢাকার বাড্ডায় পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ সোহেল মিয়ার বাবা আবদুল হাকিম, ঢাকার আজমপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ মাজেদুল ইসলামের বাবা আবদুল মান্নান, ভাই জালাল উদ্দিন, ঢাকার সাভারে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ মওলানা সাদেকুর রহমানের ভাই হাফেজ মওলানা সাদ্দম হোসেন। তারা বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণপূর্বক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে আনুষ্ঠনিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব তাদের হাতে দলের প্রাথমিক সদস্য পদের স্বীকৃতিপত্র তুলে দেন। উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেন।
‘ধর্মকে অপব্যবহার করে ক্ষমতায় ফিরতে চায় জামায়াত’
পথসভাগুলোতে এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘চট্টগ্রামের ওই জামায়াত নেতা আল্লাহর নাম ব্যবহার করে জামায়াতকে ক্ষমতায় নেওয়ার কথা বলেছেন। এটা প্রমাণ করে-নিজেদের অপকর্ম ও অপরাজনীতি জায়েজ করতে তারা আল্লাহর নাম, ইসলামকে অপব্যবহার করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে উন্নয়ন-সমৃদ্ধির পতাকা ওড়ানো হবে’
প্রিন্স বলেন, ‘নির্বাচনে জনগণের ভোটে বিজয়ী হয়ে বিএনপি তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের ধ্বংসস্তুপের ওপর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পতাকা ওড়াবে।
কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তারেক রহমান ইতিমধ্যে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছেন।’
তিনি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন ‘শহীদ জিয়া যেমন তলাবিহীন ঝুড়ি খ্যাত বাংলাদেশকে স্বনির্ভরতার মহাসড়কে তুলেছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া যেমন স্বৈরাচারের ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ‘ইমার্জিং টাইগার’-এ পরিণত করেছিলেন-তেমনি নির্বাচনে বিজয়ের পর তারেক রহমান অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন রাষ্ট্রকাঠামোয় দেশকে সাম্য, মানবিকতা, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নতুন গন্তব্যে নিয়ে যাবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারেক রহমানের হাত ধরেই চির-অবহেলিত ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটকে আলোকিত, আধুনিক ও উন্নত জনপদে পরিণত করব। ঘরে ঘরে শিক্ষা, ধর্ম, সম্প্রীতি ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দেব।’
‘এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিলাম, আমার দায়িত্ব আপনাদের দিলাম’
প্রিন্স বলেন, ‘এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে তুলে নিলাম।
আমার দায়িত্ব আপনাদের হাতে দিলাম। আপনাদের দায়িত্ব-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দেওয়া। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ হবে ঐক্যের প্রতীক, বাংলাদেশের পক্ষের প্রতীক। এবারের নির্বাচনে স্লোগান হবে দলমত ধর্ম বর্ণ যার যার, দেশের স্বার্থে ধানের শীষ সবার।’
প্রিন্স বলেন, জনগণের রায়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তিনি ঘোষণা করেন- প্রত্যেক প্রান্তিক কৃষককে ফার্মার্স কার্ড প্রদান করা হবে, যার আওতায় দুটি মৌসুমে উৎপাদিত ফসলের মধ্যে একটি ফসলের পূর্ণ মূল্য সরকার সরাসরি প্রদান করবে।
প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে যাতে কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমে। বাজার ব্যবস্থাকে সহজ করতে প্রতিটি গ্রামীণ বাজারে সরকারি খাদ্যপণ্য বিক্রয় কেন্দ্র চালু করা হবে। দেশের সকল পরিবারে গৃহকর্ত্রীদের নামে ফ্যামিলি কার্ড প্রদান করা হবে, যার মাধ্যমে প্রতিটি পরিবার প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের একটি অংশ সরকারি সহায়তা হিসেবে পাবে।
তিনি বলেন, শিক্ষিত যুবকদের হতাশা দূর করতে বেকার ভাতা প্রদান এবং সরকার গঠনের ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে।
স্বাস্থ্য সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা-চিকিৎসার অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হবে না’-এই নীতির ভিত্তিতে বয়স্ক নাগরিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হবে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি, নারীদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান এবং শিশুদের মানবিক ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রিন্স বলেন, আগামী দিনের বিএনপি সরকার হবে মানুষের অধিকার, উন্নয়ন, মানবিকতা ও কল্যাণের সরকার।
পিএ/টিএ