জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এরই মধ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেয়েছে। বর্তমানে তারা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমন অবস্থায় শিগগির গঠিত হচ্ছে এনসিপির উপদেষ্টা পরিষদ। বিভিন্ন বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে মতামত ও পরামর্শ পেতে অভিজ্ঞদের নিয়ে এ পরিষদ গঠন করা হচ্ছে। যাতে শুরুতে ১০ জন জায়গা পেতে পারেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এনসিপি। এজন্য শেষ করেছে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি। সারাদেশ থেকে প্রায় দেড় হাজার আগ্রহী ব্যক্তি তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এখন চলছে সাক্ষাৎকার নেওয়া। অন্যদিকে, সাংগঠনিকভাবে উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের খুঁজতে সার্চ কমিটি গঠনের প্রায় সাত মাস পর এ বিষয়ে দলটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে, অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে উপদেষ্টা পরিষদ সামনে আসতে পারে।
উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের কাজটি খুব সতর্কভাবে করা হচ্ছে। যারা দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ, বিতর্ক নেই এবং এনসিপির দলীয় আদর্শ ও জুলাই স্পিরিট ধারণ করবেন, এমন ব্যক্তিদের এ পরিষদে রাখা হবে।
এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপদেষ্টা পরিষদের আকার প্রাথমিকভাবে ৫১ সদস্যের হওয়ার কথা থাকলেও তারা এখন বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে এত বড় পরিষদ গঠন করতে চাইছেন না। পরিষদ গঠনের কাজটি খুব সতর্কভাবে করা হচ্ছে। যারা দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ, বিতর্ক নেই এবং এনসিপির দলীয় আদর্শ ও জুলাই স্পিরিট ধারণ করবেন, এমন ব্যক্তিদের এ পরিষদে রাখা হবে।
এনসিপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানায়, শুরুতে ১০ জনকে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে। তবে এর আকার পরে বাড়বে। দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি এ পরিষদে আসতে চাচ্ছেন, কিন্তু বিতর্ক এড়াতে তাদের বাছাইয়ের কাজটি খুবই সতর্ক এবং গোপনীয়ভাবে করছে দল। পরিষদে কারা আসতে পারেন, এমন সম্ভাব্য ব্যক্তিদের তালিকা এরই মধ্যে দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলামের কাছে দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি এসব ব্যক্তির সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলছেন।
পরিষদ দলীয় কৌশল নির্ধারণে সহায়তা, সংকটকালে দিকনির্দেশনা, সাংগঠনিক কাঠামো ও সংস্কারে মতামত এবং সততা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেবে। এ পরিষদ কার্যনির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নয়, কেবল পরামর্শ দিতে পারবে।
দলীয় সূত্রের তথ্য, উপদেষ্টা পরিষদ মূলত দলকে নীতিগত পরামর্শ দেবে। এছাড়া দলীয় কৌশল নির্ধারণে সহায়তা, সংকটকালে দিকনির্দেশনা, সাংগঠনিক কাঠামো ও সংস্কারে মতামত এবং সততা ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য পরামর্শ দেবে। এ পরিষদ কার্যনির্বাহী ক্ষমতাসম্পন্ন হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নয়, কেবল পরামর্শ দিতে পারবে। পরিষদে ১৮ থেকে ১৯টি খাতের লোক স্থান পাবেন। সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অর্থনীতিবিদ, সাংবাদিক, ভূরাজনৈতিক বিষয়ে অভিজ্ঞ- এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশে শীর্ষ পর্যায়ে রাখা হয় যেসব ব্যক্তিকে, তাদের সমন্বয়ে এটি গঠিত হবে।
প্রায় প্রস্তুত হয়ে গেছে। এখন তালিকা ধরে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ভাইভা নিচ্ছেন। আমরা প্রাথমিক বাছাই করে আহ্বায়কের কাছে পাঠিয়েছি। তিনি প্রতিদিন একজনের সঙ্গে বসছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদ সামনে আসবে।
উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য গত ১৬ মে সার্চ কমিটি গঠন করে এনসিপি। কমিটির সমন্বয়কারী হন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। সদস্যরা হলেন তাজনূভা জাবীন, সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া, ড. আতিক মুজাহিদ, অর্পিতা শ্যামা দেব, খালেদ সাইফুল্লাহ, আলাউদ্দীন মোহাম্মদ, মোশফিকুর রহমান জোহান, মীর আরশাদুল হক, মাওলানা সানাউল্লাহ খান, দিলশানা পারুল ও খান মুহাম্মদ মুরসালীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সার্চ কমিটির সদস্য ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে বাছাই করে আহ্বায়কের কাছে পাঠিয়েছি। এখন তিনি প্রতিদিন একজনের সঙ্গে বসছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদ সামনে আসবে। প্রথম ধাপে হয়তো ১০ থেকে ২০ জনের নাম আসতে পারে। এটা বাড়তে থাকবে এবং ১০০ সদস্যের মতো হবে। নির্বাচনের তফসিলের আগেই আমরা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের আশা করছি।’
ইএ/এসএন