সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি লক্ষ্য। বছরের পর বছর অবাস্তব রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ। ফলে বড় রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর পার। চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্য চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।
এতে হিমশিম খাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রথম চার মাসেই রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এবার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যের দুরবস্থা, মানুষের আয়ে টান এবং নির্বাচন সামনে রেখে রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এর আগে প্রতিবছরই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পর সেখান থেকে আরেকটু কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতো। সেই লক্ষ্যও পূরণ করতে পারত না এনবিআর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে চার লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছিল।
অর্থবছর শেষে আদায় হয়েছিল তিন লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে ঘাটতি ছিল ৯২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজস্ব আদায় চিত্রের পুরোপুরি উল্টো। অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় আদায় হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে ঘাটতি ১৭ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, অর্থবছরের বাকি আট মাসে আদায় করতে হবে চার লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ কোটি টাকা; যদিও মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।
আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে শুল্ক-কর আদায়ের লক্ষ্য ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বাড়ানো হয়েছে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আয়কর খাতে লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। বাড়িয়ে করা হয়েছে দুই লাখ চার হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান দেশের এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অর্থ বিভাগ সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়েছে। সরকারের বাজেট ঘাটতি কমানোই এর মূল উদ্দেশ্য হতে পারে।’ নতুন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব কি না, এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন লক্ষ্যমাত্রা আদায় অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে।’
এনবিআরের সাবেক সদস্য ফরিদ দেশের এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব। আদায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ২০১৬ সাল থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। গোঁজামিল দিয়ে চলছে। সংস্কার না করলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে না। কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। সামগ্রিকভাবে অটোমেশন করতে হবে।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ দেশের এক গণমাধ্যমকে বলেন , ‘আগের লক্ষ্যমাত্রাই ছিল উচ্চাভিলাষী। এমনিতেই ঘাটতি আছে, সেই অবস্থায় আপনি লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়িয়ে দিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ভিত্তিতেও এটার যুক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’
এবি/টিকে