বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ, ‘ফিডব্যাক’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও খ্যাতিমান গিটারিস্ট সেলিম হায়দার আর নেই। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে যাওয়া এ শিল্পীর প্রয়াণে দেশের সংগীতাঙ্গনে নেমে এসেছে গভীর শোক।
সেলিম হায়দারের বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। এই কিংবদন্তীকে হারিয়ে অসংখ্য শিল্পী, সহকর্মী এবং শ্রোতা আবেগঘন বার্তা দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাদের মধ্যে আছেন এই সময়ের জনপ্রিয় সংগীতপরিচালক ও ব্যান্ড ‘বেঙ্গল সিম্ফনি’র প্রতিষ্ঠাতা ইমন চৌধুরী।
শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি ফেসবুকে শেয়ার করেন সংগীতে নিজের শুরুর দিকের এক অবিস্মরণীয় স্মৃতি—যা সেলিম হায়দারের মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা, উদারতা ও শিল্পী-মানসিকতার এক অনন্য উদাহরণ।
ইমন লিখেছেন, ঢাকায় পড়াশোনার জন্য নতুন আসা সেসব দিনে তিনি প্রায়ই যেতেন সাইন্সল্যাবের মেলোডি অ্যান্ড কোং গিটার দোকানে।
দোকানের মালিক মঙ্গল আংকেল তাঁর প্রতি স্নেহশীল ছিলেন। একদিন সেখানে গিটার বাজানোর সময় আচমকাই দোকানে ঢোকেন সেলিম হায়দার। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ইমনের বাজানো মন দিয়ে শোনেন, তারপর এসে শুধু বলেন, “এই ছেলে, তোমার হাত তো ভালো। মন দিয়ে বাজালে সামনে ভালো করবা।”
তখনও তরুণ ইমন বুঝতে পারেননি, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটি দেশের ব্যান্ডসংগীত ইতিহাসের অন্যতম মহান গিটারিস্ট। মঙ্গল আংকেলের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তিনি স্তব্ধ হয়ে যান।
এরপর ঘটে জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনাটি। সেলিম হায়দার ইমনকে জিজ্ঞেস করেন—তিনি কি Al Di Meola শোনেন? ইমনের ‘না’ শুনে তিনি রাগ না করে বরং স্নেহভরে হাতে ধরে নিয়ে যান এলিফ্যান্ট রোডের বিখ্যাত রেইনবো মিউজিক স্টোরে।
সেখান থেকে নিজের টাকায় কিনে দেন এক গাদা সিডি। বলেন, “এগুলো শুনবা, বাজানোর চেষ্টা করবা। আর যোগাযোগ রাইখো।” তারপর আশীর্বাদ করে দোকান থেকে বেরিয়ে যান।
ইমন লিখেছেন, “মানুষ কতটা মহান হলে এভাবে মানুষের জন্য ভালোবাসা বিলাতে পারে। আমার গিটার বাজানোর পথচলায় সেলিম হায়দার ভাইয়ের অবদান অনেক।”
আইকে/টিএ