পুরোনো দিল্লির সরু গলিপথ। ধুলোমাখা রাস্তা। ছোট ছোট কুটিরের ফাঁকে ফাঁকে ঘুরে বেড়ান এক তরুণ। তাঁর চোখে এক অদ্ভুত উদাসীনতা, হাতে একটি খাতা-শায়রি শেখার নেশায় মত্ত। তিনি খোঁজ করে চলেছেন এক প্রবীণ কবিকে, যে তাঁকে শেখাবেন জীবনের গভীর কথাগুলোকে কীভাবে ছন্দে বাঁধতে হয়। এখানেই তাঁর দেখা হয় কবির মেয়ের সঙ্গে। যাঁর চোখে চমক, হাসিতে লুকিয়ে আছে কবিতার মতো রহস্য। প্রথম দেখা, প্রথম মুগ্ধতা, চোখের এক অদৃশ্য আলাপ-এভাবেই শুরু হয় তাদের প্রেমের গল্প। এমনই এক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বলিউডের নতুন সিনেমা ‘গুস্তাখ ইশক’। বলা যায়, এটি শুধু একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি একটি সময়ের ডায়েরি; যেখানে প্রেমের ভাষা ছিল শায়রি, দেখা হতো চায়ের দোকানে, আর মন খুলে কথা হতো চিঠির মাধ্যমে। সিনেমাটি প্রযোজনা করেছেন ভারতের খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনার মনীশ মালহোত্রা। পরিচালনা করেছেন বিভু পুরি, আর সংগীতের জাদু বুনেছেন বিশাল ভরদ্বাজ, গুলজারের লেখা গানের কথায়। সিনেমার অন্যতম প্রধান তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসিরউদ্দিন শাহ, ফাতিমা সানা শেখ এবং বিজয় ভার্মা।
ফাতিমাকে সাধারণত বহু তারকাসংবলিত ছবিতে দেখা গেলেও ‘গুস্তাখ ইশক’-এ তিনিই মূল নায়িকা। এ সিনেমায় নিজের অভিনয়যাত্রা নিয়ে ফাতিমা বলেন, ‘গুস্তাখ ইশক’ একটি পুরোদস্তুর রোমান্টিক ছবি। বাস্তব জীবনের ভালোবাসার প্রসঙ্গে ফাতিমার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘আমরা বলি না ‘ফল ইন লাভ’! কারণ, প্রেমে পড়া মানেই নিয়ন্ত্রণ হারানো। যতই বলি, এমন করব না, সীমা রাখব, নিয়ম মানব, কিন্তু প্রেমে পড়লে সব ভুলে যায় মানুষ।
ভালোবাসা যদি বিষাক্ত হয়, আমরা তাতেও ডুবে যাই। কারণ, ভালোবাসা মানেই আবেগের সম্পূর্ণ সমর্পণ। আর আমি যখন ভালোবাসি, তখন মনপ্রাণ দিয়েই ভালোবাসি। এই ছবির মাধ্যমে অন্তত সেই অনুভব প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি।’’ অন্যদিকে বিজয় ভার্মাকে এত দিন ডার্ক চরিত্রে বেশি দেখা গেছে। এবার রোমান্টিক চরিত্রে ধরা দিচ্ছেন তিনি। বিজয় ভার্মা তাঁর অভিনয় অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, ‘ডার্লিংস, দহড়-এর মতো গভীর চরিত্রে কাজের পর একটু স্বস্তি দরকার ছিল। এই চিত্রনাট্য হাতে পেয়ে মনে হলো, এটি একেবারে মধুর মতো মিষ্টি। পরিচালকরা যখন অভিনেতার অচেনা দিক খুঁজে বের করেন, তখনই নতুন কিছু দেখানোর সুযোগ আসে। এই ছবিতে আছে প্রেম, কোমলতা, বাস্তবতা আর জীবনের লড়াই-সব মিলিয়ে এক হৃদয়স্পর্শী গল্প।’ এই সিনেমার মাধ্যমেই নতুন জুটি হয়ে আসছেন ফাতিমা ও বিজয়। তাদের কাজের রসায়ন নিয়ে বিজয় বলেন, ‘ফাতিমার সঙ্গে কাজ করা মানেই স্বস্তি। সোজাসাপটা, কাজপাগল, মাথা ঠান্ডা এমন একজন মানুষ। শুটিংয়ে প্রতিটা শট ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তিনি থামেন না।’
বিজয় ভার্মা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এই গল্পটি এমন এক সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন মোবাইল ফোন বা দ্রুতগতির যোগাযোগ ছিল না। অনুভূতি ধীরে ধীরে বিকশিত হতো এবং প্রতিটি মুহূর্তে প্রেমের সৌন্দর্য ছিল। তখন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় কাউকে জানাতে হতো, আর কিছুক্ষণ পর ফিরে আসতে হতো। আজকাল আমরা ডিএম বা হোয়াটসঅ্যাপে প্রপোজ করি। এই ছবিটি সেই পুরোনো ফটো অ্যালবামের মতো স্মৃতি মনে করিয়ে দেবে।’
পুরোনো দিল্লির ঐতিহ্যবাহী রং, পোশাক এবং সেট ডিজাইন সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে নজর কাড়ে। সংগীত ও লিরিক্সের মেলবন্ধন দর্শককে শায়রির মাধুর্যে বুঁদ করে, যেন দর্শকরা ভেতরে ঢুকে পড়েন পুরোনো প্রেমের আবহে। গত ২৪ নভেম্বর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব ইন্ডিয়ায় সিনেমাটির প্রিমিয়ার হয়। এরপর সিনেমাটি নিয়ে বেশ কয়েকজন সমালোচক বলেছেন, বড়পর্দায় দর্শকদের জন্য এটি এক বিশেষ রোমান্টিক অভিজ্ঞতা হতে যাচ্ছে। ‘গুস্তাখ ইশক’ শুধু নতুন সিনেমা নয়–এটি একটি অভিজ্ঞতা, একটি যাত্রা, যেখানে পুরোনো দিল্লির রোমান্স, কবিতা এবং আবেগের সঙ্গে দর্শক মিলে যায়। যারা নস্টালজিক রোমান্টিসিজম পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি দারুণ একটি চলচ্চিত্র।
আরপি/এসএন