আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনের সম্মেলনকক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে ইসির দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
এ সময় ইসি সচিব বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পালন করবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কিভাবে কাজ করবে, না করবে—সে সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই অন্যান্য বারের মতো দিকনির্দেশনা দেবে। নির্বাচন কমিশন ওভারঅল মনিটরিং এবং কো-অর্ডিনেশনটা দেখবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটা মনিটরিং সেল করব। এই মনিটরিং সেলের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একটা সংশ্লিষ্টতা, কো-অর্ডিনেশনট থাকবে। এখন সেলের সাইজ কত হবে, কতজনের প্রতিনিধি হবে, এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি।
ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের আরেকটা সাইবার সিকিউরিটি সেল থাকবে, যেখানে মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে মনিটর করা হবে। যাতে অপতথ্য সংস্কৃতি থেকে আমরা যেন মুক্ত থাকতে পারি। এখানে আমরা ইউএনডিপির প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করব। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব সক্রিয় সক্ষমতা কো-অর্ডিনেট করব।’
নির্বাচনের কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি তুলে ধরে আখতার আহমেদ বলেন, ‘কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি হবে দুটো—টপ ডাউন অ্যান্ড বটম আপ। দ্যাট ইজ শুধু ফ্লো অব ইনফরমেশন ওপর থেকে নিচে যাবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ হবে তা না। সেটার পাশাপাশি নিচ থেকে ওপরে আসবে। নিচ বলতে আমি একদম গ্রাউন্ড লেভেল পর্যন্ত বোঝাচ্ছি। যেখান থেকে আমাদের ওপরে আসবে এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়টা সেভাবে সাধন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ডেপ্লয়মেন্ট প্ল্যানে মূলত তিনটা ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। একটি হচ্ছে, কেন্দ্রভিত্তিক নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন। আরেকটি হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যাটিক বা মোবাইল চেকপোস্ট হতে পারে। মোবাইল চেকপোস্ট হলে স্থান পরিবর্তন করে একইভাবে কাজ করবে। মোবাইল কম্পোনেন্ট ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবে। কতগুলো মোবাইল কম্পোনেন্ট থাকবে এটা জিওগ্রাফিক্যাল লোকেশন, এক্সেস রোড ইত্যাদির ওপর নির্ভর করবে। আরেকটা থাকবে সেন্ট্রাল রিজার্ভ। এটা আগে থেকেই করা হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘এই হচ্ছে আমাদের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান। এর সঙ্গে আরো কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় আসছে। যেমন, কন্টিনজেন্সি প্ল্যান রাখা। যদি দুই-তিনটা জায়গায় সমস্যা হয়, তাহলে যেন বিকল্প ব্যবস্থা থাকে। টেকনোলজির ব্যবহার সর্বোত্তমভাবে করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু জায়গায় মোবাইল এক্সেস রেস্ট্রিক্টেড, এটা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। বডি ওন ক্যামেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ফ্যাসিলিটিজ নিয়ে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সহযোগিতা প্রয়োজন। যে সমস্ত আর্মস রিকভারি করা যায়নি, সেটার তৎপরতা বাড়াতে হবে। লস্ট আর্মস ও ইলিগ্যাল আর্মস উভয়ের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। সন্ত্রাসী যারা চিহ্নিত তাদের বিষয়ে আরো নজরদারি এবং প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনতে হবে। বৈধ আর্মসের ব্যবহারে সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইসি সচিব বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার ২০২৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।’
পোস্টাল ভোটের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘পোস্টাল ভোটের বিষয়ে চারটি আলোচনা হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা ভোটের দ্বৈত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এয়ারপোর্ট ও তেজগাঁও মেল সর্টিং সেন্টারের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানোর সময় নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কাউন্টিং সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, নির্বাচন কমিশনের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব বাহিনী নেই। আইন-শৃঙ্খলা-সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর আমরা নির্ভরশীল। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে— প্রথম দিন থেকেই মাঠে কাজ করবে এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।’
ইএ/টিকে