বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, গত প্রায় দেড় দশক ধরে তাকে ঘরছাড়া অবস্থায় থাকতে হয়েছে, তবুও তিনি দেশ ছেড়ে যাননি।
তিনি অভিযোগ করেন, তার ওপর নির্যাতনের ‘স্টিম রোলার’ চালানো হয়েছে, অথচ যারা একসময় ‘পালাই না’ বলেছিল, তাদের এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় বক্তৃতাকালে তিনি এই মন্তব্য করেন।
দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন শোষক ও শোষিত, এই দুই ধরনের মানুষের বিভেদ আর দেখতে চায় না।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘৭০-এর ইলেকশনে আমরাই বলেছিলাম ভোট দেন নৌকায়, রাতে দরজা খুলে ঘুমাতে পারবেন।’ কিন্তু আজও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শুধু সৎ চরিত্রের নেতৃত্বের অভাবে বাংলাদেশকে আজ পর্যন্ত ‘বাগানের মতো সুন্দর’ করা যায়নি। নিজের ওপর নেমে আসা রাজনৈতিক নিপীড়নের বর্ণনা দিতে গিয়ে জামায়াত আমির জানান, গত সাড়ে ১৫ বছর তাকে কোনো বাড়িতে এক রাত, কোনো বাড়িতে দুই রাত, এভাবে লুকিয়ে কাটাতে হয়েছে। তার ভাষায়: ‘গত দেড় দশক পুরো দেশই মজলুম ছিল।’
২০১৮ সালের নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিরপুরে নির্বাচন করলেও একটা দিনের জন্য আমাকে জনগণের কাছে ভোট চাইতে দেয়া হয়নি। আমাদের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হলেও আমরা দেশ ছেড়ে পালাইনি।’
ডা. শফিকুর রহমান বিশ্বাস করেন, সামনের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ দুর্নীতি, সন্ত্রাস, এবং অবিচারের বিরুদ্ধে রায় দেবে। ক্ষমতায় গেলে জামায়াত শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে জামায়াত প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জামায়াত আমির বলেন, বর্তমান সমাজে নারীরা পর্যাপ্ত সম্মান ও নিরাপত্তা পাচ্ছে না। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে যোগ্যতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী নারীরা কাজের সহজ সুযোগ পাবেন এবং তাদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘জামায়াত কাউকে জোর করে বোরকা পরাবে না।’
তিনি বলেন, ‘যুবকরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেও আমরা তাদেরকে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার উপহার দিতে পারিনি৷’
ভোটারদের উদ্দেশে জামায়াত আমির বলেন, ‘পুরোনো স্টাইলে নির্বাচন হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। কোনো দলের অন্ধ ভক্ত হবেন না।’
তিনি আশ্বাস দেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, জামায়াত তাদের স্বাগত জানাবে এবং জনগণ তাদের (জামায়াত) ক্ষমতায় আনলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে গড়ে তোলা হবে।
এমআর/টিএ