নোয়াখালীর হাতিয়ায় বিয়েবাড়িতে মাইক বাজানোর অপরাধে বেত্রাঘাতের শিকার হয়েছেন এক কনে ও তার মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই। সালিস বসিয়ে দাবি করা হয়েছে জরিমানা।
জরিমানা দিতে না পারায় পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটিও আটকে রাখা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ১৫ হাজার টাকা দিয়ে পরে রিকশাটি ছাড়িয়ে আনা হয়।
গত অক্টোবরের ২০ তারিখে হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। সালিসে ৩০ হাজার টাকা না দেওয়ায় গত ২০ নভেম্বর কনের ভাইয়ের অটোরিকশা আটকে রাখে স্থানীয় আফসার নামের এক ব্যক্তি।
কনের ভাই সাগর জানান, গত মাসের ২১ অক্টেবার তাদের বোনের বিয়ে ঠিক হয় ঢাকার এক গাড়িচালকের সঙ্গে। আগের দিন ২০ তারিখ তাদের বাড়িতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান করা হয়।
এ উপলক্ষে আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে তারা কিছু সময়ের জন্য মাইক ব্যবহার করেছিলেন। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি ওই পরিবারের কাছে এর জবাব চাইতে গেলে সেখানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন এ বিচার বসান।
কন্যার বাবা শাহজাহান জানান, আমি গরিব মানুষ। আমার মেয়ের বিয়েতে শখ করে মাইক বাজিয়েছি। এর জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন পরিবারের সবাইকে মারধর করে। তারা আবার আমাদের জন্য সালিস বসায়। সালিসদাররা আমাদের সবাইকে ১০টি করে বেত্রাঘাতের রায় দেয়।
আমি এবং পরিবারের সবাই বারবার ক্ষমা চাওয়ার পরেও তারা কর্ণপাত করেননি। সবাইকে বেত্রাঘাত করার পর তারা ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানার টাকা জোগাড় করতে না পারায় আমার ছেলের অটোরিকশা আটকে রাখেছে। সমাজে অনেকের কাছে গিয়েছি, কোনো বিচার পাইনি।
গতকাল বুধবার হাতিয়া উপজেলা শহরের স্থানীয় সাংবাদিক জিল্লুর রহমান জানান, তাকে এ ঘটনাটি গত বুধবার কনের ভাই সাগর ও ভগ্নিপতি হৃদয় জানান। জরিমানার টাকা না দেওয়ায় তাদের অটোরিকশা আফসার রেখে দেওয়ার কথা জেনে তিনি সালিসদারদের ডেকে অটোরিকশা ফিরিয়ে দিতে বলেন। পরে তারা ১৫ হাজার টাকা নিয়ে সমঝোতা করেছে বলে জেনেছেন।
সালিসে উপস্থিত থাকা আলা উদ্দিন মাঝি বলেন, মাইক বাজানোর বিষয়ে আফসার জিজ্ঞেস করার কারণে হট্টগোল বাধে। ওখানে আফছারের ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে গিয়েছে। যদিও আমরা তার সঠিক প্রমাণ পাইনি। তবু আমাদের মধ্যে একজন সালিসদার এই টাকার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৩০ হাজার টাকার রায় দিয়েছে। সালিসে মহিলাদেরকে বেত মারা হয়নি, পুরুষদের মারা হয়েছে। মহিলাদের শাসন করার জন্য ঘরের মুরব্বি হিসেবে শাহজাহানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে-তিনিই বেত মারবেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আফছার উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, তিনি জেলা শহরের সোনাপুর থেকে জেলেদের মাছ বিক্রির টাকা নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। তখন বাড়ির সামনে কনের ভাইকে দাঁড়ানো দেখে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে কনের পরিবারের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করেন। এ সময় তাঁর ৫০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা জানান, তিনি এটি ফেসবুকে দেখেছেন। তার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
হাতিয়ার সাগরিয়া ফাঁড়ির পুলিশের এসআই ফরহাদ হোসেন জানান, বিয়েতে মাইক বাজানোকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। আমি উভয়পক্ষকে বলেছি আইনি ব্যবস্থা নিতে। তারা গ্রাম্য সালিসের আয়োজন করায় আমি আর সেখানে থাকিনি। এরপরে তারা আমাকে আর কিছু জানায়নি। এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিজে/টিকে