প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৮টি পদে বেতনক্রম ও গ্রেড পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক অসামঞ্জস্যতা ও দায়িত্ব-পদমর্যাদার সঙ্গে বেতন কাঠামোর অমিল দূর করতে এ প্রস্তাব প্রয়োজনীয় নথি-উপাত্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামানের সই করা এ প্রস্তাব পাঠানো হয়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে দেওয়া এ চিঠিতে ১৮টি পদে গ্রেড দেওয়া এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের (ডিপিইও) পদটিকে পঞ্চম গ্রেডে (৪৩০০০-৬৯৮৫০ টাকা) উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, এটি আগে ষষ্ঠ গ্রেডে (৩৫৫০০-৬৭০১০ টাকা) ছিল। বর্তমানে ষষ্ঠ গ্রেডে থাকা পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট পদটিকেও একইভাবে পঞ্চম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে অধিদপ্তর।
এ ছাড়া সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার (এডিপিইও) পদটি বর্তমানে নবম গ্রেডে (২২০০০-৫৩০৬০ টাকা) রয়েছে। এক লাফে এ পদটিকে ষষ্ঠ গ্রেডে (৩৫৫০০-৬৭০১০ টাকা) উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে অধিদপ্তর।
একইভাবে নবম গ্রেডে থাকা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা ও থানা শিক্ষা অফিসার (টিইও), গবেষণা অফিসার, পিটিআইয়ের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট, ইন্সট্রাক্টর (ইউপিইটিসি) ও ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) পদটিকেও একবারে তিন গ্রেড এগিয়ে এনে ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়। আর সপ্তম গ্রেডে থাকা প্রোকিউরমেন্ট অ্যান্ড সাপ্লাই অফিসারের পদটিকেও ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়।
দশম গ্রেডে (১৬০০০-৩৮৬৪০ টাকা) থাকা সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসার (এটিইও) পদটিকে নবম গ্রেডে (২২০০০-৫৩০৬০ টাকা) উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একইভাবে দশম গ্রেডে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার, সহকারী মনিটরিং অফিসার, সহকারী গবেষণা অফিসার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, সহকারী ইন্সট্রাক্টর (ইউপিটিইসি), সহকারী ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) পদগুলো নবম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়।
অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পদটি বর্তমানে তৃতীয় গ্রেডে (৫৬৫০০-৭৪৪০০) রয়েছে। পদটিকে এক ধাপ এগিয়ে গ্রেড-২ (৬৬০০০-৭৬৪৯০) করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বেতন গ্রেড উন্নীত করার প্রস্তাবে কারণও চিঠিতে উল্লেখ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আদালতের নির্দেশনা ও জনপ্রশাসন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতনস্কেল ১১-১২তম থেকে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এ কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন প্রধান শিক্ষকের নিয়ন্ত্রণকারী উপজেলা অথবা থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও সমপর্যায়ের পদের বেতনস্কেল একই গ্রেডে উপনীত হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মূলত উপজেলা বা থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা প্রাথমিক শিক্ষার মাঠপর্যায়ের মূল মনিটরিং কর্মকর্তা। কিন্তু প্রধান শিক্ষকদের পাশাপাশি তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তাদের বেতনস্কেল উন্নীত না হওয়ায় প্রশাসনিক ঊর্ধ্বক্রম অনুসরণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে উপজেলা বা থানা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক পদটির বেতনস্কেল দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে উন্নীত করার আবেদন করেছেন। সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের মধ্যেও এ নিয়ে নতুনভাবে চাহিদা বা বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।
প্রস্তাবে অধিদপ্তর আরও উল্লেখ করেছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পদসমূহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের ন্যায় একটি অনুক্রম বা ঊর্ধ্বক্রম ধারায় বিন্যস্ত। সাংগঠনিক কাঠামো বিবেচনায় এ ধারা অনুসরণ করেই সামগ্রিক ব্যবস্থা চলমান ছিল। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে প্রধান শিক্ষক পদের স্কেল উন্নয়নের ফলে সমগ্র সাংগঠনিক কাঠামোতে এর প্রভাব পড়েছে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পদ সৃজনে বেতন গ্রেডের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পদসমূহের অনুক্রম বা ঊর্ধ্বক্রম ধারার সুষ্ঠু বিন্যাস বজায় রাখার স্বার্থে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে কতিপয় পদের গ্রেড বা বেতনস্কেল উন্নয়ন করা প্রয়োজন বলেও জানানো হয়েছে।
টিজে/টিয়ে